জাপানিদের ১০ অভ্যাস দীর্ঘজীবী হতে সাহায্য করে

1 day ago 9

সভ্য ও আধুনিক দেশ হিসেবে জাপান কয়েক দশক ধরে বিশ্ব উন্নয়নের মডেল হিসেবে আলোচিত। উন্নয়নের পাশাপাশি জাপান শত বছরের বা তার বেশি বয়সী নাগরিকের সংখ্যা দিয়ে রেকর্ড গড়েছে। বিশ্বের দীর্ঘজীবী মানুষের মধ্যে অনেকেই এই দেশে বসবাস করেন।
প্রশ্ন হলো, তারা কীভাবে সুস্থ ও সক্রিয়ভাবে বাঁচেন? মূল কারণ হলো জাপানিদের দৈনন্দিন অভ্যাস ও জীবনধারা। তারা শুধু আধুনিক ও সভ্য দেশ গড়েনি বরং দৈনন্দিন জীবনে স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলোও নিয়মিত মেনে চলেন। এই অভ্যাসগুলোই তাদের দীর্ঘায়ু, সুস্থতা এবং প্রাণবন্ত জীবন নিশ্চিত করেছে।

আসুন তাদের জীবন যাপনের কয়েকটি অভ্যাস জেনে নেওয়া যাক-

১. দিন শুরু করে নিরিবিলি পরিবেশ দিয়ে

জাপানিরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দিনের শুরু করে। এর মাধ্যমে তারা মানসিক শান্তি ও কর্মজীবনের শৃঙ্খলা নিশ্চিত করে। এটি তাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দিনের শুরুতেই চারপাশ পরিষ্কার করে এবং জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখে, যা তাদের জীবনেও শৃঙ্খলা আনে। সুস্থ মন ও শরীরের জন্য জাপানিরা প্রকৃতির সংস্পর্শে থাকতে ভালোবাসে। তারা গাছপালা, গ্রামের পরিবেশ ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করে। দিনের আলো এবং তাজা বাতাসকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের শরীর ও মনকে সতেজ রাখে।

জাপানিদের ১০ অভ্যাস দীর্ঘজীবী হতে সাহায্য করে

২. হারা হাছি বু খাবার পরিমিত রাখার সংস্কৃতি

জাপানিদের মধ্যে প্রচলিত একটি প্রবাদ হলো হারা হাছি বু, যার অর্থ হলো পেট ৮০ শতাংশ ভরলেই খাওয়া বন্ধ করা। তারা কখনো ভরপেট খায় না বরং অন্তত ২০-২৫ শতাংশ জায়গা খালি রাখে। এই অভ্যাস হজমে সাহায্য করে, শরীরের ওপর অপ্রয়োজনীয় চাপ কমায় এবং নিয়মিত মানলে ওজন নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।

৩. জাপানি জীবনধারায় ছোট ছোট ব্যায়াম

জাপানিরা দৈনন্দিন জীবনে হাঁটাকে প্রধান গুরুত্ব দিয়ে থাকে। নিয়মিত হাঁটা তাদের জন্য এক প্রাকৃতিক শরীরচর্চা, যেখানে আলাদা কোনো খরচ বা যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয় না। ট্রেন, সাইকেল, ফুটপাত, সিঁড়ি সাধারণ জীবনের প্রতিটি কাজেই লুকিয়ে থাকে ব্যায়ামের সুযোগ। ফলে শরীর সক্রিয় থাকে, মস্তিষ্কও সতেজ থাকে এবং মন ভালো থাকে। ছোট ছোট এই কার্যক্রমই তাদের সুস্থতা এবং ভালো মেজাজ বজায় রাখতে সাহায্য করে।

জাপানিদের ১০ অভ্যাস দীর্ঘজীবী হতে সাহায্য করে

৪. ও-সোজি: প্রতিদিন পাঁচ মিনিট পরিষ্কার অনুশীলন করা

ও-সোজি জাপানি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিচ্ছন্নতার প্রথা। মূলত বছরে একবার বড় ধরনের পরিষ্কার কাজ করা হলেও প্রতিদিন অল্প সময় নিয়ে এই অনুশীলন করেন। যেমন, থালা-বাসন গুছিয়ে রাখা। এটি শুধু গৃহস্থালির কাজ নয়, এটি মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত ও সতেজ রাখার একটি প্র্যাকটিস। ছোট ছোট এই কার্যক্রম তাদের মানসিক সুস্থতা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

৫. চা পানে জাপানিদের গুরুত্ব

খাবারের পাশাপাশি চা পান জাপানিদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তারা নিয়মিত গ্রিন টি পান করে এবং চায়ের প্রতিটি চুমুক উপভোগ করে।

এই রীতিকে ‘চানোয়ু’ বলা হয়। চা পান করার সময় ধৈর্য ও মনোযোগ ধরে রাখলে মানসিক প্রশান্তি আসে এবং বর্তমান মুহূর্তের সঙ্গে গভীর সংযোগ তৈরি হয়। বসে বসে ধীরে ধীরে চা খাওয়াই আসল লক্ষ্য, দাঁড়িয়ে দ্রুত গিলে ফেলা চা কেবল সময় নষ্ট করা হিসেবে তার মনে করে।

