নাটোর সদরের চাঁদপুরে অবস্থিত আমজাদ খান চৌধুরী মেমোরিয়াল হাসপাতালে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়েছে। আগামী ১৭ মে এই ক্যাম্পে নাক, কান, গলার সাধারণ রোগসহ জিহ্বা, মুখ গহ্বর, শ্বাসনালি, থাইরয়েড, লালাগ্রন্থির রোগ ও ক্যানসারের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হবে।
দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা উপস্থিত থাকবেন। ক্যাম্পটি শুরু হবে সকাল ১০টায়। চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। চাঁদপুরের গোরস্থান বাজার এলাকায় অবস্থিত আমজাদ খান চৌধুরী মেমোরিয়াল হাসপাতাল বিভিন্ন সময় এ ধরনের বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবার আয়োজন করে।
আমজাদ খান চৌধুরী মেমোরিয়াল হাসপাতালের কো-অর্ডিনেটর ডা. ফাবলিহা লোপা জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাতের পাশাপাশি এই ক্যাম্পে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করারও ব্যবস্থা থাকবে। পরীক্ষার ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ের ব্যবস্থা রাখবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এছাড়া কারও অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনীয়তা থাকলে পরে সে বিষয়েও চিকিৎসকরা যথাসাধ্য সহায়তা করবেন বলে জানান তিনি।

অ্যাপয়েনমেন্টের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. লোপা জানান, সরাসরি গিয়েও রোগীরা ডাক্তার দেখাতে পারবেন। তবে পরিকল্পনার সুবিধার্থে আমরা সবাইকে অনুরোধ করছি যেন তারা আমাদের হটলাইনে (০১৭০৪১৩৩১৩৪) ফোন করে অ্যাপয়েনমেন্ট নেন। এতে বিপুল সংখ্যক রোগীকে সঠিকভাবে চিকিৎসাসেবা দিতে সুবিধা হবে।
জানা যায়, ক্যাম্পটিতে চিকিৎসাসেবা দেবেন—জাতীয় নাক কান গলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু হানিফ; মেডিকেল কলেজ ফর ওমেন্সের নাক কান গলা-হেড অ্যান্ড সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক (অব.) ডা. নাসিম ইয়াসমিন; নীলফামারী মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মাহবুবুল আলম চৌধুরী; বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. এম এ ওয়াহেদ; ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক কান গলা বিভাগের ডা. মো. শফিউল আকরাম; এমএইচ শমরিতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোফাজ্জল হোসেন তাফসির; শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. সৈয়দ ছানাউল ইসলাম এবং ডেন্টাল সার্জন ডা. নুসরাত চৌধুরী।
আরও থাকবেন—ইউনাইটেড হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ; নিউক্লিয়ার মেডিসিন ও আল্ট্রাসনোগ্রাম বিশেষজ্ঞ ডা. মতিউর রহমান খান; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাদিয়া শারমিন; জাতীয় নাক কান গলা ইনস্টিটিউটের ডিএলও ডা. মো. আবুল হোসেন; মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজের ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডা. মো. রহমত উল্লাহ; জাতীয় নাক কান গলা ইনস্টিটিউটের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. মো. আশরাফুল ইসলাম; জাতীয় নাক কান গলা ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার ডা. মো. শিহাব আসফার খান।

- আরও পড়ুন
- রক্তের গল্পে বাঁধা জীবন: থ্যালাসেমিয়া দিবসে এক নতুন প্রশ্ন
- সচেতনতা হোক নীরব ঘাতকের বিপক্ষে
এছাড়া ক্যাম্পে উপস্থিত থাকবেন—হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসার সাপোর্ট ফাউন্ডেশনের এক্সিকিউটিভ মেম্বার ও সাবেক জেলা জজ তানজিনা ইসমাইল, হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসার সাপোর্ট ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. মোয়াজ্জেম হোসেন ।
মেডিকেল ক্যাম্পটি চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পাশাপাশি মানুষের মধ্যে হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতেও কাজ করবে। হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসার বলতে মূলত নাক, সাইনাস, চোয়াল, মুখ-গহ্বর, জিহ্বা, খাদ্যনালি, স্বরনালি, গলার ক্যানসার এবং থাইরয়েড গ্রন্থির ক্যানসারকে বোঝায়।
যে কারণে এই রোগ হয়
শরীরের কোষের ডিএনএর মধ্যে থাকা জেনেটিক ম্যাটেরিয়ালের পরিবর্তন হলে কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হয় এবং তা মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এটিকেই ক্যানসার বলে। জেনেটিক ম্যাটেরিয়ালের এই পরিবর্তন বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যেমন- ধূমপান, সাদা জর্দা, গুল, সুপারি, চুন ইত্যাদি মাদকজাতীয় দ্রব্য, ভাইরাস, দীর্ঘমেয়াদি ইনফেকশন, রেডিয়েশন বা তেজস্ক্রিয়তা, অস্বাভাবিক যৌন আচরণ ইত্যাদি। এছাড়া পুষ্টির অভাব ও বংশগত কারণেও নাক কান গলার বিভিন্ন রোগ হতে পারে।
যেসব উপসর্গ বা লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন
১. নাক দিয়ে রক্ত মিশ্রিত সর্দি পড়া, নাক বন্ধ থাকা, নাকে ঘা, নাকে টিউমারজাতীয় মাংস বৃদ্ধি।
২. চোয়াল ফুলে যাওয়া, নাকের সমস্যা হওয়া, দাঁতের ব্যথা হওয়া, দাঁত পড়া।
৩. মুখের ভেতরের তালু ফুলে যাওয়া, হাঁ করতে অসুবিধা হওয়া, চোখের সমস্যা হওয়া।
৪. জিহ্বায় ঘা, মাংস বৃদ্ধি, খেতে কষ্ট, ব্যথা, গলা ফুলে যাওয়া।
৫. গালের ভেতরে ঘা, মাংস বৃদ্ধি, ব্যথা, খাওয়ার অসুবিধা, রক্তক্ষরণ।
৬. খাবার খেতে কষ্ট হওয়া, ব্যথা, বমি।
৭. কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন, কথা বলতে কষ্ট হওয়া ও ব্যথা।
৮. থাইরয়েড গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া।
এসব উপসর্গ যদি দুই সপ্তাহের বেশি থাকে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসার থেকে বাঁচতে করণীয়
১. ধূমপানসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য পরিত্যাগ করা।
২. পুষ্টিকর খাবার—শাক-সবজি, ফল-মূল বেশি করে খাওয়া।
৩. কোনো উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে দেরি না করা।
৪. রোগ নির্ণয়ের পরে সঠিক চিকিৎসা নিতে অবহেলা না করা।
৫. অপচিকিৎসা ও কুচিকিৎসা থেকে দূরে থাকা।
এএমপি/এসইউ/জিকেএস

5 months ago
28









English (US) ·