ঢাকা মহানগর পুলিশের মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) জুয়েল রানা জানিয়েছেন, জেনেভা ক্যাম্পে সাধারণ বাংলাদেশিদের থাকার আইনগত সুযোগ নেই। সবার সঙ্গে আলোচনা করে ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ আইনগত প্রক্রিয়ায় তাদের উচ্ছেদ করা হবে।
রোববার (২ নভেম্বর) দুপুরে জেনেভা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে এডিসি জুয়েল এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘জেনেভা ক্যাম্প এরই মধ্যে মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে গেছে। অর্থাৎ বসবাসের জন্য সম্পূর্ণ অনুপযোগী। এর ওপর বিষফোঁড়া হিসেবে যুক্ত হয়েছে বাইরের মানে সাধারণ বাংলাদেশি নাগরিক। আমাদের হিসাব মতে ২০ থেকে ২৫ হাজার বাংলাদেশি ভাড়াটিয়া বিভিন্নভাবে এখানে বসবাস করছে। এতে পরিবেশ আরও কয়েকগুণ নষ্ট হচ্ছে। তাদের অধিকাংশই অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মাদক আনা-নেওয়ার সঙ্গে এই বহিরাগত ভাড়াটিয়ারা যুক্ত।’
‘জেনেভা ক্যাম্পের মালিক তো সরকার। কিন্তু আমরা পেয়েছি যে নোয়াখালীর মানুষ মালিক হয়েছে। অবৈধভাবে আরেকজনের থেকে রুম ক্রয় করে, বিল্ডিং ক্রয় করে। এখানে যারা বহিরাগত আছে, যাদের এখানে থাকার আইনগত সুযোগ নাই, তাদের আমরা উচ্ছেদ করবো। ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ আইনগত প্রক্রিয়ায়, সবার সঙ্গে আলোচনা করে উচ্ছেদ করবো। যাতে প্রাথমিক পর্যায়ে কিছুটা চাপ কমানো যায়,’ যোগ করেন এডিসি জুয়েল।
পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, ক্যাম্পের রাস্তাগুলো এমনিতেই দখল হয়ে গেছে। এরপর আবার নতুন করে যানবাহন- রিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল চলাচল করছে। যেগুলো মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই পুলিশ ক্যাম্পের ভেতরে এ যানবহনগুলোর চলাচল একটু নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছে। যাতে মানুষজন সহজে চলাফেরা করতে পারে।
এসময় ক্যাম্প পরিদর্শনে আসা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আঞ্চল ৫-এর নির্বাহী কর্মকর্তা মোহম্মদ সাদিকুর রহমানের কথার প্রসঙ্গে এডিসি জুয়েল বলেন, এখানে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মানবিক কিছু কাজ করতে হবে। এখানে একটি স্কুল আছে। সমাজের বিত্তবান বা এনজিওদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি- আপনারা আসুন, পরিদর্শন করুন। স্কুলটি খুবই পুরোনো অবস্থায়। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নেই। যদি কেউ সাহায্য দিতে চান, আমরা সহযোগিতা করবো। স্কুল আর চিকিৎসা ব্যবস্থার একেবারে ভয়াবহ অবস্থা। এক লাখ লোকের জন্য নির্ধারিত কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। নির্ধারিত স্কুল-কলেজ নেই।
আরও পড়ুন
ডিএনসিসি কর্মকর্তা: জেনেভা ক্যাম্পের ১৫ একরে লক্ষাধিক লোকের বাস, জীবন মানবেতর
জেনেভা ক্যাম্পে সিটি করপোরেশন ও ডিএমপির যৌথ পরিদর্শন
জেনেভা ক্যাম্পে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে তরুণ নিহত
এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘এখানে অপরাধটা আসলে বেশি। আমি অপরাধীকে ধরতে পারি, মারতে পারি, কাটতে পারি, জেলে পাঠাতে পারি। কিন্তু তাকে যদি আমি একটা সুন্দর জীবনের ব্যবস্থা না করতে পারি, মৌলিক অধিকার যেটা আছে সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত, সেগুলো যদি দিতে না পারি, তাহলে আমি কোন মুখ নিয়ে তাদের বলবো যে অপরাধ করবেন না?’
প্রকাশ্যে মাদক বিক্রির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে সকালে অভিযান করলে বিকেলে মাদক বিক্রি করে। বিকেলে করলে সন্ধ্যায়, সন্ধ্যায় করলে রাতে মাদক বিক্রি করে। এখানকার হাজার হাজার মানুষ কোনো জীবিকার উপায় না পেয়ে এসব করছে। এই দায়টাও আমাদের। আমরা জীবিকা দিতে পারি নাই। এটা আমাদের মেনে নিতে হবে। আমরা তাদের নতুন কোনো জীবিকার সন্ধান দিতে পারি নাই। ফলে তারা বাধ্য হয়ে পরিবেশের কারণে মাদকের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।’
‘তাদের আমরা এই জাহান্নামি জীবন থেকে বের করে আনতে চাই। এরপরে এখানে আর মাদক বিক্রি হবে না। তারা নতুন নতুন জীবিকার সন্ধান পাবে। এখন যে জনসংখ্যার সমস্যা আছে জেনেভা ক্যাম্পে, এটা ইনশআল্লাহ একসময় বাংলাদেশের জনসম্পদে পরিণত হবে। আমি আশা করি একদিন এই জেনেভা ক্যাম্পের একটা বাচ্চা আমার মতো এডিসি হিসেবে এখানে দায়িত্ব পাবে,’ বলেন এডিসি জুয়েল।
অপরাধ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে অপরাধপ্রবণ এলাকা হচ্ছে মোহাম্মদপুর। যুগের পর যুগ এটা হচ্ছে যে মাফিয়া, সন্ত্রাসী, খুনি, সিরিয়াল কিলার, মাদক ব্যবসায়ীদের আতুরঘর মোহাম্মদপুর। অতীতকালে এখানে মানুষজনের বসতি কম ছিল। গরিব মানুষ, অশিক্ষিত টোকাই শ্রেণির লোকজন বসবাস করতো। তারাই ধীরে ধীরে অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হতো এবং সারা ঢাকা শহরে অপরাধ করতো। এখন একদিনে সব সমাধান করতে পারবো না। তবে আপনাদেরও স্বীকার করতে হবে যে বিগত যেকোনো দিনের তুলনায় আমরা কিন্তু ব্যাপক পরিশ্রম করছি। আইনশৃঙ্খলা আগের যেকোনো সময়ের থেকে নিরাপদ।’
পুলিশের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা জানিয়ে এডিসি জুয়েল বলেন, তারা জেনেভা ক্যাম্পের কয়েকটি জায়গায় চেকপোস্ট করছেন। পাশাপাশি মোড়ে মোড়ে স্থায়ীভাবে পুলিশ থাকার ব্যবস্থা থাকবে। যাতে করে এখানে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এর একটি বড় কারণ হচ্ছে আগামীতে জাতীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে। নির্বাচন যাতে এ এলাকায় সুষ্ঠুভাবে নিরাপদ পরিবেশে হয় এটি পুলিশের অন্যতম অগ্রাধিকার।
কেআর/একিউএফ/এমএস

14 hours ago
8









English (US) ·