জাবিতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল, প্রতিবাদে ক্যাম্পাসজুড়ে বিক্ষোভ

1 day ago 8

সম্প্রতি গভীর রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে মিছিল ও সমাবেশ করেছে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। পরে এ খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছে শাখা ছাত্রদল, জাতীয় ছাত্রশক্তি ও জাকসুর প্রতিনিধিরা।

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ‘হটাও ইউনূস, বাঁচাও দেশ’ লেখা ব্যানারসহ চারজনের একটি মিছিলের ভিডিও পোস্ট হলে বিষয়টি সামনে আসে।

প্রকাশিত ওই ভিডিও থেকে মিছিলে অংশ নেওয়া চারজনের মধ্যে শাখা ছাত্রলীগের সহ -সভাপতি ও জুলাই আন্দোলন শিক্ষার্থীদের সরাসরি হামলায় জড়িত এনামুল ও সোহেল রানাকে চিহ্নিত করা যায়। এতে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলো।

রাত সাড়ে ৮টায় ছাত্রলীগের এই মিছিলের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক থেকে একটি মোটরসাইকেল বিক্ষোভ শুরু করেন। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক হয়ে বিশমাইল প্রবেশ পথ দিয়ে এসে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল চত্বরে শেষ হয়।

এসময় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বলেন, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের অপতৎপরতা দেখা যাচ্ছে কিছুদিন থেকে, জাবি শাখা ছাত্রদল ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বারবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে অবস্থানরত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু তারা এখনও একজন ছাত্রলীগকেও গ্রেফতার করতে পারেনি।

অন্যদিকে, রাত ৯টার দিকে ছাত্রলীগের মিছিলের বিরুদ্ধে ও জুলাই গণহত্যায় জড়িত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দ্রুত বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন জাবি শাখা ছাত্রশক্তির নেতাকর্মীরা।

এসময় শাখা ছাত্রশক্তির নেতা ও জাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আহসান লাবীব বলেন, এনাম ও সোহলের মতো ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা এই ক্যাম্পাসে প্রধান ফটকের সামনে মিছিল করে। কিন্তু প্রক্টর অফিস এ বিষয়ে অবগত না, প্রক্টর অফিস কেন জানে না? নিরাপত্তা অফিস কেন জানে না? তাহলে কি আমরা ধরে নেব সেই নিরাপত্তা অফিসের ইন্ধনে সেই প্রোগ্রামগুলো হচ্ছে?

এদিকে রাত সোয়া দশটার দিকে জাকসুর নেতৃত্বও বিক্ষোভ মিছিল করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও হল সংসদের নির্বাচিত ছাত্রনেতারা। এসময় জাকসুর নেতারা জানান, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ আর কেয়ামত পর্যন্ত ফিরে আসতে পারবে না। ছাত্রলীগের এই গোপন তৎপরতাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতারই ফল। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে নিষিদ্ধ এই সংগঠনটির সমস্ত গোপন তৎপরতাকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেন জাকসুর নেতারা।

বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী মানববন্ধনে জাকসুর সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগের মিছিল করার আস্ফালন বাইরে থেকে নয় ভেতর থেকে দেওয়া হচ্ছে। জুলাইয়ে হামলাকারী ছাত্রলীগের বিচার নিশ্চিত করতে আমাদের ঘাম ছুটাতে হয় এবং জাকসু নির্বাচন পরবর্তী হামলার সহযোগী আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের বিচার নিশ্চিত করতে আমাদের এখনো প্রশাসনের কাছে ধারণা দিতে হয়।

তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আপনারা নিশ্চিত করুন, আপনাদের সঙ্গে কি স্বৈরাচারী সরকারের প্রেম রয়েছে নাকি পরকীয়া রয়েছে। নিষিদ্ধ সংগঠনের কোনো ছিটাফোঁটাও আমরা দেখতে চাই না। এসময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা জোরদার ও আওয়ামী দোসরদের প্রশাসন হতে অপসারণ করার আহ্বান জানান।

জাকসু সহ-সভাপতি আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের উপস্থিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মেনে নেবে না। জুলাই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের রক্ত তাদের হাতে লেগে আছে। সেই রক্তের দাগ এখনো শুকাই নাই।

এছাড়া ছাত্রলীগের মিছিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে জাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের মিছিল বিশ্ববিদ্যালয়, প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের জন্য লজ্জার। ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ কেয়ামত পর্যন্ত নিষিদ্ধ থাকবে। ১৫ জুলাই সম্মিলিত শিক্ষার্থীরা যেভাবে ছাত্রলীগকে মোকাবিলা করে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করেছিল, আবারও আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে ছাত্রলীগকে মোকাবিলা করবো।

মো. রকিব হাসান প্রান্ত/কেএইচকে/জেআইএম

Read Entire Article