বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বড় দুঃসংবাদ দিলো অস্ট্রেলিয়া। দেশটির কেন্দ্রীয় (ফেডারেল) সরকার দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তির ওপর সীমা আরোপ ও দেশীয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশটির শিক্ষামন্ত্রী জেসন ক্লেয়ার সম্প্রতি বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত ‘টেকসই উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা’ বজায় রাখার জন্য জরুরি।
স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্লেয়ার বলেন, আন্তর্জাতিক শিক্ষা অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতি ও কূটনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অবশ্যই স্থানীয় শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং টেকসই সীমার মধ্যে পরিচালিত হতে হবে।
গত বছরের আগস্টে ঘোষিত এই নীতিমালার অধীনে ২০২৫ সালে অস্ট্রেলিয়ায় নতুন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তির সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে পৃথকভাবে এই সীমার বরাদ্দ দেওয়া হবে। সরকারের দাবি, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে অভবাসন পরিস্থিতিকে করোনা মহামারির আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা এবং আবাসন ও অবকাঠামোর ওপর চাপ কমানোই মূল লক্ষ্য।
বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় ৭ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন, যা মহামারির আগের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ বেশি।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আপত্তি
সরকার এই পদক্ষেপকে ভারসাম্যপূর্ণ বলে দাবি করলেও অস্ট্রেলিয়ার উচ্চশিক্ষা খাত এটিকে ‘অতিরিক্ত সীমাবদ্ধতা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। বিশেষ করে দেশটির ঐতিহ্যবাহী স্যান্ডস্টোন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বলছে, এই সীমা অস্ট্রেলিয়ার আন্তর্জাতিক সুনাম ক্ষুণ্ণ করবে ও অর্থনীতিতে শত শত কোটি ডলারের ক্ষতি বয়ে আনবে।
সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থী বিদেশি, এই বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ভর্তির প্রস্তাবিত সীমা কার্যকর হলে ২০২৫ সালে জাতীয় অর্থনীতিতে প্রায় ৪ দশমিক ১ বিলিয়ন বা ৪১০ কোটি অস্ট্রেলিয়ান ডলার ক্ষতি হতে পারে ও ২২ হাজার চাকরি হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।
তবে সরকার বলছে, এটি কোনো শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নয়, বরং সংস্কারমূলক উদ্যোগ। মহামারির পর আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি দ্রুত বেড়ে যাওয়ায়, বিশেষ করে বেসরকারি কারিগরি কলেজগুলোতে, অযাচিত ও অনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান অভিযোগের মুখে পড়েছে যে তারা পর্যাপ্ত ভাষাগত বা একাডেমিক যোগ্যতা ছাড়াই বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি করছিল।
এ কারণে সরকার ইংরেজি দক্ষতার মান বাড়ানো, পুনরায় ভিসা আবেদনকারীদের জন্য কঠোর শর্ত আরোপ ও ‘অবিশ্বস্ত শিক্ষা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর’ বিরুদ্ধে অভিযান- এসব পদক্ষেপ নিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষামন্ত্রী ক্লেয়ার জানান, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তির বরাদ্দ বাড়াতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আবাসন নির্মাণে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, আপনি যদি অতিরিক্ত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী চান, তাহলে আমাদের দেখতে হবে দুটি বিষয়। এক, আপনি নতুন ছাত্রাবাস তৈরি করছেন কি না, কারণ আমাদের আরও বাসস্থান দরকার। দুই, শিক্ষার্থীরা যেন এক দেশের না হয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে আসে, সেটিও নিশ্চিত করতে হবে।
মন্ত্রী আরও জানান, ভবিষ্যতের বরাদ্দে আঞ্চলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, যাতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সুফল শুধু সিডনি বা মেলবোর্নের মতো বড় শহরেই সীমাবদ্ধ না থাকে।
তার ভাষায়, আমরা চাই না শুধু বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই লাভবান হোক। ছোট আঞ্চলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও সুযোগ দিতে হবে।
‘অর্ধেক শিক্ষার্থী বিদেশি হওয়া উচিত নয়’
সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থী বিদেশি হওয়া নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করা হলে ক্লেয়ার বলেন, এটা সত্য যে আন্তর্জাতিক শিক্ষা আমাদের অর্থনীতিতে বিনিয়োগ আনে, কর্মসংস্থান তৈরি করে ও বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। আন্তর্জাতিক শিক্ষা আমাদের পররাষ্ট্রনীতিরও গুরুত্বপূর্ণ অংশ কিন্তু এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, অস্ট্রেলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মূল দায়িত্ব স্থানীয় শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেওয়া। তাই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা অবশ্যই একটি সীমার মধ্যে রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অন্তত ৫০ শতাংশ বা তার বেশি শিক্ষার্থী স্থানীয় হওয়া উচিত। এ কারণেই আমরা সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়কে অতিরিক্ত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী বরাদ্দ দিইনি।
তবে তিনি একই সঙ্গে জানান, সরকার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলো থেকে আরও শিক্ষার্থী আকর্ষণ করতে চায়, যেখানে অস্ট্রেলিয়া কৌশলগতভাবে সম্পর্ক জোরদার করছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে- সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, লাওস, ভিয়েতনাম, ব্রুনাই, কম্বোডিয়া ও পূর্ব তিমুর।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
এসএএইচ

 1 day ago
                        5
                        1 day ago
                        5
                    








 English (US)  ·
                        English (US)  ·