টাকা আছে, তবে তা নগরীর দুর্ভোগ মোচনে নয়, বিলাসবহুল রিসোর্ট বানানোর জন্য। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ও জরুরি জনদুর্ভোগ রেখে প্রায় শতকোটি টাকা ব্যয়ে পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটায় জমি কিনে রিসোর্ট তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি)।
নগরজুড়ে অচল বর্জ্য ও পানি শোধনাগার, ভাঙাচোরা রাস্তা এবং যানজটের মতো অসংখ্য সমস্যা বিদ্যমান, ঠিক তখনই বিসিসির ‘উচ্চাভিলাষী’ এমন সিদ্ধান্ত নেয়। যা নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। তবে বিসিসি কর্তৃপক্ষের দাবি এতে সিটি করপোরেশনের আয় বাড়বে।
এদিকে জমি কিনতে এরই মধ্যে ১৯ অক্টোবর দরপত্র আহ্বান করে বিসিসি। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সৈকতের কাছাকাছি সড়কের পাশে কমপক্ষে ৩ একর জমি কেনা হবে। আগ্রহী জমি মালিকদের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ৭ দিনের মধ্যে আবেদন করার আহ্বান জানানো হয়।
বিসিসির সম্পত্তি কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান শাকিল জানিয়েছেন, দরপত্র অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ৩টি আবেদন জমা পড়েছে। তার মধ্যে একটিতে ৮ একর এবং অন্য দুটিতে ৬ একর করে জমি রয়েছে। বিসিসি ৮ একরের জমিটির প্রতি আগ্রহী। মাসিক সভায় রিসোর্ট করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুয়াকাটা সৈকত থেকে আধা কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে সড়কের পাশে প্রতি শতাংশ জমি গড়ে ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সে হিসাবে ১ একরের দাম হবে ১৫ কোটি টাকা। বিসিসি ৮ একর কিনলে দাম পড়বে ১২০ কোটি টাকা। আধা কিলোমিটারের বাইরে পৌর এলাকার মধ্যে প্রতি শতাংশ বিক্রি হয় ১০ লাখ টাকায়। সে ক্ষেত্রে ১ একরের দাম ১০ কোটি এবং ৮ একরের দাম ৮০ কোটি টাকা। কুয়াকাটায় জমি কেনাবেচার সঙ্গে সম্পৃক্ত স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ জমির দামের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এদিকে কুয়াকাটায় জমি কিনে রিসোর্ট করার বিসিসির সিদ্ধান্তে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নগরবাসী। বরিশাল জেলা বাম গণতান্ত্রিক জোটের এক বিবৃতিতে বলা হয়, সিটি করপোরেশন পানি শোধনাগার চালুর উদ্যোগসহ সার্বিক জনবান্ধব উন্নয়নের উদ্যোগ না নিয়ে কুয়াকাটায় জমি কিনছে, অথচ বরিশালে কোনো আধুনিক বর্জ্যব্যবস্থাপনা নেই। শহরের মধ্যে ৫৮ বর্গকিলোমিটার জায়গাজুড়ে খোলা জায়গায় বর্জ্য ফেলা হয়। অচল হয়ে থাকা দুটি পানি শোধনাগার আজ পর্যন্ত চালু হয়নি। বহু রাস্তাঘাট-ড্রেন সংস্কার করা হয়নি। এসব বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া অতি জরুরি হলেও বাজেট ঘাটতির কথা বলে কোনো কাজ করা হচ্ছে না।
আরও পড়ুন
গরিবের প্লট বরাদ্দ পেলেন ধনাঢ্যরা
আমড়া উৎপাদনে শীর্ষে পিরোজপুর, মৌসুমে শতকোটি টাকার বিক্রি
রাসিকের দূষণে ধুঁকছে প্রমত্তা বারনই নদী
আবাসিক এলাকায় গ্যাসের ডিপো, ঝুঁকিতে স্থানীয়রা
স্থানীয় বাসিন্দা কাজী মিজানুর রহমান বলেন, নগরীতেই বহুমুখী সংকট। তার মধ্যে কী করে তারা কুয়াকাটায় রিসোর্ট স্থাপনের মতো উচ্চাভিলাষী প্রকল্পের কথা চিন্তা করে। নগরী থেকে যানজট দূর করতে বাস টার্মিনাল অপসারণ করতে পারছে না, যথাযথ বর্জ্যব্যবস্থাপনা নেই, পর্যাপ্ত রাস্তাঘাট নেই। নাগরিক সুযোগ- সুবিধার কথা চিন্তা না করে বিলাসিতার জন্য রিসোর্ট করতে চাইছে। আশা করি, তারা এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে।
জেলা বাসদের সদস্যসচিব মনীষা চক্রবর্তী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় একজন প্রশাসক এভাবে বিপুল অর্থ খরচ করে কুয়াকাটায় রিসোর্ট করতে পারেন না। দেশের এত আর্থিক সংকটের মধ্যে সরকার এ ধরনের বিলাসী প্রকল্প হাতে নিতে বিসিসিকে অনুমতি দিয়েছে কি না, তাও স্পষ্ট করেনি কর্তৃপক্ষ। নিজেদের সীমানার বাইরে জমি কিনতে চাইলে সরকারের পূর্বানুমোদনের প্রয়োজন হয়। অথচ এটি নেওয়া হয়েছে কিনা, তা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়নি। আমরা এ ধরনের প্রকল্প চাই না।
এ ব্যাপারে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল বারী বলেন, কুয়াকাটায় রিসোর্ট করা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের দাবি। গত ২০ মার্চ পরিষদের মাসিক সাধারণ সভায় সেখানে জমি কেনার সিদ্ধান্ত অনুমোদন হয়। তাই কমপক্ষে ৩ একর জমি কেনার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। রিসোর্ট ভাড়া দিলে বিসিসির আয় বাড়বে।
এইচআরএস/কেএইচকে/এএসএম

 1 day ago
                        8
                        1 day ago
                        8
                    








 English (US)  ·
                        English (US)  ·