তুলা রপ্তানিতে জটিলতায় পড়ছেন মার্কিন ব্যবসায়ীরা

1 day ago 2
তুলা রপ্তানিতে জটিলতায় পড়ছেন মার্কিন ব্যবসায়ীরা

তুলা রপ্তানিতে জটিলতায় পড়ছেন মার্কিন ব্যবসায়ীরা

অর্থনীতি

সমকাল প্রতিবেদক 2025-11-05

বাংলাদেশে তুলা রপ্তানিতে বাণিজ্যিক ডকুমেন্টেশন প্রস্তুতের কিছু ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা ও জটিলতার অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের তুলা রপ্তানিকারকদের সংগঠন কটন ইউএসএ। সংগঠনটির নেতারা বলেছেন, মার্কিন তুলা ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী পোশাকের মান আরও উন্নত করা সম্ভব। এতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা কাজে লাগিয়ে রপ্তানি আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। ডকুমেন্টেশন জটিলতা দূর করতে বিজিএমইএর সহযোগিতা চেয়েছেন তারা।

তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে কটন ইউএসএর নেতারা এসব কথা তুলে ধরেন। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ ভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে ইউএস কটনের ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দলে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের তুলা উৎপাদন ও রপ্তানিকারক সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা ছিলেন। অন্যদিকে বিজিএমইএর পক্ষে নেতৃত্ব দেন সংগঠনের সভাপতি মাহমুদ হাসান খান। এ ছাড়া সিনিয়র সহসভাপতি ইনামুল হক খান বাবলু ও পরিচালক নাফিস-উদ-দৌলা আলোচনায় অংশ নেন। 

বৈঠকের মূল বিষয় ছিল ন্যূনতম ২০ শতাংশ মার্কিন তুলা ব্যবহারে উৎপাদিত বাংলাদেশের পোশাকে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধার বিষয়টি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে জারি হওয়া শুল্ক কাঠামো অনুযায়ী, দেশটির বাজারে রপ্তানিযোগ্য কোনো পণ্য উৎপাদনে যদি ন্যূনতম ২০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়, তাহলে ওই পণ্যে যতটুকু মার্কিন কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়েছে, তার মূল্যের ওপর ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক প্রযোজ্য হবে না। 
যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশি পণ্যের মধ্যে তৈরি পোশাক প্রায় ৮৮ শতাংশ। অর্থাৎ এই ৮৮ শতাংশে শুল্ক ছাড় পাওয়ার সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের। অবশ্য পণ্যে তুলার বাইরে এক্সেসরিজসহ অন্য কাঁচামালের যতটুকু ব্যবহার, ততটুকুর ওপর নতুন শুল্ক কার্যকর হতে পারে। 
জানতে চাইলে ইনামুল হক খান বাবলু সমকালকে বলেন, ‘মার্কিন প্রতিনিধিরা আসলে তাদের তুলার বিপণন বাড়াতে এসেছে। আমরা চাহিদার খুব অল্প তুলাই যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করে থাকি। এ হার এত কম কেন, কীভাবে বাড়ানো যায়– বিশেষ করে মার্কিন তুলা ব্যবহারে উৎপাদিত পোশাকে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক ছাড়ের যে সুযোগ রয়েছে, সেটা কীভাবে কাজে লাগানো যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে মার্কিন তুলার একটি ওয়্যারহাউস নির্মাণের বিষয়েও কথা হয়েছে। এটিকে বড় সম্ভাবনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর মাধ্যমে তুলা আগাম আমদানি করে ওয়্যারহাউসে রাখা হবে, যাতে সারাবছর যে কারখানার যতটুকু প্রয়োজন তারা তাৎক্ষণিকভাবে ততটুকু নিতে পারে। এতে তুলা আমদানিতে ৩৫ দিন থেকে ৪০ দিনের যে সময় বা লিড টাইম লাগে সেটা বাঁচবে। 

সূত্র জানায়, বৈঠকে মার্কিন প্রতিনিধিরা বলেন, বাংলাদেশের বস্ত্র ও পোশাক শিল্প বিশ্ববাজারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। অন্যদিকে মার্কিন তুলা তার টেকসই গুণাবলি, নির্ভরযোগ্যতা এবং উচ্চমানের জন্য সুপরিচিত। মার্কিন তুলা ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা তাদের পণ্যের মান আরও উন্নত করতে পারবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্ক সুবিধা কাজে লাগিয়ে নিজেদের ব্যবসা সম্প্রসারিত করতে পারবে। তবে বাংলাদেশে তুলা রপ্তানিতে বাণিজ্যিক ডকুমেন্টেশন প্রস্তুতের কিছু ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা ও জটিলতা রয়েছে। এ সমস্যা সমাধানে বিজিএমইএর সহযোগিতা প্রয়োজন। 
বিজিএমইএ সভাপতি বাংলাদেশে তুলা রপ্তানিতে বাণিজ্যিক ডকুমেন্টেশন-সংক্রান্ত সমস্যার বিস্তারিত জানতে চান। এ বিষয়ে সমস্যাগুলো সুনির্দিষ্ট করে লিখিত আকারে বিজিএমইএকে জানাতে মার্কিন প্রতিনিধিদের অনুরোধ করেন তিনি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে এ বিষয়ের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা বা জটিলতাগুলো দ্রুত নিরসনের চেষ্টা করা হবে।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, এই নতুন শুল্ক ছাড়ের সুযোগ বাংলাদেশের শিল্প খাতের জন্য এক বিশাল সম্ভাবনা এনে দিয়েছে, যা আমাদের পণ্যকে আন্তর্জাতিক বাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে। তবে তিনি উল্লেখ করেন, এ সুবিধা বাংলাদেশের স্পিনিং মিল ও পোশাক কারখানাগুলো কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লাভ করবে, সে বিষয়ে এখনও বিজিএমইএর কাছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই। মার্কিন প্রশাসনের কাছ থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় স্পষ্টীকরণ ডকুমেন্টস বিজিএমইএকে সরবরাহ করা হলে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন। এতে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা শুল্ক সুবিধা নিতে প্রস্তুতি নিতে পারবেন। 
মাহমুদ হাসান খান আরও বলেন, বর্তমানে আমদানি করা তুলার প্রায় ১০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে, যা দ্বিগুণ বা তিন গুণ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। 
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ বছরে ৪৮০ কোটি থেকে ৫২০ কোটি ডলারের তুলা আমদানি করে। মোট তুলার ৫০ শতাংশ ভারত থেকে আসে। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, অস্ট্রিলিয়া ও আফ্রিকার কিছু দেশ থেকেও তুলা আমদানি করা হয়। 

© Samakal
Read Entire Article