নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র মামদানি, ভাঙলেন শতাব্দীর সর্বকনিষ্ঠের রেকর্ড

2 days ago 2
নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র মামদানি, ভাঙলেন শতাব্দীর সর্বকনিষ্ঠের রেকর্ড

নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র মামদানি, ভাঙলেন শতাব্দীর সর্বকনিষ্ঠের রেকর্ড

বিশ্ব

অনলাইন ডেস্ক 2025-11-05

যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম শহর নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী ৩৪ বছর বয়সী জোহরান মামদানি। এ জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি শহরটির ইতিহাসে নির্বাচিত প্রথম মুসলিম এবং নিউইয়র্ক সিটির ১১১তম মেয়র নির্বাচিত হলেন। পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকটি ইতিহাস গড়েছেন। গত একশত বছরেও বেশি সময়ের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে শহরটির মেয়রের চেয়ারে বসছেন মামদানি।এতদিন নিউইয়র্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ মেয়রের খেতাব ছিল হিউ জে গ্রান্টের, যিনি ১৮৮৯ সালে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। এছাড়া প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত এবং আফ্রিকায় জন্মগ্রহণকারী হিসেবেও নিউইয়র্কের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ড গড়েন মামদানি।

নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমো ও রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে পরাজিত করে এ ইতিহাস গড়লেন নিজেকে ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট পরিচয় দেওয়া মামদানি। একই সঙ্গে অঙ্গরাজ্যের আইনপ্রণেতা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট পার্টির সামনের সারির নেতৃত্বে পা রাখলেন।

নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভোটের প্রাথমিক ফলাফলে জোহরান মামদানি ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৬৪৬ ভোট (৫১ শতাংশ), অ্যান্ড্রু কুওমো ৮ লাখ ৫৪ হাজার ৭৮৩ ভোট (৩৯ শতাংশ) এবং কার্টিস স্লিওয়া ১৪ হাজার ৬২৬ (৭.১ শতাংশ) ভোট পেয়েছেন। নিউইয়র্ক সিটি বোর্ড অফ ইলেকশনস জানিয়েছে- পাঁচ দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে এবার ভোটার উপস্থিতি ছিল সর্বোচ্চ।

জোহরান মামদানি মামদানি এখনও সমর্থকদের উদ্দেশ্যে সরাসরি ভাষণ না দিলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি সাবওয়ে ট্রেনের দরজা খোলা হচ্ছে যেখানে বলা হচ্ছে; তার পরবর্তী গন্তব্য সিটি হল।

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়ে ভোট চলে রাত ৯টা পর্যন্ত মেয়র নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। শেষ মুহূর্তে নির্বাচনে আসে নাটকীয় মোড়। ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থিতার দৌড়ে জোহরান মামদানির কাছে হেরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া অ্যান্ড্রু কুওমোকে সমর্থন জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর দল রিপাবলিকান পার্টি কার্টিস স্লিওয়াকে প্রার্থী করেছে। ট্রাম্পের সমর্থনের কারণে রিপাবলিকান ভোটাররা কুওমোর দিকে ঝুঁকতে পারেন, যা নতুন এক সমীকরণ দাঁড় করাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। 

নিউইয়র্কের নির্বাচন শেষ পর্যন্ত মামদানি বনাম ডোনাল্ড ট্রাম্পের লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। এদিন সকালেই কুইন্সের অ্যাস্টেরিয়ার আর্টস হাই স্কুল কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেন মামদানি। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী রামা দুয়াজি। ভোট দিয়েছেন কুওমো এবং স্লিওয়াও। তিন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণী এ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। এর আগে আগাম ভোট দেন নিউইয়র্কের সাত লাখ ৩৫ হাজার বাসিন্দা, যা গত রোববার শেষ হয়। এ ভোটের হার ২০২১ সালের নির্বাচনের চেয়ে চার গুণেরও বেশি। 

দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, সবকিছু ছাপিয়ে শেষ দিনের প্রচারণার ছিল নানা নাটকীয়তা। মেয়র থাকাকালে বিদ্রোহী ডেমোক্র্যাট অ্যান্ড্রু কুওমোর সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পর্ক বেশ খারাপ ছিল। কিন্তু ভোটের মাঠে আকস্মিক তাঁকেই সমর্থন করে বসেন ট্রাম্প। মেয়র হওয়ার দৌড়ে নিজ দল রিপাবলিকান পার্টির কার্টিস স্লিওয়াও আছেন। কিন্তু তাঁকে উপেক্ষা করে কুওমোকে সমর্থন মামদানিকে ঠেকাতে ট্রাম্পের মরিয়া চেষ্টার ইঙ্গিত দেয়। 

