দলগুলোর মধ্যে আলোচনার লক্ষণ নেই
বাংলাদেশ
সমকাল প্রতিবেদক 2025-11-05জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি এবং গণভোটের সময় নিয়ে সমঝোতা করতে অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান জানালেও গত দুদিনে আলোচনার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। সরকারি মধ্যস্থতা ছাড়া আলোচনা সম্ভব কিনা– তাও নিশ্চিত নয়।
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে সমঝোতায় এর আগে প্রচেষ্টা চালানো দলগুলোর নেতারা সমকালকে বলেছেন, সরকার দায়িত্ব এড়িয়ে বল ঠেলে দিয়েছে। ঐকমত্য কমিশনের আট মাসের চেষ্টায় কিছু সংস্কারে সমঝোতা হয়নি। আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক আলোচনায়ও দলগুলোকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সরানো যায়নি। উপদেষ্টাদের দূতিয়ালিতেও কাজ হয়নি। এ পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলো নিজ উদ্যোগে আলোচনা করে সমঝোতা করতে পারবে– এ আশা দুরাশা। হয় সরকারকে আলোচনায় মধ্যস্থতা করতে হবে, নয়তো নিজের সিদ্ধান্ত জানাতে হবে।
সরকারি মধ্যস্থতা ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্যোগে সমঝোতা হবে– এমন সম্ভাবনা দেখেন না বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তিনি বলেন, এটি সময়ক্ষেপণ। সরকারেরই উচিত সমাধান করা। বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট– কোনোভাবেই নির্বাচনের আগে গণভোট মানবে না। এ বিষয়ে মীমাংসা করা উচিত ছিল।
গত রোববার সংবাদ সম্মেলন থেকে আলোচনার জন্য বিএনপিকে আহ্বান জানিয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। সোমবার উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠক শেষে জানানো হয়, দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সমঝোতায় আসতে হবে। ওই দিনই জামায়াতসহ আট দল সংবাদ সম্মেলন থেকে প্রধান উপদেষ্টাকে আলোচনায় রেফারির দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানায়। এনসিপি বলেছে, সরকার সাপ-লুডু খেলছে। বিএনপি এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, জুলাই সনদের বাস্তবায়নের পথে যে বাধা তৈরি করা হয়েছে, তা নিরসনে আলোচনার বিকল্প নেই। জামায়াত আলোচনার পক্ষে। কিন্তু একই আগ্রহ বিএনপির থাকতে হবে। জামায়াতের অবস্থান স্পষ্ট– গণভোট হতে হবে নির্বাচনের আগে।
বিএনপি ও জামায়াতের অনড় অবস্থানের কারণেই আলোচনায় সুরাহার আশা দেখছেন না এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব। তিনি বলেন, দলগুলোর নিজেদের মধ্যে আলোচনার জন্য গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে দুই দফায় প্রায় এক মাস সময় দিয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। সে সময় এনসিপিসহ কয়েকটি দল সমঝোতার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বিএনপি ও জামায়াত ছাড় না দেওয়ায় তা সফল হয়নি। পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠন পদ্ধতি বিএনপি মেনে নিলে সমঝোতা হয়ে যেত। জামায়াতসহ কয়েকটি দল নিম্নকক্ষে পিআরের দাবি তোলায় সমঝোতার আলোচনা এগোয়নি। দুটি দল নিজ নিজ অবস্থানে কিছুটা ছাড় দিলে গণভোটের সময় নিয়েও সমঝোতা সম্ভব।
বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করা দলগুলোর মধ্যে এবি পার্টিও ছিল। দলটির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, সরকার এভাবে মাঠে বল ছেড়ে দিলে খেলা হবে না। হয় সরকারকে মধ্যস্থতা করতে হবে, নয়তো সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
রাজনৈতিক সূত্রগুলোর খবর, সরকার জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি এবং গণভোটের সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর কোনো দল যেন সরকারকে দায়ী করতে না পারে, সে জন্যই আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে।
সদ্য বিলুপ্ত ঐকমত্য কমিশনের একটি সূত্র জানিয়েছে, সরকার যে সিদ্ধান্ত দিতে পারে, তা বিএনপির দাবির কাছাকাছি। গণভোট ও নির্বাচন একই দিনে হতে পারে। গণভোটে নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) না থাকলেও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দায়িত্ব আগামী সংসদের সংবিধান সংস্কার পরিষদের ওপর ছেড়ে দেওয়া যায়। পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল নিজেদের মতো সংস্কার করতে পারবে– এমন বিধান থাকতে পারে।
এ বিষয়ে সরকারের কোনো বক্তব্য জানতে পারেনি সমকাল। তবে সরকারি সূত্র জানিয়েছে, আইন মন্ত্রণালয় ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ’ প্রণয়নে কাজ শুরু করেছে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে তা সম্পন্ন হতে পারে। সরকার বলেছিল, দলগুলো সমঝোতায় না এলে এক সপ্তাহ পর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে সরকার।
© Samakal

1 day ago
2









English (US) ·