কারাবন্দি আসাদুজ্জামান নূরের ফেরার অপেক্ষায় আফজাল হোসেন

7 hours ago 7

দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের দুই কিংবদন্তিতুল্য ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর ও আফজাল হোসেন। মঞ্চ, টেলিভিশন, বিজ্ঞাপনসহ সবখানেই সফল তারা। তাদের একে অপরের কাজের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রয়েছে তাদের। এবার সেই সম্পর্ক, সেই শ্রদ্ধা ফুটে উঠেছে আফজাল হোসেনের এক আবেগঘন লেখায়।

আজ (৩১ অক্টোবর) খ্যাতিমান অভিনেতা ও রাজনীতিক আসাদুজ্জামান নূরের জন্মদিন। এ উপলক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দীর্ঘ এক স্ট্যাটাস দিয়েছেন অভিনেতা-নির্মাতা আফজাল হোসেন।

সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘নূর ভাই বেঁচে আছেন। সে বেঁচে থাকা মৃত্যুর চেয়ে একটু ভালো। মৃত্যু থেকে তো কারো ফিরে আসা হয় না। কেউই ফিরতে পারেন না বলে দূরত্ব ঘোঁচানোর সুযোগ মেলেনি। নূর ভাই ফিরবেন, আরও কাছের হয়ে ওঠার সুযোগটা পাবো, এমন আশায় রয়েছি।’

আফজাল হোসেন তার লেখায় তুলে ধরেছেন, কীভাবে আসাদুজ্জামান নূর শুধু একজন অভিনেতা নন, বরং একজন সৌম্য ও প্রজ্ঞাবান মানুষ। মঞ্চে বা টেলিভিশনে তার অভিনয় দেখলে মনে হয় এমন স্বাভাবিকভাবে দুর্দান্ত অভিনয় করা কীভাবে সম্ভব!

তার উচ্চারণ, কণ্ঠস্বর আর আবৃত্তির মাধুর্যে মুগ্ধ আফজাল লিখেছেন, ‘নূর ভাইয়ের উচ্চারণ আর কণ্ঠস্বরে রয়েছে এমন এক মাধুর্য, যা সুবাসের মতো। নীরবে নিশব্দে তা অনুভবকে আলিঙ্গন করে।’

লেখায় আরও উল্লেখ করেন, একসময় তিনি যখন বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণে ব্যস্ত, তখনই আসাদুজ্জামান নূর তাকে প্রথম আন্তর্জাতিক পণ্যের বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণের দায়িত্ব দিয়েছিলেন এই বলে, ‘সন্মান যেনো থাকে।’

নূর এমন এক শিল্পী, যিনি শুধু অভিনয়ে নয়, মননেও ছিলেন উদার ও অনুপ্রেরণাদায়ী। তাই আফজাল হোসেনের কাছে নূর ভাই কেবল একজন সহকর্মী নন, বরং শ্রদ্ধার আর এক আবেগের নাম।

অভিনেতা থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে সাংসদ ও মন্ত্রী হওয়া আসাদুজ্জামান নূর বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। এবার তিনি ৭৯ বছরে পা রাখলেন। এই সময়ে তার জন্মদিনে আফজাল হোসেনের এমন ভালোবাসাভরা স্ট্যাটাস পাঠকের হৃদয়ে ছুঁয়ে গেছে গভীরভাবে।

১৯৪৬ সালের ৩১ অক্টোবর ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িতে জন্মগ্রহণ করেন আসাদুজ্জামান নূর। জন্মের দুই বছরের মাথায় ১৯৪৮ সালে পরিবারের সঙ্গে এই বাংলার নীলফামারী চলে আসেন। তার বাবা আবু নাজিম মো. আলী এবং মাতা আমিনা বেগম। দুই ভাই আর এক বোনের মধ্যে আসাদুজ্জামান নূর সবার বড়। ছাত্রাবস্থায় জড়িয়ে পড়েন বাম রাজনীতির সঙ্গে। ১৯৬২ সালে স্বৈরাচারী আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে সব আন্দোলনে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। আসাদুজ্জামান নূর মুক্তিযুদ্ধে ৬ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন।

১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন তিনি। ছাত্র রাজনীতির পাশাপাশি তিনি জড়িয়ে পড়েন থিয়েটার ও আবৃত্তি চর্চায়। পরে টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করে পান তুমুল জনপ্রিয়তা। হুমায়ূন আহমেদের পরিচালনায় ‘এই সব দিনরাত্রি’র শফিক কিংবা ‘অয়োময়’ র ছোট মির্জা চরিত্রে অভিনয় করে লাখো দর্শক-শ্রোতার প্রশংসা ও ভালোবাসা পেয়েছেন। তবে কিংবদন্তি হয়ে আছেন ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে বাকের ভাই চরিত্রে অভিনয় করে।

এলআইএ/এমএমএফ/এমএস

Read Entire Article