কাঁসা-পিতলের ঝলক আজও টিকে আছে পুরান ঢাকার অলিগলিতে

2 weeks ago 12

একসময় বিয়ের উপহার মানেই ছিল কাঁসা-পিতলের থালা, বাটি, কলসি কিংবা ঘটি। নতুন বউয়ের গায়ে হলুদের সানাই বাজলে, ঘরের প্রবীণ নারীরা যত্ন করে আলমারি খুলে বের করতেন সেই সোনালি ঝিলিকমাখা তৈজসপত্রগুলো। তখন সেগুলো শুধু ব্যবহার্য জিনিস নয়, ছিল আবেগের, ঐতিহ্যের আর ভালোবাসার প্রতীক।

কাঁসা-পিতলের ঝলক আজও টিকে আছে পুরান ঢাকার অলিগলিতে

কালের বিবর্তনে বদলে গেছে জীবনযাত্রা, বদলে গেছে মানুষের রুচি। স্টিল, মেলামাইন, কিংবা সস্তা প্লাস্টিক দখল করে নিয়েছে আমাদের রান্নাঘর। কিন্তু এখনো কিছু কোণে, কিছু মানুষের হৃদয়ে টিকে আছে সেই পুরনো কাঁসা-পিতলের গন্ধ।

কাঁসা-পিতলের ঝলক আজও টিকে আছে পুরান ঢাকার অলিগলিতে

পুরান ঢাকার শাঁখারী বাজারে গেলে যেন সময় থমকে দাঁড়ায়। সরু গলির দুই পাশে সারি সারি দোকান-একেকটি দোকান যেন ইতিহাসের জীবন্ত দলিল। ঝকঝকে থালা, কলসি, বাটি, চামচ সবই কাঁসা আর পিতলের তৈরি। কোনো দোকানে হাতুড়ির টুংটাং শব্দ, কোথাও আবার কারিগর মনোযোগ দিয়ে ঘষছেন পুরনো থালা, যেন নতুন করে জীবন্ত করে তুলছেন স্মৃতিকে।

কাঁসা-পিতলের ঝলক আজও টিকে আছে পুরান ঢাকার অলিগলিতে

একজন দোকানি হাসিমুখে বললেন, ‘এখন আর আগের মতো বিক্রি হয় না বোন, তবে যারা সনাতন ধর্ম পালন করেন, তাদের বাড়িতে এখনো এসবের চাহিদা আছে। পূজায়, বিয়েতে, কিংবা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে কাঁসা-পিতলের আলাদা মর্যাদা।’

কাঁসা-পিতলের ঝলক আজও টিকে আছে পুরান ঢাকার অলিগলিতে

পিতলের তৈজসপত্র কেজি প্রতি বিক্রি হয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়, আর কাঁসা বিক্রি হয় ১৫০০ থেকে ১৭০০ টাকায়। দাম কিছুটা বেশি হলেও, যারা কেনেন, তারা দামের চেয়ে বেশি মূল্য দেন ঐতিহ্যকে। কারণ এসব জিনিস শুধু ধাতুর নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রজন্মের স্মৃতি।

কাঁসা-পিতলের ঝলক আজও টিকে আছে পুরান ঢাকার অলিগলিতে

একজন প্রবীণ ক্রেতা বললেন, এই থালা আমার মায়ের মতো। ছোটবেলায় ওতেই খেতাম। এখন মেয়ের বিয়েতে কিছু কাঁসা নিতে এলাম, যেন ঐতিহ্যটা ওর হাতেও পৌঁছায়।

কাঁসা-পিতলের ঝলক আজও টিকে আছে পুরান ঢাকার অলিগলিতে

কাঁসা-পিতলের উজ্জ্বলতা যেন শুধু ধাতুর নয়, একসময়ের ঘরোয়া জীবনের সৌন্দর্যের প্রতিফলন। আজ যখন আমরা স্টাইলিশ ডিজাইনে মুগ্ধ, তখনও পুরান ঢাকার সেই একচিলতে দোকানগুলো মনে করিয়ে দেয় আসল সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে ঐতিহ্যের মাঝে।

কাঁসা-পিতলের ঝলক আজও টিকে আছে পুরান ঢাকার অলিগলিতে

হয়তো আগামী প্রজন্ম জানবেও না কাঁসার থালা কেমন করে আলো ধরে, কিংবা পিতলের কলসিতে জল রাখলে কেন সেই জলে ঠান্ডা অনুভব পাওয়া যায়। কিন্তু যারা একবার সেই স্পর্শ পেয়েছেন, তাদের কাছে এই তৈজসপত্র শুধু পুরনো বস্তু নয়-এক টুকরো সময়, এক টুকরো নস্টালজিয়া।

কাঁসা-পিতলের ঝলক আজও টিকে আছে পুরান ঢাকার অলিগলিতে

পুরান ঢাকার শাঁখারী বাজারে দাঁড়িয়ে মনে হয়, যত কিছুই বদলে যাক, কিছু জিনিস কখনো মরে না কাঁসা-পিতলের মতোই, তারা সময়ের বুক চিরে জ্বলে থাকে নিভে না এমন এক উজ্জ্বলতায়।

জেএস/

Read Entire Article