ফরিদপুরের হাট-বাজারগুলোতে হঠাৎ বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। খুচরা বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ২৫-৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ৯০-১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। তবে প্রতিদিনই বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজের দাম ওঠানামা করছে। এতে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে দেশি পেঁয়াজের কিছুটা সংকট তৈরি হওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আবার আমদানি শুরু হলে পেঁয়াজের দাম নেমে যাবে।
তবে সাধারণ মানুষের অভিযোগ, কৃষকের কাছে পেঁয়াজ নেই। বেশিরভাগ পেঁয়াজ এখন আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের কাছে। ফলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) জেলার সালথা, বোয়ালমারী, সাতৈর, মধুখালী, কানাইপুর বাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে মানভেদে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকায়।
আড়তদাররা বলছেন, ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ থাকায় দেশি পেঁয়াজের ওপর চাপ বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমায় বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।

বোয়ালমারী বাজারের ক্রেতা শামীম প্রধান জাগো নিউজকে বলেন, ‘খুচরা বাজারে ৯০-৯৫ টাকা কেজি দরে ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। দাম বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ রীতিমতো বিপাকে পড়েছে। প্রতিকেজি পেঁয়াজ ২৫-৩০ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে ।’
সালথা উপজেলার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘এভাবে হঠাৎ করে দাম বাড়বে ভাবতেও পারিনি। কয়েক মাস সংগ্রহে রেখে ১৫ দিন আগে ৮০ মণের মতো পেঁয়াজ ২৬০০ টাকা মণ (কেজি ৬৫ টাকা) দরে বিক্রি করে দিয়েছি। এখন শুনি দাম বেড়ে গেছে।’
বোয়ালমারীর টোংরাইল গ্রামের কালিকুমার বালা জাগো নিউজকে বলেন, ‘অনেক লোকসান হয়ে গেলো। প্রায় আড়াইশ মণ পেঁয়াজ ১৫ দিন আগে বিক্রি করে দিয়েছি। অথচ পেঁয়াজের মণ ৪০০০ টাকা (কেজি ১০০ টাকা)।’
তিনি বলেন, ‘এখন আর কৃষকের ঘরে পেঁয়াজ নেই। পেঁয়াজ যা আছে সব আড়তদার-ব্যবসায়ীদের কাছে। তারা সিন্ডিকেট করে দাম কমানো-বাড়ানোর সঙ্গে জড়িত।’
সাতৈর বাজারের ব্যবসায়ী সালাম শেখ বলেন, ‘আমদানি করা লাগবে না। দেশে যে পেঁয়াজ আছে এতেই হয়ে যাবে। তবে ১০০ টাকা পেঁয়াজের কেজি এটা কোনো ঘটনা না। নতুন পেঁয়াজ বাজারে এলে দাম কমে যাবে।’
আরও পড়ুন:
রাজবাড়ীতে দাম বেড়েছে পেঁয়াজের, মণ ৪১০০ টাকা
ঘাটতি থাকলে আমদানি হবে পেঁয়াজ
শীর্ষ উৎপাদন এলাকা পাবনাতেও কেজিতে ৪০ টাকা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম
পেঁয়াজের দামে হঠাৎ মৌসুম শেষের অস্থিরতা
সালথা বাজারের আড়তদার তামিম ট্রেডার্সের মালিক আক্কাছ শেখ। তিনি বলেন, সপ্তাহের ব্যবধানে আড়তে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।দুদিন আগে প্রতিমণ পেঁয়াজ ৩৮০০-৪০০০ টাকা পর্যন্ত কিনেছি। গতকাল থেকে বাজার আবার হ্রাস পেয়েছে। আজ প্রতিমণ বড় ও মাঝারি সাইজের পেঁয়াজ ৩৬০০ টাকা দরে কেনা হচ্ছে।’
দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ সংকটের কারণে দাম বাড়ছে বলে জানান মধুখালী বাজারের আড়তদার মো. আলম শেখ।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ফরিদপুরের সহকারী পরিচালক মো. মাহমুদুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসতে আরও দেড় মাসের মতো সময় লাগবে। সেক্ষেত্রে এ কয়েকদিন পেঁয়াজের বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে সিন্ডিকেট ও বাজার অস্থিরতার বিষয়ে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহাদুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, কৃষকরা এরইমধ্যে হালি পেঁয়াজ রোপণের জন্য বীজ থেকে চারা তৈরি শুরু হয়েছেন। নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে সময় লাগবে। এ বছর ফরিদপুরে পাঁচ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
এসআর/জেআইএম

8 hours ago
4









English (US) ·