জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এর ঘোষিত তারিখ পুনর্বিবেচনা চাইছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির পরিচালিত ২৪ ঘণ্টার এক অনলাইন জরিপে দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় ৬৬ শতাংশ শিক্ষার্থী ২২ ডিসেম্বর নির্বাচনের তারিখে অসন্তুষ্ট। অন্যদিকে, ৩৪ শতাংশ শিক্ষার্থী নির্ধারিত তারিখে ভোট আয়োজনের পক্ষে মত দিয়েছেন। গত শুক্রবার বিকাল ৩টা থেকে শনিবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত গুগল ফর্মের মাধ্যমে পরিচালিত এ জরিপে বিভিন্ন বিভাগের মোট ২৫৯ শিক্ষার্থী অংশ নেন।
জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মতামত বিশ্লেষণে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৯৮ জন ১০ ডিসেম্বর, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ বা প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পূর্বনির্ধারিত তারিখ ২৭ নভেম্বর নির্বাচন চান ২৪ জন শিক্ষার্থী। আর ঘোষিত ২২ ডিসেম্বরের তারিখে নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত দিয়েছেন ৩৬ জন। এছাড়া প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী শুধু তারিখ নিয়ে অসন্তোষ জানিয়ে মন্তব্যে উল্লেখ করেছেন পরীক্ষার চাপ, ক্লাস-পরীক্ষার সূচির অসামঞ্জস্যতা এবং বিভাগভেদে সেশনাল-টার্ম পরীক্ষার ভিন্ন সময়সূচির মতো কারণে এ তারিখ পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
জরিপে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৩টি বিভাগ ও দুটি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ১৫ ব্যাচের ২৩ জন, ১৬ ব্যাচের ৩১ জন, ১৭ ব্যাচের ৫০ জন, ১৮ ব্যাচের ৩৭ জন, ১৯ ব্যাচের ৫৫ জন এবং ২০ ব্যাচের ৬৩ জন শিক্ষার্থী ছিলেন। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের বিভাগ, ব্যাচ, কোন সেমিস্টারে পড়ছেন, সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার সময়সূচি এবং ঘোষিত নির্বাচনের তারিখ নিয়ে সন্তুষ্ট কি না— এ বিষয়গুলো জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি যারা অসন্তুষ্ট, তাদের পছন্দের নির্বাচন তারিখও উল্লেখ করতে বলা হয়।
নমুনা সংগ্রহের মতামতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ ব্যাচের এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, আমার সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা ৬ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে এবং এরপর বাড়ি যাবেন। তবে জকসু নির্বাচন এগিয়ে নিলে ভোট দিয়ে দীর্ঘ ছুটিতে বাড়ি যেতে পারবো।
আরেক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ডিসেম্বরের ৪ তারিখে পরীক্ষা শেষ হলেও ভোটের জন্য ২২ ডিসেম্বর ঢাকায় আসতে হবে, যা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, এ সময় ঢাকায় অনধিকারভিত্তিক থাকা না করে পরিবারের সঙ্গে বাড়িতে থাকা বেশি সুবিধাজনক।
ছাত্র নেতাদের প্রতিক্রিয়া
ছাত্র শক্তির সদস্য সচিব শাহিন মিয়া বলেন, নির্বাচন কমিশন যে তারিখ নির্ধারণ করেছে এটি অযৌক্তিক।বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বছরের শেষে পরীক্ষা দিয়ে বাড়িতে যেতে চায় এবং যাবেও। সুতরাং এটা যুক্তিযুক্ত নয়।
জবি শাখা ছাত্র অধিকারের সভাপতি একেএম রাকিব বলেন, আমি শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে একটি গণস্বাক্ষর গ্রহণ করছি। সেখানে ৫০০ শিক্ষার্থী স্বাক্ষর করেছে গত বৃহস্পতিবার। হাতে গোনা কয়েকজন শিক্ষার্থী বাদে সবাই ২২ তারিখ নির্বাচনের বিপক্ষে। এটি শেষ করে আমরা নির্বাচন কমিশনের সাথে সাক্ষাৎ করবো।
শাখা ছাত্র শিবিরের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম বলেন, আমরা কোনোভাবেই এটি মানতে চাই না। অংশগ্রহণ মুলক নির্বাচন করতে অবশ্যই তারিখ এগিয়ে আনতে হবে।
শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, নির্বাচন কমিশনের সাথে আমরা এখনও বসতে পারিনি। আমরা লিখিত ডকুমেন্টস নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে জানাবো। আমরা খোঁজ নিচ্ছি কবে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা শেষ হবে। সেই প্রেক্ষিতে আমরা নির্বাচনের তারিখের দাবি জানাবো।
জকসু বিষয়ে এমন জরিপের কারণ জানিয়ে জবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ইমরান হুসাইন বলেন, নির্বাচন কমিশন জকসুর তফসিল ঘোষণার পর থেকেই ছাত্র নেতাদের মধ্যে একটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছিলো। ২২ ডিসেম্বর বছরের একদম শেষ সপ্তাহ। সাধারণত সব সেমিস্টারের শিক্ষার্থীরা এসময় পরীক্ষা শেষ করে বাড়িতে যায়। বছরের শুরুতে আবার ক্যাম্পাসে ফিরে। আমরা চাই প্রথম শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ থাকবে। শিক্ষার্থীদের মতামত জানতেই স্বল্প সময়ে আমাদের এই জরিপ।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসান বলেন, আমরা ঘোষিত তফসিল অনুসারে কাজ করছি। নির্বাচন ঘোষিত ২২ ডিসেম্বরেই হবে। তারিখ এগিয়ে আনার সুযোগ আমাদের কাছে নেই। এটিই চূড়ান্ত। শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানাবো ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে জকসুকে উৎসব মুখর করার জন্য।
টিএইচকিউ/এমএএইচ/

7 hours ago
8








English (US) ·