৬. রাজিও তাইসো: জাপানির সকালের স্ট্রেচিং

জাপানিদের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো নিয়মিত শরীরচর্চা। ঘুম থেকে উঠেই তারা স্ট্রেচিং করতে ভালোবাসে, যাকে বলা হয় রাজিও তাইসো।

রাজিও মানে ‘রেডিও’ আর তাইসো মানে ‘ব্যায়াম’। ১৯২৯ সাল থেকে এটি রেডিওর মাধ্যমে সম্প্রচারিত হয়ে আসছে। মাত্র ৩ মিনিটের এই ওয়ার্ম-আপ রুটিন ১৩টি সহজ নড়াচড়ার মাধ্যমে শরীরকে সক্রিয় রাখে এবং পুরো দিন ধরে সতেজ ও কর্মক্ষম থাকতে সাহায্য করে।

জাপানিদের ১০ অভ্যাস দীর্ঘজীবী হতে সাহায্য করে

৭. রাতে গোসল করা

জাপানে রাতে গোসল করা একটি পুরনো প্রথা। তারা বিশ্বাস করে, এটি শুধু শরীরকে পরিষ্কার করে না বরং দিনের ক্লান্তি দূর করে এবং ঘুমের মান উন্নত করে।

দৈনন্দিন জীবনে জাপানিরা বেশ ব্যস্ত থাকে- অফিস, যাতায়াত এবং অন্যান্য কাজে। দিনের মধ্যে গোসলের সময়কে তারা প্রায় অপচয় মনে করে। কিন্তু সারাদিনের ধুলা-ময়লা এবং ক্লান্তি দূর করতে ঘুমের আগে গোসল অপরিহার্য হিসেবে দেখা হয়।

৮. কাইজেন: ছোট ছোট পরিবর্তন আনা

কাইজেন অর্থ হলো-ভালোর জন্য ছোট ছোট পরিবর্তন আনা। এটি জাপানের একটি জনপ্রিয় নীতি, যা দৈনন্দিন জীবনে সহজভাবে প্রয়োগ করা যায়। যেমন, হাঁটার সময় অতিরিক্ত একটি ব্লক হাঁটা বা ঘুমানোর আগে কাগজের বইতে দশ পৃষ্ঠা পড়া। বড় প্রতিশ্রুতি না দিয়ে, পাঁচ মিনিটেরও কম সময়ে করা যায় এমন একটি অভ্যাস বেছে নেন। এই ছোট ছোট পরিবর্তনগুলো মিলিয়ে বড় পরিবর্তন আসে এবং জীবনকে আরও শৃঙ্খলাপূর্ণ ও ফলপ্রসূ করে তোলে।

৯. ভারসাম্যপূর্ণ রান্না করা

জাপানিরা তাদের বৈচিত্র্যময় ও সুস্বাদু রান্নার জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। ঋতুভিত্তিক স্বাদের ভারসাম্য এবং খাবারের শিল্পসম্মত উপস্থাপনাই তাদের রান্নার বৈশিষ্ট্য।

ঐতিহ্যবাহী জাপানি খাবারে থাকে সি-ফুড, চাল, সবজি এবং ফারমেন্টেড খাবার। এই উপকরণগুলোতে প্রচুর ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও প্রোবায়োটিক থাকে,যা হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্ক ও কিডনির জন্য অত্যন্ত উপকারী। জাপানিরা প্রক্রিয়াজাত ও অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলেন, ফলে শরীরে টক্সিন জমে না এবং বিপাকক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে।

১০. ওমোইয়ারি:অন্যদের কথা চিন্তা করা

ওমোইয়ারি শব্দ অর্থ হলো- অন্যদের প্রতি বিবেচনা, সহানুভূতি ও চিন্তাশীলতা দেখানো। এটি শুধু ভদ্রতা নয় বরং একটি গভীর মানসিকতা, যা অন্যদের প্রতি দয়া, বোঝাপড়া ও সম্মানের সঙ্গে আচরণ করতে শেখায়।
যেমন, কেউ দোকানে গেলে লিখে রাখে-কিছু লাগবে এবং কোনো মন্তব্য না করেই পানির গ্লাস ভরে রাখা। ছোট ছোট এই সৌজন্যপূর্ণ আচরণ জাপানের প্রবীণদের মাধ্যমে সম্প্রদায়কে সমৃদ্ধ করে।

ধীর-স্থির জীবনযাপন, প্রতিটি মুহূর্তে কৃতজ্ঞতা প্রকাশই জাপানিদের দীর্ঘ, স্বাস্থ্যকর ও প্রাণবন্ত জীবন গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে।

তথ্যসূত্র: ভেগ আউট, বিবিসি, জাপানহুইজপার ডটকম, মিডিয়াম, টাইমস অব ইন্ডিয়া

আরও পড়ুন
নারীর কি পুরুষের চেয়ে বেশি ঠান্ডা লাগে 
ডিজিটাল ডিটক্স ডেট, সঙ্গীর সঙ্গে ফোন ছাড়া এক সন্ধ্যা 

এসএকেওয়াই/ জিকেএস

Read Entire Article