খালেদা জিয়ার খালাসের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ 

2 days ago 1
খালেদা জিয়ার খালাসের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ 

খালেদা জিয়ার খালাসের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ 

বাংলাদেশ

সমকাল প্রতিবেদক 2025-11-05

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সাজা থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে খালাস দিয়ে আপিল বিভাগের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ চলতি বছর ১৫ জানুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে খালাস দিয়ে সংক্ষিপ্ত রায় দিয়েছিলেন। আজ মঙ্গলবার আপিল বিভাগের সেই রায়ের ৫৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

রায়ে আদালত বলেছেন, ‘এই (মামলার) আপিলগুলোর বিষয়বস্তু গঠনকারী কার্যধারাগুলো উদ্দেশ্যমূলকভাবে গঠন করায় তা আইনের স্পষ্ট অপব্যবহার বলে প্রতীয়মান হয়েছে, যা দুরভিসন্ধিমূলক মামলার সমতুল্য।’

রায়ে আদালত আরও বলেছেন, ‘এই রায় অন্যান্য দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে, যারা এ মামলায় আপিল করেননি।’

১৫ জানুয়ারি আপিল বিভাগের রায়ে বিচারিক আদালত ও হাইকোর্টের রায় বাতিল করা হয়। এ কারণে খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানসহ অন্য আসামি আপিল না করেও সাজা থেকে খালাস পান।

মামলায় খালেদা জিয়াসহ তিনজনের করা আপিল মঞ্জুর করে ১৫ জানুয়ারি এ রায় দেওয়া হয়। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ সর্বসম্মতিতে এ রায় দেন।

এ মামলায় ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিল খারিজ করে সাজা ১০ বছর বাড়িয়ে হাইকোর্ট রায় দেন।

এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১৪ মার্চ খালেদা জিয়া পৃথক দুটি লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন। গত বছরের ১১ নভেম্বর আপিল বিভাগ খালেদা জিয়ার লিভ টু আপিল মঞ্জুর এবং সাজার রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করে আদেশ দেন। এর ধারাবাহিকতায় সাজার রায়ের বিরুদ্ধে পৃথক আপিল করেন খালেদা জিয়া।

এ ছাড়া ১০ বছর কারাদণ্ড বহাল রেখে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ গত বছর পৃথক আপিল করেন। 

এতিমদের সহায়তার উদ্দেশে বিদেশ থেকে পাঠানো ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করার অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিশেষ জজ আদালত-৫ রায় দেন।

রায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। পরে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া। কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে কাজী সালিমুল হক ও শরফুদ্দিন আহমেদ পৃথক আপিল করেন। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ৩০ অক্টোবর হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেন।

আর পাঁচ বছরের দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে খালেদা জিয়া এবং ১০ বছরের দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে কাজী কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদের আপিল খারিজ করেন আদালত।

তিনটি আপিল ও রুলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর হাইকোর্ট একসঙ্গে রায় দেন। রায়ে খালেদা জিয়ার আপিল খারিজ হয়। দুদকের রিভিশন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দেওয়া রুল যথাযথ ঘোষণা করে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট। ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও কাজী সালিমুল হকের আপিল খারিজ করেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে গত বছর পৃথক আপিল করেন খালেদা জিয়া, শরফুদ্দিন আহমেদ ও কাজী সালিমুল হক। এরপর গত ৭ জানুয়ারি আপিল শুনানি শুরু হয়। গত ১৪ জানুয়ারি শুনানি শেষ হয়।
 

© Samakal
Read Entire Article