ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় কিশোরীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে ক্ষুব্ধ জনতা আব্দুল করিম (৭৬) নামের একজনকে আটক করে। পরে তাকে গাছে বেঁধে জুতার মালা পরিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। পুলিশের কাছে নিজেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা বলে দাবি করেন আব্দুল করিম। তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গ্রেফতার আব্দুল করিম মুক্তিযোদ্ধা নন।
গফরগাঁও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সাইফুল আলমও জানিয়েছেন, গ্রেফতার হওয়া আব্দুল করিম মুক্তিযোদ্ধা নন।
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ওয়েবসাইটে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই’-এর গফরগাঁওয়ের তালিকা ডাউনলোড করে দেখা গেছে, সেখানে ৩৯৫ জনের নাম এবং তাদের বাবার নাম, গ্রামের নাম, ডাকঘর ও বেসামরিক গেজেট নম্বর দেওয়া আছে। এই তালিকায় শুধু একজন আব্দুল করিম পাওয়া গেছে। তালিকার ২৬১ নম্বরে ‘মো. আব্দুল করিম’ নামে একজনের নাম পাওয়া গেলেও তিনি ভিন্ন ব্যক্তি। তার গ্রামের বাড়ি গফরগাঁওয়ের মহিরখারুয়া। বাবার নাম মৃত গিয়াস উদ্দিন আহাম্মদ।
আর গ্রেফতার হওয়া আব্দুল করিমের বাড়ি গফরগাঁওয়ের পাগলা থানাধীন মশাখালী ইউনিয়নের মুখী গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত কেরামত আলী। অর্থাৎ দুজনের গ্রাম ও বাবার নাম ভিন্ন।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মুখী গ্রামে এক কিশোরীকে বাড়িতে একা পেয়ে যৌন নির্যাতনের চেষ্টার অভিযোগ ওঠে আব্দুল করিমের বিরুদ্ধে। এসময় ক্ষুব্ধ জনতা তাকে আটক করে গাছে বেঁধে-জুতার মালা পরিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন। পরদিন বুধবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে কিশোরীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে করা মামলায় আব্দুল করিমকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।
গফরগাঁও ও পাগলা থানা নিয়ে গফরগাঁও উপজেলা গঠিত। এই উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সাইফুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাকে গাছে বেঁধে-জুতার মালা পরিয়ে রাখা হয়েছে- এমন ঘটনা জানতে পেরে মনটা বিষণ্ন হয়ে যায়। পরে আমার কাছে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তিনটি তালিকা যাচাই-বাছাই করি। কিন্তু কোথাও আটক আব্দুল করিমের নাম পাওয়া যায়নি। তার মানে, তিনি মুক্তিযোদ্ধা নন। এমতাবস্থায় সবাইকে জানাতে আমি একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। সেখানে আব্দুল করিমের বাবার নাম মৃত কেরামত আলী ও মশাখালী ইউনিয়নের নাম ঠিক লিখলেও তাড়াহুড়ো করে আব্দুল করিমের নামের পরিবর্তে মো. কবির ও আব্দুল করিমের মুখী গ্রামের পরিবর্তে বীর খারুয়া লেখা হয়েছে। এতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।
সাইফুল আলম জানান, প্রকৃতপক্ষে সরকারি নথিপত্রে মশাখালী ইউনিয়ন কিংবা মুখী গ্রামে আব্দুল করিম নামের কোনো মুক্তিযোদ্ধা নেই। তালিকায় আব্দুল করিম নামে একজনের নাম থাকলেও তার গ্রাম ও বাবার নাম ভিন্ন। প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি বৃহস্পতিবার সংশোধন করা হবে।
কমান্ডার সাইফুল আলম আরও বলেন, ‘গ্রেফতার হওয়া আব্দুল করিমকে আমি চিনি না। তিনি যেহেতু মেয়ে সংক্রান্ত ঘটনায় আটক হয়ে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়েছেন এবং আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে- তাই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে নথিপত্র যাচাই-বাছাই করি। আব্দুল করিম প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়ে থাকলে তাকে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে প্রমাণপত্রসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করতে হবে।’
বক্তব্য জানতে চাইলে ময়মনসিংহ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদস্য সচিব কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পর পরই গফরগাঁও উপজেলার কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা সাইফুল আলমকে নথিপত্র যাচাই করতে বলি। পরে নিশ্চিত হয়েছি- গ্রেফতার হওয়া আব্দুল করিম মুক্তিযোদ্ধা নন।’
এ বিষয়ে পাগলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আব্দুল করিম আমাদের কাছে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি করেছিলেন। তবে আমরা তা যাচাই-বাছাই করার সুযোগ পাইনি। পরে ওই কিশোরীর বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা হিসেবে নথিবদ্ধ করে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
গফরগাঁও সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনোতোষ বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, ‘গ্রেফতার আব্দুল করিম মুক্তিযোদ্ধা কিনা তা মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট না দেখে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তিনি মামলার আসামি। সে হিসেবেই তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।’
কামরুজ্জামান মিন্টু/এফএ/এমএমএআর/এএসএম

15 hours ago
6









English (US) ·