ঢাক-ঢোল ও লাঠির কসরতে গ্রাম বাংলার লাঠি খেলা, হাজারো মানুষের ঢল

16 hours ago 6

ঢাক, ঢোল ও কাসার বাজনার তালে তালে লাঠিয়ালদের বিশেষ কসরত, আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণের মধ্য দিয়ে পাবনার ভাঁড়ারা ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত হলো গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা। গ্রামীণ ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার এই আয়োজন দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে হাজারো মানুষের ঢল নামে।

শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে ইউপি চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ খানের উদ্যোগে ভাঁড়ারা স্লুইস গেইট এলাকায় এই ঐতিহ্যবাহী খেলা অনুষ্ঠিত হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাক-ঢোলের বাজনায় ও গানের তালে তালে লাঠি দিয়ে চলছে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ। প্রতিপক্ষের আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে কেউ কেউ তালে তালে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন। হাজারো দর্শক হাতে তালি ও হই-হুল্লোড়ে লাঠিয়ালদের উৎসাহ জোগাচ্ছেন।

আয়োজকরা জানান, এই আয়োজনে ব্যাপক জনসমাগমকে কেন্দ্র করে আশেপাশে বাচ্চাদের জন্য নাগরদোলাসহ বিভিন্ন রাইড, খেলনা ও খাবারের বাহারি দোকান বসেছিল। সব মিলিয়ে এক উৎসবের আমেজ তৈরি হয়। আশপাশ ও দূর-দূরান্তের ৭টি লাঠিয়াল দল এই খেলায় অংশ নেয়।

খেলা দেখতে আসা হাসান মালিথা বলেন, ছোটোবেলায় দেখেছি- এই খেলা প্রায়ই আয়োজন করা হতো। দিনের সব কাজ শেষ করে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাতেই এই আয়োজন হতো। কিন্তু এখন একেবারেই দেখা যায় না। অনেকদিন পর এরকম আয়োজন হচ্ছে শুনে দেখতে এসেছি। ঢাক-ঢোলের তালে তালে লাঠির লড়াই ভালোই লাগছে।

ঢাক-ঢোল ও লাঠির কসরতে গ্রাম বাংলার লাঠি খেলা, হাজারো মানুষের ঢল

দর্শনার্থী হাসিব বলেন, আমি এই প্রজন্মের একজন। মোবাইল ও মাদকের অতি আসক্তিতে তরুণ প্রজন্ম বিপথগামী হচ্ছে এবং প্রতিবেশী বা সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি হচ্ছে না। এ ধরনের আয়োজন অব্যাহত থাকলে তরুণরা মোবাইল ও মাদক থেকে অনেকটাই দূরে থাকতে পারবে।শুধু ব্যক্তি বা এলাকার উদ্যোগে নয় সরকারের উদ্যোগে এ ধরনের আয়োজন জোরদার করা উচিত বলেও মনে করেন এ তরুণ।

নারী দর্শনার্থী কুলসুম বলেন, ছোটোবেলায় নিয়মিত এই খেলা দেখতেন, যা এখন একেবারেই দেখা যায় না। দীর্ঘদিন পর এমন আয়োজন দেখে ভালো লাগছে।

এদিকে দীর্ঘদিন পর এই খেলায় অংশ নিতে পেরে আনন্দে উচ্ছ্বসিত লাঠিয়ালরাও। একে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়ও আয়োজন জোরদার করা উচিত বলে দাবি তাদের। ৬৫ বছর বয়সি লাঠিয়াল মুঞ্জেদ খা বলেন, এসব খেলার উদ্দেশ্য মানুষকে বিনোদন দেওয়া। আমরা ছোটোবেলা থেকেই এ কাজ করে আসছি। কিন্তু এগুলো এখন প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। এগুলো বাঁচিয়ে রাখা উচিত। খেলাধুলা ভালো জিনিস। শরীর ও মন ভালো রাখে। খেলাধুলা ও বিনোদনে সম্পৃক্ত থাকলে সমাজে হানাহানি কমবে।

লাঠিয়াল কামরুজ্জামান, মোমিন খাঁ ও হাসেম বলেন, এখন তো খেলা নাই, শেখার সুযোগও তেমন নাই। এ ধরনের খেলাধুলার মাধ্যমে একে অন্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা যায়। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার অভ্যাসটা অব্যাহত থাকে। অথচ আমাদের এই তরুণ প্রজন্ম এসব দেখেই নাই। তাহলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলা বা খেলা শিখবে কীভাবে! এসব না থাকার কারণে তারা ছন্নছাড়া জীবনযাপন করে। বিভিন্নভাবে বিপথগামী হয়। এসব থেকে তরুণদের ও গ্রামীণ ঐতিহ্যকে বাঁচাতে সবখানেই আগের মতো এসব খেলাধুলার আয়োজন করা উচিত।

ভাঁড়ারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আয়োজক সুলতান মাহমুদ খান বলেন, তরুণরা মাদক ও মোবাইলে অতি আসক্ত হওয়াসহ নানাভাবে বিপথগামী যেন না হয় সে জন্য মাঝে মধ্যেই এ ধরনের আয়োজন করছি। তারা যেন খেলাধুলা ও সংস্কৃতির মধ্যে থাকে, সুস্থ থাকে।

তিনি বলেন, এই খেলাকে কেন্দ্র করে যতটুকু পেরেছি প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়েছে। শুধু লাঠি খেলা নয়, এই আয়োজনে রয়েছে পানিতে হাঁস ধরা ও হাডুডু খেলাও। একা একা আসলে এসব ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখা কঠিন। এক্ষেত্রে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকার এক্ষেত্রে উদ্যোগ নিলে এ ধরনের আয়োজন অব্যাহত রাখা সম্ভব।

আলমগীর হোসাইন নাবিল/কেএইচকে/এমএস

Read Entire Article