তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের রায় দেওয়া হয় অসৎ উদ্দেশ্যে

1 hour ago 8

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে সর্বোচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছিলেন, তার পেছনে অসৎ উদ্দেশ্যে ছিল বলে আদালতে শুনানিতে দাবি করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

বুধবার (৫ নভেম্বর) তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের ওপর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চের শুনানিতে তিনি এসব কথা বলেন। আদালতে এদিন অ্যাটর্নি জেনারেলের মো. আসাদুজ্জামান শুনানি শুরুর আগে শুনানিতে অংশ নেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক।

অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানিতে বলেন, বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ‘শর্ট অর্ডার’ (সংক্ষিপ্ত রায়) যেদিন ঘোষণা করেন, সেদিনই রায়ের দিন। ঘোষিত রায় ১৬ মাস পর পরিবর্তন করা হয়। এ ক্ষেত্রে আইন ও রীতি অনুসরণ করা হয়নি। ঘোষিত রায় নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ ছাড়াই পরিবর্তন করা হয়েছিল, যা দণ্ডবিধির ২১৯ ধারার অপরাধ। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, যার দণ্ড হতে পারে।

এর আগে গত ২১ অক্টোবর এই শুনানি শুরু হয়েছিল। এখন পর্যন্ত আটদিনের মতো শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিন রাষ্ট্র পক্ষের শুনানি নিয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) দিন ঠিক করা হয়েছে।

১৯৯৬ সালে সংবিধানে যোগ হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে বাদ পড়ে। তার জন্য সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধন আনা হয়েছিল। ওই সংশোধনের ঠিক আগে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অবৈধ বলে রায় দিয়েছিলেন।

ওই রায় হয়েছিল সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে। সংক্ষিপ্ত রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা আরও দুটি নির্বাচনের জন্য রাখার বিষয়টি সংসদ বিবেচনা করতে পারে বলে উল্লেখ ছিল। তবে পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ বিষয়ে কোন কিছুই ছিল না।

আরও পড়ুন
সময় হলে পদত্যাগ করে নির্বাচন করবেন অ্যাটর্নি জেনারেল

শুনানিতে সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরে অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেন, দেশের মেঠো পথ ধরে যারা হাটে যায়, তারাও জানে হাকিম নড়ে তো হুকুম নড়ে না। হুকুমটা নড়ানোর জন্য যে পদ্ধতি আছে, সেই পদ্ধতি অবলম্বন করে হুকুম নড়াতে হয়। উনি (খায়রুল হক) হুকুম নাড়িয়ে দিয়েছেন।

এজন্য প্রক্রিয়া আছে। সংক্ষুব্ধ পক্ষ রিভিউ করতে পারে কিংবা আদালত সুয়োমটো (স্বঃপ্রণোদিত হয়ে) পারে। এ ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের রুলস ভঙ্গ হয়েছে। আইন ও রীতি অনুসারে হয়নি। এই রায় আইনের দৃষ্টিতে অকার্যকর।

আসাদুজ্জামান বলেন, কোনো সরকারি কর্মচারী যদি দুর্নীতিগ্রস্ত বা বিদ্বেষপূর্ণভাবে এমন কোনো প্রতিবেদন, আদেশ, রায় বা সিদ্ধান্ত প্রদান করে, যা সে জানে যে আইনের পরিপন্থি, তাহলে তাকে সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ২০১১ সালের ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন পৃথক আবেদন (রিভিউ) করেন।

সেই আবেদনগুলোর ওপর শুনানি শেষে গত ২৭ আগস্ট লিভ মঞ্জুর (আপিলের অনুমতি) করে আদেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। তারপর এই শুনানি শুরু হয়।

‘সামরিক শাসনে মানুষের মুক্তি বিরল ঘটনা’

গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা মৌলিক অধিকার উল্লেখ করে শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর সংবিধান গৃহীত হলে আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের হাঁটা শুরু হয়েছিল। দুই বছরের মাথায় গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছিল। বাক্‌স্বাধীনতার কণ্ঠরুদ্ধ করা হয়। জনগণ তখন ফুঁসে উঠেছিল।

তিনি বলেন, তখন গণতন্ত্র হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন, তারা বললেন, আমরা যেটা বলবো, সেটাই গণতন্ত্র, একদলীয় শাসন থাকবে। আমি যেটা বলবো, সেটা গণতন্ত্র, আমি রাষ্ট্রপতি যেটা বলবো, সেটি বিচার বিভাগ। আইনের শাসন বলতে আমি যেটা বলবো, বাকশাল রক্ষীবাহিনী যেটা বলবে, সেটা আইনের শাসন। কথা বলবেন, আপনার কণ্ঠ রুদ্ধ করা হবে। সব পত্রিকার স্বাধীনতা হরণ করলেন। প্রতিবাদ উঠেছিল, প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বিগত দুই বছর সময়ের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন। পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম বিরল ঘটনা সামরিক শাসনে সেই মানুষকে মুক্তি দিয়েছিলেন।

১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন নিয়ে মো. আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ১৯৭৫ সালের একটি পর্বের পরে দেশের মানুষকে মুক্তি দিয়েছিলেন একটি সামরিক শাসন। গণতন্ত্রের স্বাদ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। আজকের আওয়ামী লীগ, সেটা কিন্তু সামরিক শাসনের করুণায়।

এফএইচ/ইএ

Read Entire Article