তৃণমূলের প্রতিরোধের মুখে বিএনপির মিত্ররা

1 day ago 2
তৃণমূলের প্রতিরোধের মুখে বিএনপির মিত্ররা

তৃণমূলের প্রতিরোধের মুখে বিএনপির মিত্ররা

বাংলাদেশ

সমকাল প্রতিবেদক 2025-11-05

বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে সম্ভাব্য কোনো প্রার্থী দেয়নি বিএনপি। ধারণা করা হচ্ছে, যুগপৎ আন্দোলনের শরিক নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার জন্য আসনটি ফাঁকা রেখেছে দলটি। তবে এখানে মান্নাকে ঠেকাতে একাট্টা তৃণমূলের নেতাকর্মী।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী মীর শাহে আলমের নেতৃত্বে মান্নাবিরোধী বিশাল বলয় গড়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে মান্নাকে শিবগঞ্জে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।

শুধু বগুড়া-২ নয়, ফাঁকা রাখা এমন একাধিক আসনে শরিক দলের প্রার্থীকে মেনে নিচ্ছে না বিএনপির তৃণমূল। তাদের ঠেকাতে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী দাঁড় করানোর কাজও চলছে।

জোটের প্রার্থীরা বলছেন, সমঝোতার অংশ হিসেবে তাদের আসনে প্রার্থী দেয়নি বিএনপি। এখন কেন্দ্রীয় বিএনপিকেই স্থানীয় নেতাকর্মীদের সামলাতে হবে। তা না হলে পরিস্থিতি সংঘাতে রূপ নিতে পারে।
বগুড়া-২ আসনে ২০১৮ সালে ‘ধানের শীষ’ নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। এবারও শরিক দল হিসেবে তাঁর মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে এখানে বেঁকে বসেছেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলম। তাঁর অনুসারীরা জানিয়েছেন, কোনোভাবেই তারা মান্নাকে মেনে নিবেন না।

শাহে আলমের অনুসারী শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওহাব বলেন, আমরা মীর শাহে আলমের পক্ষেই আছি। আমরা এখনও আশাবাদী, দল তাঁকেই মূল্যায়ন করবে। অবশ্য তিনি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কিছু করবেন না বলেও জানান।
শাহে আলম বলেন, আমি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে কাজ করছি। তাঁর নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি।
এ ব্যাপারে মান্না বলেন, বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করে আসছি। ধানের শীষে নির্বাচনও করেছি। বগুড়া-২ আসনে জোটবদ্ধ হয়ে সামনের নির্বাচন করতে চাই।

নুরের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী করার তোড়জোড়
পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা ও দশমিনা) আসন ফাঁকা রেখেছে বিএনপি। ধারণা করা হচ্ছে এখানে জোটের প্রার্থী হবেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। বিএনপির হাইকমান্ড ছাড় দিলেও স্থানীয় নেতাকর্মীরা তাঁকে মানতে নারাজ। বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য হাসান মামুনকে ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’ করে হলেও নুরুকে ঠেকানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা দফায় দফায় সভা করেন।

গলাচিপা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুস সাত্তার হাওলাদার বলেন, আমরা ১৭ বছর এলাকায় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লড়েছি। গণঅধিকার পরিষদ কার্যক্রম শুরু করেছে গত বছরের ৫ আগস্টের পর। নুরকে বিএনপি সমর্থন দিলে, তাঁর মার্কা হবে ট্রাক। আমরা ধানের শীষের বাইরে যাব না।
নুরুর নির্বাচন সমন্বয়কারী ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আবু নাইম বলেন, হাসান মামুন দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাবেন না বলে আমরা বিশ্বাস করি। তবে গণঅধিকার পরিষদেরও এককভাবে জয়ের সাংগঠনিক শক্তি রয়েছে।
হাসান মামুনের বক্তব্য জানতে পারেনি সমকাল। নুর বলেছেন, সমঝোতার পর বিএনপির দায়িত্ব হলো নিজেদের কোনো প্রার্থী থাকলে তাঁকে বিরত রাখা। তা না হলে জোট কেন?
ভোলা-১ (সদর) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জেলা সভাপতি গোলাম নবী আলমগীরের নাম ঘোষণা করেছে।

বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ এ আসনটি পেতে মরিয়া ছিলেন। এ নিয়ে গত কয়েক মাসে দুই পক্ষের মধ্যে ছোটখাটো ঘটনা ঘটলেও গত শনিবার রক্তাক্ত সংঘর্ষ হয়। এতে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। পরে উপজেলা বিএনপির কমিটি বাতিল করে কেন্দ্র।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক বলেন, পার্থকে ঢাকা-১৭ আসন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তার পরও তাঁর লোকজন কয়েক মাস এলাকায় নানা তৎপরতা চালায়, যা তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মেনে নিতে পারেননি।
জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক মোন্তাসির বিল্লাহ বলেন, পার্থ ঢাকা-১৭ আসনের পাশাপাশি নিজ জেলা ভোলায় নিজে কিংবা দলের অন্য কাউকে প্রার্থী করতে চান।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অন্য কাউকে মানবে না তৃণমূল
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ-বিজয়নগর একাংশ) ও ৬ (বাঞ্ছারামপুর) আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী দেয়নি বিএনপি। ধারণা করা হচ্ছে, আসন দুটি শরিকদের জন্য ছেড়ে দেবে দলটি। এ নিয়ে তৃণমূলে হতাশা দেখা দিয়েছে। তারা ধানের শীষের প্রার্থী ছাড়া কাউকে মানবে না বলে জানিয়েছে।
সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সহসম্পাদক রুমিন ফারহানা ছাড়া অন্য কাউকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে মনোনয়ন দিলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁর অনুসারীরা।
সরাইল উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনিছুল ইসলাম ঠাকুর বলেছেন, এখানে রুমিন ফারহানার ব্যাপক জনপ্রিয়তা আছে। জোটের শরিক কাউকে (মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিবী) মনোনয়ন দেওয়ার পর রুমিন ফারহানা স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে জোটের প্রার্থী জামানত হারাবেন। এখানে ৭০ শতাংশ দলীয় নেতাকর্মী রুমিন ফারহানার পক্ষে থাকবেন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রুমিন ফারহানার এক অনুসারী বলেন, এখানে তাঁকে (রুমিন ফারহানা) ছাড়া অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলে আমরা প্রথমে আন্দোলন করব। প্রয়োজন হলে অন্য চিন্তা করব।
রুমিন ফারহানা বলেন, আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের জনগণের সঙ্গে ছিলাম, এখনও আছি। ২০১৭ সাল থেকে এলাকার মানুষের পাশে রয়েছি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ বিষয়ে ভালো জানেন, তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন।
রুমিন ফারহানা বলেন, এখানে আমার নাম ঘোষণা না হওয়ায় শত শত অনুসারী কান্নাকাটি করছেন। বিষয়টি নিয়ে এখনও ভাবিনি। পরে প্রতিক্রিয়া জানাব।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে শরিক গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি প্রার্থী হচ্ছেন, এটি প্রায় নিশ্চিত। তবে আগে থেকেই সাকির বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি করেছেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা।
তারা সাবেক এমপি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এম এ খালেক এবং বাঞ্ছারামপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের প্রত্যাশা, ধানের শীষ বিএনপি নেতাদের হাতেই থাকুক। তবে দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতিও তারা শ্রদ্ধাশীল থাকবেন জানিয়েছেন।

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী মেহেদী হাসান পলাশ বলেন, নেতাকর্মীরা হতাশ। তবে দল যে সিদ্ধান্ত নেবে তা-ই হবে। আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী এম এ খালেক বলেন, আমি এ আসনের সাবেক এমপি। ২০০৮ ও ২০১৮ সালে দল থেকে নির্বাচন করেছি। আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলাম। এখন দল যা সিদ্ধান্ত দেবে, তা মেনে নেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছে বরিশাল ও বগুড়া ব্যুরো এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি)

© Samakal
Read Entire Article