কুওমো নিউইয়র্কের সাবেক মেয়র। তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার নানা অভিযোগ রয়েছে। তিনি শহরটির মেয়র থাকাকালে সেখানকার আদালতে ট্রাম্পের মামলা চলে। এ নিয়ে ট্রাম্প বিভিন্ন সময় সরাসরি কুওমোর সমালোচনা করেছেন। কিন্তু অনেকটা ইউটার্ন নিয়ে শেষ মুহূর্তে ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, ‘আপনি ব্যক্তিগতভাবে অ্যান্ড্রু কুওমোকে পছন্দ করেন বা না করেন, আপনার সামনে আর কোনো পছন্দ নেই। আপনাকে অবশ্যই তাঁকে ভোট দিতে হবে। আশা করি, তিনি চমৎকার কাজ করবেন। আর তিনি এটা করার সামর্থ্য রাখেন, মামদানি নয়।’ 

বিবিসি জানায়, ট্রাম্পের সমর্থনের কড়া জবাব দিয়েছেন মামদানি। তিনি বলেন, কুওমোকে সমর্থন করেছেন ট্রাম্প ও তাঁর দলের লোকজন। তিনি নিউইয়র্ক সিটি বা নিউইয়র্কের বাসিন্দাদের সেরা মেয়র হবে না, তিনি হবেন ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসনের সেরা মেয়র। 

জোহরান মামদানি জিতলে কেন্দ্রীয় তহবিল বন্ধ করে দেবেন বলেও ঘোষণা দেন ট্রাম্প। এর আগে গত রোববার এক সাক্ষাৎকারে তিনি তহবিল বন্ধের হুমকি দেন। তখন তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিউইয়র্ককে অধিক অর্থ দেওয়া আমার পক্ষে কঠিন হতে যাচ্ছে।’ এ প্রসঙ্গে মামদানি বলেন, এটা কোনো নিয়ম নয়, হুমকি।

গত সোমবার দুই প্রতিদ্বন্দ্বী জোহরান মামদানি ও অ্যান্ড্রু কুওমো শেষ সভা-সমাবেশ করেন। মামদানিকে নিউইয়র্কের অভিবাসীদের পাশাপাশি স্বল্প আয়ের মানুষ সমর্থন জানাচ্ছেন। মঙ্গলবার ভোটকেন্দ্রে এর প্রতিফলন দেখা গেছে। ৪৬ বছর বয়সী শিল্পী অধ্যাপক ম্যাট মার্কেল হেস তাঁর ১১ বছরের ছেলেকে নিয়ে কেন্দ্রে এসে মামদানিকে ভোট দেন। তিনি জানান, ছোট ব্যবসা, ছোট ছোট উদ্যোগের প্রতি মামদানির সমর্থন ও বিনামূল্যে শিশুসেবা দেওয়ার আশ্বাস তিনি খুব পছন্দ করেছেন।

কার্যত মামদানি নিউইয়র্কে স্বল্প আয়ের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছেন। তিনি নিজে অভিবাসী এবং অভিবাসী বাবা-মায়ের সন্তান। তাই নিউইয়র্কের অভিবাসীরা তাঁকে সমর্থন করছেন। মামদানিও তাদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করার অঙ্গীকারের কথা জানিয়েছেন। অন্যদিকে, শহরটির তথাকথিত অভিজাত শ্রেণি কুওমোর পক্ষে। 

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এটা প্রথম বড় কোনো নির্বাচন। নিউইয়র্ক ছাড়াও ভার্জিনিয়া ও নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যে গভর্নর নির্বাচন হচ্ছে। এসব নির্বাচন তাঁর দলের জনপ্রিয়তার জন্য এক পরীক্ষা। এমন একসময় এ ভোট হচ্ছে, যখন মার্কিন সরকারের অচলাবস্থা বা শাটডাউন ৩৫তম দিনে পৌঁছেছে। এতে ভুগছেন হাজার হাজার ফেডারেল কর্মী।

© Samakal
Read Entire Article