ভাঙছে বাঙালি নদী। আতঙ্কে দিন কাটছে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের বামনহাজরা গ্রামের বাসিন্দাদের। গত কয়েক বছরে ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে কয়েকশো একর ফসলি জমি। ভেঙেছে সরকারি স্থাপনা, গ্রামের বসতভিটা আর ঘরবাড়ি।
স্থানীয়রা জানান, বাঙালি নদীর প্রায় তিন কিলোমিটারজুড়ে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছেন বাসিন্দারা। প্রতিবছর নদীভাঙনে ওই এলাকার ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা বিলীন হয়। দ্রুত ভাঙনরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নিতে না পারলে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে গ্রামটি। এর আগেও নদীভাঙনে ওই এলাকার বিভিন্ন গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন ঠেকাতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার সাঘাটা উপজেলার দেওয়ানতলা রেলসেতু থকে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মজিদের ব্রিজ এলাকার প্রায় তিন কিলোমিটার ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফসলি জমিসহ বেশ কিছু ঘরবাড়ি ঝুঁকিতে রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে দেওয়ানতলা রেল সেতু। ব্রিজটি বিলীন হয়ে গেলে উত্তরের আট জেলার রেল যোগাযোগ অচল হয়ে পড়বে।

স্থানীয় কৃষক জাকিরুল ইসলাম (৩৫) বলেন, ‘নদীটি ভাঙতে ভাঙতে এলাকা বিলীনের পথে। বন্যা এলেই পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে লোক এসে কয়েকটা বস্তা ফেলে যায়। বস্তাগুলো একসময় নদীতেই পড়ে যায়। এটা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। আমরা স্থায়ী বাঁধ চাই। তাহলেই আমরা বাঁচবো।’
আরও পড়ুন-
অবৈধভাবে আড়িয়াল খাঁ’র মাটি বিক্রি, ভাঙন আতঙ্কে গ্রামবাসী
ফরিদপুরের পদ্মাপাড়ের ২ শতাধিক পরিবার তীব্র ভাঙন আতঙ্কে
ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন ঠেকাতে স্থানীয়দের ‘প্রাকৃতিক বাঁধ’
বামনহাজরা গ্রামের বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম (৩৮) বলেন, ‘গত বছরের বন্যায় একটি কবরস্থান নদীতে ভেঙে গেছে। এই গ্রামে কেউ ছেলে-মেয়ে বিয়ে দিতে চায় না। ভাঙতে ভাঙতে এক সময় গ্রামটাই না শেষ হয়ে যায়! আমরা খুবই অসুবিধার মধ্যে আছি।’
শিক্ষার্থী ফয়সাল জানায়, নদীর পাড় দিয়ে স্কুলে যেতে ভয় লাগে। স্থায়ীভাবে একটি বাঁধ করে দিলে গ্রামের বাড়িঘরগুলো ভাঙবে না। আমরা বাঁধের রাস্তা দিয়ে স্কুলে যাতায়াত করতে পারবো।
গৃহিণী গোলাপী বেগম (৪০) বলেন, ‘এক বাড়ি বছরে দুই-তিনবার সরানো লাগে। বন্যার সময় নদীতো ভাঙেই। তখন সতর্ক থাকি। কিন্তু শুকনো মৌসুমে আরও ভয়াবহ। হঠাৎ করে পুরো ঘরবাড়ি ও আবাদের জমি নদীতে পড়ে যায়। আমরা গ্রামবাসী এর একটা স্থায়ী সমাধান চাই।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘নদীভাঙনের কারণে গ্রামটির বাসিন্দাদের নানান সমস্যায় ভুগতে হয়। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও এমপি শুধু আশ্বাস দিয়ে যান। কেউ কথা রাখে না।’
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. ওয়ালিদ আরশাদ রিয়ন বলেন, ‘এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না কবে নাগাদ বাঁধ নির্মাণ করা হবে। তবে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। যাতে করে ওই এলাকায় একটি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা যায়।’
এফএ/এএসএম

2 hours ago
4









English (US) ·