কিশোরগঞ্জের হাওরে হাঁস পালনে সম্ভাবনার আশা

23 hours ago 2

কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার ঘোড়াউত্রা নদীর দুই তীরে চোখে পড়ে শত শত হাঁসের খামার। বাঁশের খুঁটি আর জালের বেষ্টনী দিয়ে পানিতে গড়ে ওঠা এসব অস্থায়ী খামারে সারাদিন সাঁতার কাটে দেশি প্রজাতির হাঁস। রাতে নদীর ধারে তৈরি খুপড়ি ঘরে বিশ্রাম নেয়।

খামারিদের ভাষায়, কম পুঁজি, সহজলভ্য প্রাকৃতিক খাদ্য (শামুক ও ঝিনুক) ও সামান্য দানাদার খাবারের সহায়তায় এ খাতে এখন লাভজনক আয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ফলে বদলে যাচ্ছে হাওরাঞ্চলের অনেক পরিবারের জীবনযাত্রা।

নিকলীর পাশাপাশি ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও তাড়াইল—হাওর অধ্যুষিত উপজেলাগুলোয়ও বর্ষা মৌসুমে নদ-নদী ও হাওরের পানিতে হাঁস পালনের প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে। এতে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানও তৈরি হচ্ছে।

কিশোরগঞ্জের হাওরে হাঁস পালনে সম্ভাবনার আশা

স্থানীয় ও জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের খামারগুলো থেকে বছরে প্রায় ২ কোটি হাঁসের ডিম উৎপাদিত হয়। জেলার চাহিদা মিটিয়েও দেশের মোট চাহিদার প্রায় ২৫ শতাংশ ডিম আসে এখান থেকে। এ ডিম ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ অন্যান্য বড় শহরে সরবরাহ করা হয়। পাশাপাশি হাওরের হাঁসের মাংসও দেশে ব্যাপক জনপ্রিয়।

ডিমকে ঘিরে তাড়াইল উপজেলার দামিহা এলাকায় গড়ে উঠেছে শতাধিক হ্যাচারি। সেখানে তুষ বা ভাপ পদ্ধতিতে প্রতিদিন মোট ২ থেকে আড়াই লাখ হাঁসের বাচ্চা উৎপাদিত হয়—যা স্থানীয় খামার ও দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়।

কিশোরগঞ্জের হাওরে হাঁস পালনে সম্ভাবনার আশা

বর্তমানে কিশোরগঞ্জে প্রায় ২ হাজার খামার আছে। এসব খামারে ২৫ লাখের বেশি হাঁস লালন-পালন হচ্ছে। খামারি বা উদ্যোক্তার সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৫শ। এ খাত থেকে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে সুবিধা পাচ্ছে প্রায় ১২ হাজার পরিবার। বছরে মোট উৎপাদন প্রায় ২ কোটি ডিম।

আরও পড়ুন
রেজাউলের দুগ্ধ খামারের বায়োগ্যাসে চলে রান্নার কাজ
তরুণদের আশার আলো হাইলাইন ব্রাউন জাতের মুরগি

খামারিদের অভিযোগ, হাঁসের রোগবালাই দেখা দিলে দ্রুত ভেটেরিনারি সহায়তা পাওয়া যায় না। তারা চান মোবাইল ভেট সার্ভিস, টিকা-ওষুধে সহায়তা, স্বল্পসুদে ঋণ, ফিড ও ডিমের সংগ্রহকেন্দ্র এবং ন্যায্যমূল্যের নিশ্চয়তা।

সংশ্লিষ্টদের মতে, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও বাজারসংযোগ বাড়ানো গেলে হাওরের হাঁস পালন শুধু স্থানীয় জীবিকার খাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না—এটি দেশের একটি বড় অর্থনৈতিক খাতে পরিণত হতে পারে।

কিশোরগঞ্জের হাওরে হাঁস পালনে সম্ভাবনার আশা

নিকলীর খামারি আলমগীর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘পানিতে খামার করলে আলাদা জমি লাগে না। জাল-বাঁশের ঘের দিয়ে হাঁস ছেড়ে দিই। শামুক আর দানাদার খাবারেই বেশিরভাগ চাহিদা মেটে। খরচ কম, তাই মৌসুমে ভালো লাভ হয়।’

মিঠামইনের রাবেয়া খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের হাঁসের ডিম পাইকাররা সরাসরি নিয়ে যায় ঢাকা-চট্টগ্রামে। কিন্তু রোগ হলে দ্রুত ডাক্তার পাই না। মোবাইল ভেট টিম থাকলে ক্ষতি অনেক কমে যেত।’

তাড়াইলের দামিহা এলাকার হ্যাচারি উদ্যোক্তা শাহাদত হোসেন বলেন, ‘দামিহায় এখন অনেক হ্যাচারি হয়েছে। আমরা প্রতিদিন হাজার হাজার বাচ্চা তুলতে পারি। যদি বিদ্যুৎ স্থিতিশীল থাকে আর একটা স্থায়ী সংগ্রহকেন্দ্র হয়, তাহলে কাজটা আরও বড় পরিসরে করা যাবে।’

কিশোরগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘হাওরের পানিতে উৎপাদিত হাঁসের মাংস ও ডিম নির্ভেজাল, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। তাই বাজারে এর চাহিদা সব সময়ই বেশি। এই সম্ভাবনাময় খাতের উন্নয়নে খামারিদের প্রশিক্ষণ, টিকাদান ও পরামর্শসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।’

এসইউ/জেআইএম

Read Entire Article