জলবায়ু প্রকল্পে দুর্নীতিতে নষ্ট ২১১০ কোটি টাকা
বাংলাদেশ
সমকাল প্রতিবেদক 2025-11-05পতিত আওয়ামী লীগের বিগত ১৫ বছরে জলবায়ু অর্থায়নের অর্ধেকের বেশি অর্থ দুর্নীতিতে নষ্ট হয়েছে বলে দাবি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি)। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটি জানায়, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড (বিসিসিটিএফ) থেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলোয় বরাদ্দ দেওয়া হয় ৪৫৮ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর থেকে প্রায় ২৪৮ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার (২ হাজার ১১০ কোটি ৬০ লাখ টাকা) দুর্নীতিতে অপচয় হয়েছে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ সরকারের সময় জলবায়ু প্রকল্পে বরাদ্দের প্রায় ৫৪ শতাংশ অর্থ প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে দুর্নীতিতে নষ্ট হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশে জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিসিসিটিএফের অনুমোদিত প্রকল্পে রাজনৈতিক বিবেচনা, যোগসাজশ ও স্বজনপ্রীতির প্রবণতা স্পষ্ট ছিল। অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ছিল না। তহবিল ব্যবস্থাপনা ও নজরদারির দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টও (বিসিসিটি) অনিয়ম প্রতিরোধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
গবেষণায় ২০০৩ থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত দেশে বাস্তবায়িত ১২টি জলবায়ু তহবিলের আওতায় ৯৪২ প্রকল্পের তথ্য বিশ্লেষণ করেছে টিআইবি। এর মধ্যে বিসিসিটিএফের প্রকল্পগুলো আলাদা করে যাচাই করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সাল পর্যন্ত শেষ হওয়া ৫৮৫ প্রকল্পের মধ্যে মাত্র ৯০টির (১৫ দশমিক ৪ শতাংশ) সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ন হয়েছে। বাকি ৪৯৫টির (৮৪ দশমিক ৬ শতাংশ) কোনো প্রভাব মূল্যায়ন করাই হয়নি।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের প্রতিবছর জলবায়ু ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলার জন্য ১০ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। ২০০৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমরা পেয়েছি মাত্র ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার, যা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। সেই স্বল্প অর্থেরও বড় অংশ নষ্ট হয়েছে দুর্নীতিতে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে জলবায়ু তহবিলের প্রকল্পগুলো রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাবের মাধ্যমে বণ্টন করা হয়েছে। এতে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী বঞ্চিত হয়েছে। ক্ষমতা সম্পর্কিত ব্যক্তি ও গোষ্ঠী সুবিধা পেয়েছে।
টিআইবি বলেছে, জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় দেশে প্রতি বছর প্রায় ১২ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ডলার দরকার। ২০১৫ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উৎস থেকে গড়ে ৮৬ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার (দশমিক ৭০ শতাংশ) বরাদ্দ এসেছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকেই জলবায়ু তহবিল পরিচালনায় অনিয়ম ও অস্বচ্ছতার অভিযোগ ওঠে। টানা ক্ষমতার সময়ে দলীয় প্রভাব ও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের সুযোগে বহু প্রকল্প রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর, সেই সময়ের নানা অনিয়ম, অপচয় ও দুর্নীতির চিত্র প্রকাশ্যে আসছে। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া একাধিক প্রকল্প বাতিল করেছে।
টিআইবি মনে করে, জলবায়ু অর্থায়নে প্রকৃত সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে জাতীয় পর্যায়ে স্বচ্ছ তহবিল ব্যবস্থাপনা, জবাবদিহিমূলক মূল্যায়ন ব্যবস্থা এবং নাগরিক অংশগ্রহণ অপরিহার্য। এর ব্যত্যয় হলে আন্তর্জাতিক সহযোগীরা বাংলাদেশের প্রতি আস্থা হারাতে পারে, যা ভবিষ্যতের জলবায়ু অর্থায়ন আরও কঠিন করে তুলবে।
© Samakal
1 day ago
1









English (US) ·