রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন না হলে অতীত ফিরে আসবে
বাংলাদেশ
কূটনৈতিক প্রতিবেদক 2025-11-05দেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন না হলে অতীত ফিরে আসবে। রাজনীতি কোনো ব্যক্তিগত বিষয় নয়, এটি নাগরিক সেবা। বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। ভালো রাজনৈতিক সংস্কৃতি সব সময় এ দেশের সুযোগ বাড়িয়ে দেবে। তাই রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সুরাজনৈতিক সংস্কৃতির অন্বেষণ নিয়ে এক সেমিনারে এমনটিই বলেছেন বক্তারা। মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে সুরাজনৈতিক সংস্কৃতির অন্বেষণ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকার নরওয়ে দূতাবাসের সহায়তায় এ সেমিনারের আয়োজন করে ঢাকা ট্রিবিউন।
এতে বিশেষ বক্তা ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. রওনক জাহান এবং সূচনা বক্তব্য দেন ঢাকায় নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হিকন আরাল্ড গুলব্রান্ডসেন। প্যানেল আলোচনায় রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জাহেদ উর রহমান, জামায়াতে ইসলামীর সদস্য ব্যারিস্টার শিশির মনির, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. মির্জা এম হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ এম শাহান, দ্য ডেইলি স্টারের সাংবাদিক জাইমা ইসলাম এবং ঢাকা ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিক্সের (দায়রা) গবেষণা পরিচালক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বক্তব্য রাখেন। সেমিনারটি সঞ্চালনা করছেন ঢাকা ট্রিবিউন সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ। সমাজের বিভিন্ন পেশার মানুষ এতে অংশগ্রহণ করেন।
রওনক জাহান বলেন, আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যারা সংসদে আসছেন তাদের জবাবদিহিতা সুনিশ্চিতের জন্য প্রথম যে কাজটি করা দরকার সেটি হচ্ছে, বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব জনসমক্ষে প্রকাশ করা। এ ছাড়া শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় নিয়ে আসা গাড়ি আগামীর সংসদ সদস্যরা ব্যবহার করবেন না– এর মাধ্যমে একটি উদাহরণ তৈরি করতে পারেন। পাশাপাশি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটিতে, যেখানে স্বার্থের সংঘাত ঘটে, এমন কমিটিতে যোগ দেবেন না সংসদ সদস্যরা। এ ধরনের কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন শুরু হতে পারে।
হিকন আরাল্ড গুলব্রান্ডসেন বলেন, নরওয়েতে নির্বাচনের সময় প্রতিযোগী প্রার্থীর প্রচারণার সময় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা হয়। কারণ রাজনীতি ব্যক্তিগত বিষয় নয়, এটি নাগরিক সেবা। বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক উত্তরণের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাপক সংস্কারের কাজ হাতে নিয়েছে। কিছু সংস্কার কাজ ইতোমধ্যে করা হয়েছে। এসব সংস্কারের বাইরে আরেকটি বিষয়ে সংস্কারের কথা ভেবে দেখতে হবে সেটা হচ্ছে, রাজনৈতিক সংস্কৃতি। ভালো রাজনৈতিক সংস্কৃতি ছাড়া বিগত কর্তৃত্ববাদী শাসনের প্রবণতা, সাংঘর্ষিক রাজনীতি, রাজনৈতিক নিপীড়ন ও দুর্নীতির পুনরাবৃত্তি ঘটবে।
রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিয়ে শিশির মনির বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক শক্তিগুলো বড় জায়গা দখল করে আছে। যদি আমরা কাজ করতে চাই, তবে আমাদের আরও ভালো রাজনৈতিক অনুসরণ করার জন্য কাজ করার পরে দিনের পর দিন নিরলসভাবে কাজ করতে হবে। জুলাই সনদ একটি ভালো শুরু হতে পারে।
গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে জাহেদ উর রহমান বলেন, আমি বিশ্বাস করি, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো প্রচণ্ড সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে আমরা গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়িনি। আমরা সংস্কারের কিছু আলোচনায় গুরুত্বসহকারে জড়িত রয়েছি।
বাংলাদেশের যত রাজনৈতিক আলোচনা হয়, তাতে শুধু অভিজাত শ্রেণি যুক্ত থাকে। সেখানে সাধারণ মানুষকে খুঁজে যাওয়া যায় না বলে সমালোচনা করেন মির্জা এম হাসান। রাজনীতিতে আদর্শের বিষয়ে তিনি বলেন, দুই ধরনের আদর্শ রয়েছে। একটি আইনের মধ্যে থেকে খারাপ আদর্শ। আরেকটি খারাপ আদর্শ। যেমন, সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত গাড়ি কেনা বা কালো টাকা সাদা করার সুযোগগুলো আইনের মধ্যে থেকে খারাপ আদর্শ। আর খারাপ আদর্শ হচ্ছে, ক্ষমতায় এসে পুলিশ, বিচার বিভাগ ও আমলাতন্ত্রকে দলীয়করণ। এসব আদর্শ ত্যাগ না করার বিষয়ে রাজনীতিবিদরা সব সময়ে এক কাতারে চলেছেন।
আসিফ এম শাহান বলেন, নিমেষেই সব রাজনৈতিক দল ভালো হয়ে যাবে না। এখানে প্রশ্ন এটা নয়, কে ক্ষমতায় আসবেন। প্রশ্ন হচ্ছে, যিনি ক্ষমতায় আসবেন, তাকে কতটুকু ক্ষমতা দেওয়া হবে। তার ক্ষমতা সীমিত থাকলে অতীতের মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে না। আর এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোকে গড়ে তোলার বিষয় রয়েছে।
রাষ্ট্রের আচরণ বরাবরই দমনমূলক জানিয়ে জাইমা ইসলাম বলেন, গত ৪ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা সবচেয়ে বেশি। বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংঘাতে প্রায় ৮৮ জন মারা গেছেন। ৩৪ জন মারা গেছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যকার সংঘাতে। ক্ষমতায় না থাকলেও আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণভাবে ১২ জন মারা গেছেন।
বিশ্বজুড়ে ডানপন্থি রাজনীতির উত্থান নিয়ে কথা বলেন মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। মুক্ত আলোচনায় এবি পার্টির ফারজানা সাত্তার নারীবিষয়ক সম্পাদক রাজনৈতিক ধারা পরিবর্তন এবং সমালোচনা গ্রহণ করতে পারার পক্ষে মত দেন।
বিএনপির তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবা হাবিবা বলেন, মানুষকে ভোটের সুযোগ দিন। একই সঙ্গে ডিজিটালি সরকার এবং রাজনৈতিক নেতাদের সচেতন হতে হবে। এই মাধ্যমে সহিংসতা যেন তৈরি না হয়, খেয়াল রাখতে হবে।
© Samakal
1 day ago
2









English (US) ·