ভারতীয় পাসপোর্ট ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে কেন?

16 hours ago 6

বছরের শুরুতে এক ভারতীয় ট্রাভেল ইনফ্লুয়েন্সারের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়, যেখানে তিনি অভিযোগ করেন ভারতের পাসপোর্ট দুর্বল হওয়ায় পশ্চিমা ও ইউরোপীয় দেশগুলোতে ভ্রমণের জন্য ভিসা পাওয়া অত্যন্ত কঠিন।

তিনি বলেন, ভুটান ও শ্রীলঙ্কার মতো প্রতিবেশী দেশগুলো ভারতীয় পর্যটকদের প্রতি অনেক বেশি সহানুভূতিশীল হলেও, যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে ভিসা পাওয়া এক বিরাট ঝামেলা।

তার এই হতাশা প্রতিফলিত হয়েছে হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্সের সর্বশেষ প্রতিবেদনে, যেখানে ভারতকে ১৯৯টি দেশের মধ্যে ৮৫তম স্থানে রাখা হয়েছে— যা গত বছরের তুলনায় পাঁচ ধাপ নিচে।

ভারত সরকার এখনও এই প্রতিবেদনের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

চমকপ্রদভাবে ভারতের তুলনায় অনেক ছোট অর্থনীতির দেশ সূচকে ভারতের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। অথচ ভারত বর্তমানে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি।

গত এক দশকে এক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান মূলত ৮০-এর ঘরে ঘোরাফেরা করেছে, এমনকি ২০২১ সালে নেমে গিয়েছিল ৯০তম স্থানে। এর তুলনায় জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরের মতো এশীয় দেশগুলো ধারাবাহিকভাবে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে।

২০২৫ সালের সূচকে সিঙ্গাপুর রয়েছে এক নম্বরে, যার নাগরিকরা ১৯৩টি দেশে ভিসামুক্ত ভ্রমণ করতে পারেন। দক্ষিণ কোরিয়া দ্বিতীয় (১৯০ দেশ) এবং জাপান তৃতীয় (১৮৯ দেশ) অবস্থানে আছে।

অন্যদিকে, ভারতীয় পাসপোর্টধারীরা বর্তমানে ৫৭টি দেশে ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করতে পারেন— যা আফ্রিকার দেশ মৌরিতানিয়ার সমান; তাই ভারত ও মৌরিতানিয়া যৌথভাবে ৮৫তম স্থানে রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এর একটি প্রধান কারণ হলো বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতামূলক ভ্রমণনীতি— যেখানে অনেক দেশ পারস্পরিক ভ্রমণ সুবিধা ও কূটনৈতিক চুক্তির মাধ্যমে তাদের নাগরিকদের জন্য আরও বেশি ভিসামুক্ত গন্তব্য নিশ্চিত করছে।

হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স-এর ২০২৫ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৬ সালে গড়ে একজন ভ্রমণকারী ৫৮টি দেশে ভিসা ছাড়াই যেতে পারতেন, আর ২০২৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৯টিতে।

চীন গত এক দশকে তার নাগরিকদের জন্য ভিসামুক্ত গন্তব্যের সংখ্যা ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৮২টি করেছে। ফলে তাদের র‍্যাংক ৯৪ থেকে উন্নীত হয়ে ৬০তম স্থানে এসেছে।

ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত আচল মালহোত্রার মতে, একটি দেশের পাসপোর্টের শক্তি নির্ভর করে শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বিদেশি নাগরিকদের প্রতি উন্মুক্ততার ওপরও।

তিনি বলেন, ১৯৭০-এর দশকে ভারতীয়রা বহু পশ্চিমা দেশে ভিসা ছাড়াই যেতে পারতেন। কিন্তু ১৯৮০-এর দশকে খালিস্তান আন্দোলনের পর থেকে ভারতের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা শুরু হয়, যা দেশের ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

তিনি আরও যোগ করেন, অনেক দেশ এখন অভিবাসন নিয়ে সতর্ক। ভারত থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ বিদেশে অভিবাসন নেয় বা ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও থেকে যায়— এতে ভারতের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এ ছাড়া পাসপোর্টের নিরাপত্তা, জালিয়াতি প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং অভিবাসন প্রক্রিয়া কতটা সহজ ও আধুনিক— এসব বিষয়ও ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

২০২৪ সালে দিল্লি পুলিশ ২০৩ জনকে পাসপোর্ট ও ভিসা জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেফতার করে— যা ভারতীয় পাসপোর্টের নিরাপত্তা দুর্বলতার ইঙ্গিত দেয়। তাছাড়া, ভারতের অভিবাসন প্রক্রিয়া এখনও জটিল ও ধীরগতির বলে অভিযোগ রয়েছে।

তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ভারতের পাসপোর্টের শক্তি বাড়াতে সবচেয়ে প্রয়োজন কূটনৈতিক উদ্যোগ ও নতুন ভ্রমণ চুক্তি— যা ভারতীয় নাগরিকদের বৈশ্বিক চলাচল বাড়াতে পারে।

সূত্র: বিবিসি

এমএসএম

Read Entire Article