ছাত্রদল নেতার থেকে ঘুষ নিয়ে ভাগাভাগি, এসআইয়ের অডিও ফাঁস

1 hour ago 2

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মহিউদ্দিনের ঘুষ লেনদেন ও ভাগাভাগরি একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অডিও ক্লিপে তাকে ঘুষের টাকা সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করার কথা স্বীকার করতে শোনা গেছে।

এছাড়া বিকাশের মাধ্যমে রাজশাহীর এক ছাত্রদল নেতার কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথাও সেই অডিওতে শোনা যাচ্ছে। যদিও এসব অডিও ভুয়া দাবি করেছেন এসআই। তবে লিখিত অভিযোগের পর এ নিয়ে তদন্তে নেমেছে পুলিশ।

মামলার আসামি সরকারি নিউ ডিগ্রি কলেজ শাখার সদস্যসচিব মাহমুদ হাসান লিমনের সঙ্গে এসআই মহিউদ্দিনের একটি ফোনকল রেকর্ডে শোনা যায়, ‘তুমি যে আমার বিকাশে টাকা দিয়েছো, সেই স্ক্রিনশট মানুষের কাছে গেলো কীভাবে?’ এর উত্তরে লিমন বলেন, ‘আপনি চার্জশিটের জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন, এতে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে।’ এরপর মহিউদ্দিন বলেন, ‘এখন কী করব বলো? তোমার টাকা খরচ করে ফেলেছি। দিয়া দেব।’

এরপর মহিউদ্দিন আরও বলেন, ‘ভাই, আমি যে চাকরি করি, আমি ভাইয়ের মধ্যে কোনো ফাঁক রাখি না। আমি যদি পাঁচ টাকা খাব, এই কাজ আমি করি না যে সিনিয়র অফিসারকে ফাঁকি দেব। এই কাজ আমি করি না, কোনোদিনও না। এখন আমার কোনো সমস্যা হলে সিনিয়র অফিসার আমাকে সেইফ করে কীভাবে?’

এসময় দুই লাখ টাকা লেনদেনের কথাবার্তাও হয়। এছাড়া রাজশাহীর প্রভাবশালী বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিনু তার আপন চাচা বলেও মহিউদ্দিন দাবি করেন।

আরেক ফোনকল রেকর্ডে শোনা যায়, রাজশাহী মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি মাহমুদ হাসান শিশির এসআই মহিউদ্দিনকে প্রশ্ন করছেন-‘আপনি কি তদন্ত করেছেন আমি গেছি কি না বা চুরি করেছি কি না?’ জবাবে এসআই মহিউদ্দিন বলেন, ‘না, না রে ভাই। ওগুলো কিছুই নাই। এগুলো নিয়েই তো ওসি লেগেছিল আমার সঙ্গে। আমি বললাম-স্যার, ইনি (শিশির) কি ২ লাখ টাকা চুরি করবে? এগুলো কিচ্ছু নাই। একটা টাকা, এতটুকু স্বর্ণও চুরি হয়নি। আমি এসব বলে আসছি।’

এসময় শিশির বলেন, ‘সুষ্ঠুভাবে যেটা হবে, সেটা করবেন। আমার পক্ষেও করার দরকার নাই।’

আরেক ফোনকল রেকর্ডে শোনা যায়, লিমন মহিউদ্দিনকে বলছেন,‘আমি লিমন নিজে বলছি। আমার নাম থেকে যাক। আপনি ভাইয়ের (শিশির) নামটা শুধু বাদ দেন।’ এসময় মহিউদ্দিন বলেন, ‘এ ভাই, আমি তো পারবো না রে ভাই। তোমরা তো বিষয়ই বুছতেছো না। মামলার মনিটরিং অফিসার হলো ডিসি স্যার। ডিসির ওপরে হলো কমিশনার। তোমরা কি জান? মামলা খালি আমাদের কাছে থাকে তাই। সব ডিরেকশন ওনারা দেয়।’

রাজশাহী মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি মাহমুদ হাসান শিশির বলেন, পুলিশ কোনো তদন্ত ছাড়াই মামলাটি গ্রহণ করেছেন। আমাকে আসামি করা হয়েছে। আমি কোনো দোষ করিনি। আমার পারিবারিক বিবাদের জেরেই এই মামলা করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পুলিশ আমার কাছে দুই লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে। এটি নিয়ে তারা আমাকে বারবার কল করে। একপর্যায়ে কিছু টাকা দিলেও তারা থামে না। বাধ্য হয়েই আমি অভিযোগ করেছি। এরই মধ্যে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসেছিলেন। তারা তদন্ত করছেন।

এ বিষয়ে সরকারি নিউ ডিগ্রি কলেজ শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব মাহমুদ হাসান লিমন বলেন, আমার সঙ্গে ওই কথোপকথন। তিনি নিজেই বলেছেন যে, এখানে কোনো চুরি হয়নি। আবার তিনি নিজেই আমাদের নামে মামলা দিয়ে চার্জশিট দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা দাবি করছেন। আমি বিকাশে তার কাছে টাকাও দিয়েছি সেটি প্রমাণও আমার কাছে আছে।

অভিযোগের বিষয়ে এসআই মহিউদ্দিন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, পুরো কথোপকথনের অনেক অংশ কেটে বিকৃতভাবে প্রচার করা হয়েছে। এতে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। আমি কর্মরত অবস্থায় এটি বলতে পারি না। এটি মিথ্যা তথ্য।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার গাজিউর রহমান বলেন, এসআই মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য একজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্তে সত্যতা মিললে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাখাওয়াত হোসেন/এমএন/জিকেএস

Read Entire Article