ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও বাস্তবে তা ভঙ্গ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আল জাজিরার বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ১০ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত এক মাসে ইসরায়েল অন্তত ২৮২ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। এসব হামলায় কমপক্ষে ২৪২ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৬২২ জন আহত হয়েছেন।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের তথ্য বলছে, এ সময়ে ইসরায়েল ৮৮ বার সাধারণ নাগরিকদের ওপর গুলি চালায়, ১২ বার আবাসিক এলাকায় অভিযান চালায় এবং ১২৪ বার বিমান ও কামান হামলা চালায়। এছাড়া ২৩ জন ফিলিস্তিনিকে আটক ও ৫২টি সম্পত্তি ধ্বংস করা হয়েছে।
যুদ্ধবিরতির অন্যতম শর্ত ছিল মানবিক সহায়তা নির্বিঘ্নে প্রবেশ। কিন্তু বাস্তবে এর অর্ধেকও বাস্তবায়িত হয়নি। জাতিসংঘের তথ্যমতে, এক মাসে গাজায় প্রবেশ করেছে মাত্র ৩,৪৫১টি ট্রাক, যেখানে চুক্তি অনুযায়ী থাকা উচিত ছিল ১৫,৬০০টিরও বেশি। অনেক খাদ্যপণ্য, বিশেষ করে মাংস, দুগ্ধজাত খাবার ও শাকসবজি, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের বাধার কারণে পৌঁছায়নি।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র এখনো ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রেখেছে এবং যুদ্ধবিরতি কার্যকর বলেই দাবি করছে। অথচ তথ্য বলছে, ৩১ দিনের মধ্যে ২৫ দিনই হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল, অর্থাৎ মাত্র ছয় দিন কোনো প্রাণহানি ঘটেনি।
এ অবস্থাকে বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি ‘নামমাত্র যুদ্ধবিরতি’। কাগজে যুদ্ধবিরতি থাকলেও বাস্তবে চলছে ‘নো ওয়ার, নো পিস’ বা ‘না যুদ্ধ, না শান্তি’ মডেল। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোও বলছে, এভাবে যুদ্ধবিরতির ধারা চলতে থাকলে গাজায় মানবিক বিপর্যয় আরও গভীর হবে।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন ৬৯,০০০-এর বেশি মানুষ, যাদের মধ্যে ২০,০০০-এরও বেশি শিশু। আহত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার মানুষ।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশ যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের আহ্বান জানালেও আন্তর্জাতিক মহলের দৃঢ় পদক্ষেপের অভাবে তা কার্যকর রূপ পাচ্ছে না। ফলে গাজায় আজও প্রতিদিনের জীবনের আরেক নাম—ভয়, ধ্বংস আর অনিশ্চয়তা।

2 hours ago
6









English (US) ·