মামদানির জয়ে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন বাস্তবতা, আতঙ্কে ইসরায়েলিরা

4 days ago 4

নিউইয়র্ক সিটির মেয়র হিসেবে জোহরান মামদানির জয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এক নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা সৃষ্টি হয়েছে। তার ফিলিস্তিনপন্থি অবস্থানের কারণে আতঙ্কে রয়েছে ইসরায়েলিরা। ইসরায়েলের বিশ্লেষকরা বলছেন, মামদানির এই জয় তাদের জন্য ‘একটি সতর্কবার্তা’ যে, যুক্তরাষ্ট্রের জনমত, বিশেষ করে তরুণ ও ডেমোক্র্যাট ভোটারদের মধ্যে এখন আর আগের মতো নিঃশর্তভাবে ইসরায়েলপন্থি নেই।

জেরুজালেমের বাসিন্দা হানা জ্যাগার স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ইহুদিদের জন্য, ইসরায়েলের জন্য এটি খুবই খারাপ খবর। আর কী-ই বা বলা যায়?

আরও পড়ুন>>
আমার মেয়র, তোমার মেয়র’/ বাংলা স্লোগানে বিজয় উদযাপন মামদানির

হুমকি-ধামকি, মিডিয়ার চাপ/ মামদানিকে ঠেকাতে ট্রাম্পের সব চেষ্টাই ব্যর্থ
বাস্তববাদী ইশতেহার, ভিন্নধর্মী প্রচারণা/ যেভাবে ভোটারদের মন জয় করলেন জোহরান মামদানি

মার্কিন রাজনীতিতে মামদানির উত্থানে ইসরায়েলের রাজনীতিবিদ থেকে সাধারণ নাগরিক—সবাই উদ্বিগ্ন। কারণ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইহুদি জনসংখ্যাবিশিষ্ট শহর নিউইয়র্কের নেতৃত্ব এখন এমন একজনের হাতে, যিনি প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ইহুদি ভোটার মামদানিকে সমর্থন দিয়েছেন, যা ইসরায়েলি পর্যবেক্ষকদের মতে ‘আরও বেদনাদায়ক বাস্তবতা’।

জিউইশ পিপল পলিসি ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক শমুয়েল রসনার লিখেছেন, যে শহরে ইহুদি প্রভাব, অর্থ ও সংস্কৃতি এত প্রবল, সেখানেও এমন একজন নির্বাচিত হতে পারলেন যিনি প্রকাশ্যে ইসরায়েলবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন। এটি প্রমাণ করে, এখন ইসরায়েলের বিরোধিতাও রাজনৈতিকভাবে লাভজনক হতে পারে।

প্রচারণায় ফিলিস্তিনি ইস্যু ও গাজা যুদ্ধ

৩৪ বছর বয়সী প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ মামদানি নির্বাচনী প্রচারণায় নিউইয়র্কের স্থানীয় ইস্যুগুলোর পাশাপাশি মানবাধিকার, বৈষম্যবিরোধিতা এবং ফিলিস্তিন প্রশ্নে ন্যায়বিচারের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানকে স্পষ্টভাবে ‘গণহত্যা’ বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন, বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যদি নিউইয়র্কে পা রাখেন, তবে তিনি তাকে ‘গ্রেফতার করবেন।’

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার ধারণারও বিরোধিতা করেছেন মামদানি। তিনি বলেন, ‘যে কোনো রাষ্ট্রব্যবস্থা যা একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীকে অন্যদের ওপর প্রাধান্য দেয়, তা মানবাধিকারের পরিপন্থি।’ এই মন্তব্যকে অনেক ইসরায়েলি দেশের মূল দর্শনের প্রতি আঘাত হিসেবে দেখছেন।

ইসরায়েলের ক্ষোভ

ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রবাস বিষয়ক মন্ত্রী আমিচাই চিকলি মামদানিকে ‘হামাসপন্থি’ বলে আখ্যা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আক্রমণ শুরু করেন। তিনি নিউইয়র্কের ইহুদিদের ইসরায়েলে চলে যাওয়ার আহ্বান জানান। এমনকি, এক পোস্টে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের টুইন টাওয়ারে হামলার ছবি দিয়ে লেখেন, ‘নিউইয়র্ক এরই মধ্যে ভুলে গেছে।’

জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত দানি দাননও দাবি করেন, মামদানির নেতৃত্বে নিউইয়র্কের ইহুদি সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে। কারণ শহরের পুলিশ বাহিনী এখন তার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

যুক্তরাষ্ট্রে পাল্টে যাওয়া বাস্তবতা

আন্তর্জাতিক সংকটগ্রস্ত বিষয়াবলির বিশ্লেষক মেইরাভ জন্সজেইন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন রাজনীতিতে ইসরায়েলপন্থিদের একচেটিয়া প্রভাব ছিল। মামদানির জয় প্রমাণ করছে, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সেই সময় শেষ হতে চলেছে।

পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি নেতা মুস্তাফা বারঘুতি মামদানির জয়কে ‘অনুপ্রেরণাদায়ক’ আখ্যা দিয়ে বলেন, এটি প্রমাণ করে, যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বের তরুণরা এখন সামাজিক ও রাজনৈতিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছে। ফিলিস্তিন ইস্যু এখন বৈশ্বিক নির্বাচনী আলোচনার অংশ হয়ে উঠেছে।

সূত্র: এপি
কেএএ/

Read Entire Article