নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টান নিধন চলছে, ট্রাম্পের দাবি কতটা সত্য?

8 hours ago 4

নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টান নিধন চলছে বলে সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই কথিত হত্যাযজ্ঞ আটকাতে প্রয়োজনে মুসলিমপ্রধান দেশটিতে সামরিক অভিযানের হুমকিও দিয়েছেন তিনি। ফলে প্রশ্ন উঠছে, নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টান নিধন চলছে? এ নিয়ে ট্রাম্পের দাবি কতটা সত্য?

ট্রাম্পের হুমকি, নাইজেরিয়ার প্রতিবাদ

নাইজেরিয়ায় কথিত খ্রিষ্টান নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ট্রাম্পের দেওয়া সামরিক হুমকির তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে দেশটির সরকার। নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা টিনুবুর মুখপাত্র ড্যানিয়েল বাওলা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে কোনো সামরিক অভিযান চালাতে পারে না, কারণ নাইজেরিয়া একটি স্বাধীন রাষ্ট্র।

গত রোববার (২ নভেম্বর) মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাওলা বলেন, ট্রাম্পের এই সামরিক হুমকি বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন নির্ভর এবং তার সাধারণ কৌশলেরই অংশ—প্রথমে চাপ সৃষ্টি করে আলোচনার টেবিলে টানার চেষ্টা।

এর আগে, গত শনিবার ট্রাম্প দাবি করেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর হামলা বন্ধ না হলে তিনি দেশটিতে সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, যদি নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের হত্যাযজ্ঞ চলতে দেয়, যুক্তরাষ্ট্র সব ধরনের সহায়তা বন্ধ করবে, এমনকি প্রয়োজনে সেই দেশটিতে ‘অস্ত্রসহ অভিযান’ চালিয়ে ‘মুসলিম সন্ত্রাসীদের’ নিশ্চিহ্ন করবে।

ট্রাম্প আরও ঘোষণা দেন, নাইজেরিয়াকে তিনি ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছেন। যেসব দেশ ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনে ব্যর্থ, তাদের জন্য এটি যুক্তরাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক চিহ্নিতকরণ।

ট্রাম্পের দাবি কতটা সত্য?

নাইজেরিয়া ট্রাম্পের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। টিনুবু সরকার বলেছে, খ্রিষ্টান ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই দেশটির নিরাপত্তাহীনতার শিকার। ধর্ম নয়, বরং ভৌগোলিক অবস্থানই অনেক সময় নির্ধারণ করে কারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এপি’র অনুসন্ধানেও দেখা গেছে, দেশটিতে খ্রিষ্টানদের পাশাপাশি মুসলিমরাও নিহত হচ্ছেন।

টিনুবুর মুখপাত্র বাওলা বলেন, নাইজেরিয়ায় সামরিক পদক্ষেপের মতো বিষয় দুই দেশের নেতার সমঝোতার ব্যাপার। যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে এমন কিছু করতে পারে না।

নাইজেরিয়ার খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রধান যোসেফ হায়াবও বলেছেন, খ্রিস্টান নিধনের অভিযোগ অতিরঞ্জিত। তবে তিনি স্বীকার করেন, সংঘাতপ্রবণ এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করতে সরকারকে আরও পদক্ষেপ নিতে হবে।

‘ধর্মীয় সহিংসতা নয়, সামাজিক বাস্তবতা’

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়া বহু বছর ধরে সন্ত্রাস ও গোষ্ঠীগত সহিংসতায় জর্জরিত। দেশটির উত্তরাঞ্চলে সন্ত্রাসী সংগঠন বোকো হারাম এবং অস্ত্রধারী গোষ্ঠীগুলোর হামলায় দুই সম্প্রদায়েরই প্রাণহানি ঘটছে।

গবেষক তাইও হাসান আদেবায়ো বলেন, এই সহিংসতা ধর্মীয় নয়, বরং জটিল সামাজিক ও ভৌগোলিক বাস্তবতার ফল। কে শিকার হবে, তা অনেকাংশে নির্ভর করে কে কোথায় থাকে তার ওপর।

কী পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার?

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নাইজেরিয়ায় নিরাপত্তা বাহিনীর নেতৃত্বে পরিবর্তন এনেছেন প্রেসিডেন্ট টিনুবু। সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ঘাঁটি লক্ষ্য করে বিমান হামলাও চালানো হচ্ছে।

লাগোসভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এসবিএম ইন্টেলিজেন্সের বিশ্লেষক চেতা নওয়াঞ্জে বলেন, অত্যধিক অব্যবস্থা ও দোষীদের শাস্তিহীনতা রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার বড় উদাহরণ হয়ে উঠেছে।

গবেষক তাইও হাসানের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই সমালোচনা ও চাপ হলো নাইজেরিয়ার দীর্ঘদিনের নিরাপত্তা ব্যর্থতার ফল। তাই দেশটি যদি দ্রুত অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা জোরদার না করে, তবে বাইরের শক্তির হস্তক্ষেপ ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়বে।

সূত্র: এপি
কেএএ/

Read Entire Article