বিএনপিকে নিয়ে মোনাফেকি করছে জামায়াত : কায়কোবাদ 

6 hours ago 6
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ জামায়াতের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রেখে বলেছেন, ‘শেখ মুজিব যখন বাকশাল করে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করেছিল, তখন আপনাদের রাজনীতির সুযোগ দিয়েছিল কে? আপনাদের রাজনীতি করার সুযোগ ফিরিয়ে দিয়েছিল জিয়াউর রহমান। অথচ আপনারা এখন সেই বিএনপিকে নিয়ে মোনাফেকি করছেন, মোনাফেকি করা ঠিক নয়।’ শনিবার (৮ নভেম্বর) বিকেলে মুরাদনগরের শ্রীকাইল ইউনিয়ন বিএনপির সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।  এর আগে তার আগমনে বিএনপি নেতাকর্মীদের চেয়েও সাধারণ জনতার উৎসবমুখর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সকাল থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে জড়ো হন। তারা খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও কায়কোবাদকে ‘দাদা ভাই’ সম্বোধন করে স্লোগান দেন। শ্রীকাইল কলেজ মাঠে এই সমাবেশ হয়। কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ বলেন, ‘১৯৯৬ সালে তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিশে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনে দিয়ে নিজেরাই বিপদে পড়েছিল। তাই ২০০১ সালে বেগম জিয়া তাদের আমাদের সঙ্গে এনে ১৮টা সিট দিয়েছিল, যা এখন পর্যন্ত তারা কখনো পায়নি। তারা এতটা অকৃতজ্ঞ হবে ভাবতেও পারিনি। তাদের দুজনকে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছিল বিএনপি সরকার। এই সুযোগে তারা নিজেদের দলকে সংগঠিত করেছে। যাদের কারণে এমন সুযোগ পেয়েছেন, তাদের সম্পর্কে এমন মন্তব্য করা ঠিক নয়।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যদি ক্ষমতায় আসতে পারি, যারা জেল খেটেছেন, মামলা খেয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন তাদের প্রতিদান ইনশাআল্লাহ দেব, তাদের সম্মানি দেওয়া হবে। আমার কলিজাটা ঠান্ডা হয়ে গেছে আজকের শ্রীকাইলের মানুষের উপস্থিতি দেখে। আমি তো আপনাদের কামলা। মুরাদনগরের গরিব মহিলা-পুরুষ হচ্ছে আমার নেতা। আমি তাদের কামলা হয়ে মুরাদনগরে আছি এবং থাকতে চাই। আপনারা আমাকে ৫ বার নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করেছেন। তৃতীয় বার যখন নির্বাচন হয়, তখন হাসিনার সরকার ছিল। সে ঢাকা থেকে বড় বড় সন্ত্রাসী এনেছিল নির্বাচন বানচাল করার জন্য। কিন্তু আল্লাহর রহমতে তারা কিছুই করতে পারেনি।’ কায়কোবাদ বলেন, ‘২০০১ সালে আপনারা আমাকে বিএনপি থেকে নির্বাচিত করেছেন। ২০০৮ সালে নির্বাচনের সময় আমি হজে চলে যাচ্ছিলাম। তখন সবাই আমাকে জিজ্ঞেস করছিল, আপনি চলে গেলে নির্বাচন করবে কে? তখন আমি বললাম পাস করানোর দায়িত্ব আমার আল্লাহর। তিনি আমাকে দেখবেন। তারপর আমি হজ থেকে নির্বাচনের মাত্র ৮-৯ দিন আগে ফিরে এসেছিলাম। ফিরে এসে মাত্র কয়েকটা ইউনিয়নে গিয়েছিলাম। আমার আল্লাহ আমাকে সেই নির্বাচনেও জয়ী করেছেন। এখন সামনে নির্বাচন আসছে। নির্বাচনকে ঘিরে একটি ইসলামী দল অংশ নিয়েছে এবং অনেক দল অংশ নেবে। সেখানে জামায়াতে ইসলামী বিভিন্ন জায়গায় বিএনপিকে নিয়ে নানা কথা বলে বেড়াচ্ছে।’ অতীতের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘২০০১-০৬ সালের মধ্যে টর্নেডোর কারণে শ্রীকাইলে ৩টি ঘর উড়ে গিয়েছিল। তখন আমি লোক পাঠিয়ে তাদের সব প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে দিয়েছিলাম। তাদের ঘর, কম্বল, হাড়ি-পাতিল, সব কিনে দিয়েছিলাম। তখন একজন আমার কাছে গিয়ে বলল, দাদা সবকিছু তো পাইলাম কিন্তু ১০ হাজার টাকা তো পাই নাই। যখন আমি বললাম, কীসের টাকা? আমি তো টাকা দেই নাই। পরে খবর নিয়ে শুনলাম একজন জামায়াতের রাজনীতি করে বলে তাকে জামায়াত থেকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছে। আর কাউকে দেয় নাই। তখন আমি তাদের বললাম, আপনারা একজনকে দিলেন, বাকিরা কি মুসলমান না? তারা কোনো জবাব দিতে পারেনি। সুতরাং আপনারা সাবধানে থাকবেন, তারা অনেক কথা বলবে, অনেকভাবে বুঝানোর চেষ্টা করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মুরাদনগর থেকে শ্রীকাইল, বৃষ্টপুর থেকে শ্রীকাইল, মেটাংগর থেকে শ্রীকাইল, এগুলা রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী ছিল, এগুলা আল্লাহ করাইছে আমার উছিলায়। বিগত ১৭ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা একটাও রাস্তাও করেনি। আমি ক্ষমতায় থাকতে প্রতি বছর টিআর দিয়েছিলাম, কিন্তু ১৭ বছরের টিআর গেল কই। সব মেরে দিয়েছে চোরের দলেরা। আমাকে বরণ করার জন্য নিজেদের পয়সা খরচ করে আপনারা ১ লাখ মানুষ বিমানবন্দরে গিয়েছেন, আমাদের নেতা তারেক রহমানকেও আপনাদের বরণ করে নিতে হবে। আপনারা আগামী নির্বাচনে আমার মা-বোনেরা, ভাইয়েরা, বাবারা, সবাই সকাল সকাল কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে প্রমাণ করবেন ধানের শীষ অতীতের চেয়েও বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছে। আমি বিদেশে থাকতে আমাকে জন্ম দিয়ে লালনপালন করা আমার মায়ের জানাজায় থাকতে পারিনি। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ আপনারা লক্ষাধিক মানুষ জানাজায় উপস্থিত হয়ে আমাকে শান্ত করেছেন। আমাদের শ্রীকাইলের যে ভাইয়েরা বিগত ১৭ বছরে বিদায় নিয়েছে তাদের জন্য দোয়া করবেন। অসংখ্য নেতাকর্মী জেল খেটেছে। আল্লাহ তাদের উপর রহম করুন। ইনশাআল্লাহ শ্রীকাইলে আপনাদের কামলা হিসেবে আবারও আসব এবং কথা বলব।’  মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন অঞ্জনের সভাপতিত্বে ও শ্রীকাইল ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসবক দলের সদস্য সচিব নাজমুল হাসান ও শ্রীকাইল কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি মো. এনামুল হকের সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন শ্রীকাইল ইউনিয়ন বিএনিপর সভাপতি মো. ইসাহাক মুন্সী।  আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূইঁয়া, সহসাংগঠিনিক সম্পাদক মো. মোস্তাক মিয়া, কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. আক্তারুজামান সরকার, সদস্য সচিব এএফএম তারেক মুন্সী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কাজী জুননুন বসরী।  এ সময় উপস্থিত ছিলেন- কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সদস্য মোল্লা গোলাম মহিউদ্দীন, মুরাদনগর উপজেলা বিএনিপর সদস্য সচিব মোল্লা মজিবুল হক, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. কামাল উদ্দীন ভূইয়া, সৈয়দ আমজাদ আলী তসু, শাহ আলম সরকার, মো. সজল খান, ফারুক সরকার মজিব, বিএনপি নেতা আব্দুল মোমেন, মহিলা দলের শামীমা আক্তার রুবি, কাজী তাহিমিনা আক্তার, চৌধুরী রকিবুল হক শিপন, মো. গিয়াস উদ্দিন, আব্দুর রাজ্জাক, মো. সোহেল সামাদ, মো. মাসুদ রানা, নাসির উদ্দীন, মো. ফারুক আহমেদ বাদশা, মো. খাইরুল হাসান, সুমন মাস্টার, নাজিম, গোলাম হাক্কানী, মো. জয়নাল আবেদিন, মো. আবুল হোসেন, মাহবুব হাসান মালু, নারায়ন চন্দ্র, এমরান খান, শেখ আবুল হাসেম, আলমগীর সরকার, আবু মুসা, আশরাফুল ইসলাম বাবু, শিপন প্রধান, এনামুল হক, ফারুক ভুইয়া, মো. রাসেল, মো. শফিক, মেহেদী হাছান রবিন।  সম্মেলনের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন জাহিদুল ইসলাম।
Read Entire Article