বাংলাদেশ থেকে নেপাল হয়ে কানাডা, ইউরোপ কিংবা অন্য দেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে এক মানবপাচার চক্র বাংলাদেশি তরুণদের ফাঁদে ফেলছে। প্রবাসে পাঠানোর নামে নেপালে নিয়ে গিয়ে তরুণদের জিম্মি করছে এবং নির্যাতন করে পরিবার থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করছে চক্রটি। সম্প্রতি এভাবে প্রতারিত তিন বাংলাদেশিকে উদ্ধার করেছে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম।
রোববার (২ নভেম্বর) ব্র্যাকের মাইগ্রেশান প্রোগ্রাম মিডিয়া এলার্টে এসব তথ্য জানিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিদেশগামীদের সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছে বেসরকারি এ সংস্থাটি।
এ বিষয়ে ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান জানান, সম্প্রতি সিলেট থেকে এক ব্যক্তির মাধ্যমে তারা খবর পান- তার ভাইসহ তিনজনকে কানাডায় পাঠানোর প্রলোভন দেখানো হয়। প্রলোভন ছিল, কানাডায় পৌঁছানোর পরই সব খরচ পরিশোধ করতে হবে। সেই অনুযায়ী গত ১৩ অক্টোবর ওই তিনজনকে নেপালে নেওয়া হয়। সেখানে একটি হোটেলে রেখে চক্রটি তাদের পাসপোর্ট ও মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাখে। এরপর চক্রটি জিম্মিদের পাসপোর্টে কানাডার ভিসা ও টিকিট লাগিয়ে সেই ছবি পরিবারের কাছে পাঠায়।
পরবর্তীতে তারা কানাডায় পৌঁছেছে দাবি করে কানাডার একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্থানীয় দালালকে পাঁচ লাখ টাকা দিতে বলে। এরপর প্রত্যেকের কাছে আরও ১২ লাখ টাকা দাবি করা হয়। পরিবার কথা বলতে চাইলে জিম্মিদের অস্ত্রের মুখে কথা বলতে বাধ্য করা হয়— ‘আমরা কানাডায় পৌঁছে গিয়েছি। কোম্পানির পক্ষ থেকে ১৫ দিনের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’ কিন্তু একজনের পরিবারের সন্দেহ হলে তারা স্থানীয় দালালের কাছে ঘটনা জানতে চান। একজনের পরিবার তার ভাইকে কানাডায় তাদের পরিচিত ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দিলে এখনই ১২ লাখ টাকা পরিশোধের আশ্বাস দেয়। কিন্তু পাচারকারীরা তখন টালবাহানা শুরু করে এবং নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়ে দ্রুত টাকা পরিশোধ করতে বলে।
আরও পড়ুন
সচল হচ্ছে ইরাকের শ্রমবাজার, যাওয়ার অপেক্ষায় ২ হাজার কর্মী
রাশিয়ার ‘যুদ্ধফাঁদে’ কেউ নিহত কেউ নিখোঁজ
ব্র্যাক জানিয়েছে, পরিবারগুলো গত ২৬ অক্টোবর পুরো ঘটনা ও বিস্তারিত সব তথ্য জানিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে উদ্ধারের আবেদন করে। এরপর ব্র্যাকের পক্ষ থেকে সিআইডি (অপরাধ তদন্ত বিভাগ) ও নেপালে যোগাযোগ করা হয়। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা হয়। সেদিন রাতেই সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ ও সিআইডির যৌথ অভিযানে স্থানীয় এক দালালকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের খবর নেপালের পাচারকারীদের কাছে পৌঁছালে তারা ওই দিন রাত ৩টার দিকে কাঠমান্ডু বিমানবন্দরের পাশে ওই তিনজনকে ছেড়ে দেয়। ৩০ অক্টোবর তারা ঢাকায় ফিরলে ব্র্যাকের ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম তাদের সহায়তা করে। এরপর গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা তাদের জবানবন্দি নেন।
ব্র্যাক বলছে, শুধু কানাডা নয়- ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে নেওয়ার কথা বলে নেপালে নিয়ে একইভাবে আটকে রেখে অস্ত্রের মুখে ভয়ভীতি ও নির্যাতন করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটছে। নেপালে যেতে যেহেতু ভিসা লাগে না এবং অন-অ্যারাইভাল ভিসা পাওয়া যায়, তাই পাচারকারীরা প্রথমে নেপালকেই বেছে নেয়।
বিশেষ করে ‘কানাডায় পৌঁছানোর পর টাকা পরিশোধ করা যাবে’—এমন প্রলোভনের ফাঁদে পড়ছেন অনেকেই। নেপালের পুলিশ এমন ঘটনায় বিভিন্ন সময়ে একাধিক বাংলাদেশিকে আটক করলেও এ ধরনের প্রতারণা থেমে নেই। কাজেই সাধারণ বিদেশগামীদের যেমন সচেতন হওয়া জরুরি, তেমনই এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলে দ্রুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও জানাতে হবে। পাশাপাশি বিদেশে বিপদে পড়া যে কেউ ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারে যোগাযোগ করতে পারেন। আন্তর্জাতিক ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে ব্র্যাক তাদের সহায়তা ও পুনর্বাসনে কাজ করবে।
আরএএস/কেএসআর

8 hours ago
9









English (US) ·