পানিতে ডুবে মারা গেছে ৩ বছর বয়সী একমাত্র কন্যা আরওয়া। খবর শুনে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসী বাবা ওসমান গণি শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে ছুটে এলেন হেলিকপ্টারে। আদরের কন্যাকে শেষবারের মতো দেখলেন, ছুঁয়ে আদর করলেন। অঝোরে নিজে কাঁদলেন, কাঁদালেন সবাইকে।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) হৃদয়বিদারক এমন দৃশ্যের অবতারণা হয় কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামে।
স্থানীয় গুণবতী স্কুল মাঠে অবতারণ করা হেলিকপ্টার দেখতে উৎসুক জনতার ভিড়ে ছিল না হৈ-হুল্লোড়, সবাই দেখলেন হেলিকপ্টার থেকে নেমে ক্ষিপ্ত গতিতে এক বাবার ছুটে যাওয়া।
স্থানীয়রা জানায়, বাবা ওসমান গণি বাদল গত ১৫ বছর আফ্রিকা থাকেন। সেখানে গড়ে তুলেছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বিয়ে করেছেন বছর পাঁচেক আগে। তিন বছর আগে কন্যাসন্তানের বাবা হন তিনি, আদর করে মেয়ের নাম রাখেন আরওয়া আক্তার। চলতি বছর ছুটিতে এসে ৮ মাস মেয়ের সঙ্গে কাটিয়ে গত আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকা ফিরে যান।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহষ্পতিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে দাদা শফিকুর রহমান বাড়ির বাইরে যাচ্ছিলেন। তখন দাদার পিছু নেয় শিশু আরওয়া। এ সময় দাদা তার আদরের নাতনিকে বসতঘরের দিকে পাঠিয়ে নিজের কাজে চলে যান। কিছুক্ষণ পর বাড়িতে ফিরে দেখেন, নাতনিকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। পরে স্বজনেরা সবাই মিলে চারদিকে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে বাড়ির পাশের পুকুরে আরওয়ার নিথর দেহ ভেসে ওঠে।
এ খবর প্রবাসী ওসমান গণিকে জানানো হলে তিনি একমাত্র সন্তানকে শেষ বিদায় জানাবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। বাবার ইচ্ছা অনুযায়ী শিশু আরওয়ার লাশ রাখা হয় লাশবাহী ফ্রিজিং ভ্যানে।

শুক্রবার সকালে রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান ওসমান গণি। সড়কপথে বাড়িতে পৌঁছাতে অনেক সময় লাগতে পারে, এ জন্য তিনি হেলিকপ্টার ভাড়া করে সকাল ১০টায় পাশের গুণবতী ডিগ্রি কলেজ মাঠে নামেন।
পরে বাড়িতে গিয়ে একমাত্র সন্তানের লাশ দেখতে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ওসমান। বেলা ১১টায় জানাজা শেষে আরওয়ার লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
ওসমান গণির বন্ধু মো. ইস্রাফিল কালবেলাকে বলেন, মেয়েকে শেষবারের মতো দেখার ইচ্ছাপোষণ করা আমরা আরওয়াকে লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে রাখি।
ওসমান গণির ফুফা সাইদুল বলেন, মেয়ে মৃত্যুর খবরটি আমরা বৃহষ্পতিবার দুপুর ১২টায় ওসমান গণিকে জানাই।
একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে কন্যাজড়িত কণ্ঠে প্রবাসী ওসমান গণি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বাড়ি থেকে খবর পাই, আমার মেয়ে পানিতে ডুবে মারা গেছে। মেয়েটার সঙ্গে হাজারো স্মৃতি। আরওয়া ভাঙা ভাঙা শব্দে আমার সঙ্গে কথাও বলত। একমাত্র সন্তানের মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না। তাই সন্তানকে নিজ হাতে দাফন করতে বাড়িতে আসার সিদ্ধান্ত নিই।’

12 hours ago
10









English (US) ·