রাবির সুইমিংপুলে সায়মার মৃত্যু, তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ

5 hours ago 8

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোছা. সায়মা হোসেনের মৃত্যুর প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, সুইমিংপুলে ডুবে যাওয়ার প্রায় ২০ মিনিট পর সায়মাকে উদ্ধার করা হয়। 

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করে কমিটি।

লিখিত তদন্ত রিপোর্ট সকলের সামনে তুলে ধরেন তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক উপউপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন খান। এ সময় তিনি বলেন, সায়মা মৃত্যুর পরদিন থেকে ২১ জন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার, মেডিকেল ও সুইমিংপুলের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ, লিখিত বক্তব্য ও অন্যান্য বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। 

তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, সায়মা সেদিন সাইকেল নিয়ে সুইমিংপুলে প্রবেশ করে তারপর সাইকেল রেখে রুমে গিয়ে পোশাক পরিবর্তন করে সাঁতারের জন্য নামে। এ সময় তার সঙ্গে আরও একজন শিক্ষার্থীও নামে। তারা দুজন একই সঙ্গে সাঁতার শুরু করে। তবে তার সঙ্গে যে ছিল সে একটু ফাস্ট ছিল। সে এগিয়ে যায়।

সাঁতার শুরু করে ৪টা ১২ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে প্রথম লাইনেই সাঁতার কাটছিল ওয়ালের পাশে, এবং তার পাশেই আরেকজন মেয়ে সাঁতার কাটছিল। প্রায় ১মিনিট ঠিকভাবে সাঁতার কাটার পরেই সায়মা প্রবলেম ফেস করতে শুরু করে। সিসি ক্যামেরায় দেখা যায় যে, তখন সে বার বার ডুব দিচ্ছিল এবং উঠছিল।

তারপরই সে পানির নিচে তলিয়ে যায়। কিন্তু কেউ সেটা খেয়াল করে না। তার পাশে যে মেয়েটা সাঁতার কাটছিল সে কয়েকবার এপাশ থেকে ওপাশে গেছে সাঁতার কেটে। সে তখনও খেয়াল করেনি।
সায়মা বাদেও সেখানে পাঁচজন সাতারু এবং তিন জন প্রশিক্ষক ছিল। তাদের কারোর দৃষ্টিতেই আসেনি যে সায়মা ডুবে যাচ্ছে।

পাশের মেয়েটা সাঁতার কেটে উঠার পর সে লক্ষ্য করে যে তার পাশে সাঁতার কাটতে থাকা সায়মা পাশে নেই। তারপর সে গিয়ে তার ম্যাডামকে এ কথা বললে তারা ওয়াশরুমসহ সকল জায়গায় খুঁজে। না পেয়ে একজন মেয়ে সায়মাকে পানির নিচে ডুবে থাকতে দেখে। এরপর রুনা লায়লা নামে একজন প্রশিক্ষক পানিতে ঝাঁপ দিয়ে সায়মাকে উঠাতে চেষ্টা করলেও তিনি উঠাতে পারেননি। 

এরপরে উপস্থিত আরও ২/৩ জন নামলেও সায়মাকে উঠাতে পারেনি তারা। সেখানে পানির গভীরতা প্রায় ৭ ফুট ছিল, যার কারণে তাকে তোলা সম্ভব হচ্ছিল না। এরপর বাইরে থেকে ডাকাডাকি করে আশপাশ থেকে কয়েকজন শিক্ষার্থী আসে। তাদের মধ্যে একজন পানিতে নেমে মাথার সাহায্য তাকে উপরে তুলে তারপর সবাই ধরাধরি করে তাকে উদ্ধার করে। 

এরপর সেখান থেকে উদ্ধার রাবি মেডিক্যাল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে যে ডাক্তার ছিল তিনি জানান তখন তার পালস বিপি কিছুই ছিল না। তবে সেখানে দক্ষ কর্মীর অভাবে অক্সিজেন দিতে প্রায় ১০ মিনিট বিলম্ব হয়। তারপর সেখান থেকে সায়মাকে রাজশাহী মেডিক্যাল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

এ সময় অধ্যাপক ফরিদ বলেন, আমরা তার পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি যে তার আগে থেকেই শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল এবং সে ইনহেলার নিত। তারপরেও কেন তাকে সাঁতারে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয় সেটার প্রশ্ন থেকেই যায়। একজন শিক্ষার্থী ডুবে যাওয়ার ২০ মিনিট পরেও কেউ কেন খেয়াল করেনি এটার প্রশ্ন থেকেই যায়। 

তিনি আরও বলেন, তবে সাঁতার কাটার সময় যারা উপস্থিত ছিলেন বা মেডিকেলের ডাক্তারের কোনোরকম অবহেলা বা গাফিলতি আমরা লক্ষণ করিনি। তারা টের পাওয়ার পর যথেষ্ট চেষ্টা করেছে। সবাই দৌড়াদৌড়ি, ছোটাছুটি করেছে। তবে মেডিকেল সেন্টারে দক্ষ নার্স বা কর্মচারী না থাকায় কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। এছাড়া যে বিষয়টা বারবার সামনে আসছে যে প্রশিক্ষক সাঁতার পারে না। এটা সত্য নয়, তিনি সাঁতার পারেন। আমরা এখন পর্যন্ত এ তথ্যগুলো পেয়েছি বাকিটা চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্টে জানানো হবে।

এ সময় সিনেট ভবনে উপস্থিত ছিলেন- উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মাঈন উদ্দীন, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতেখার আলম মাসউদ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ড. মো. সিদ্দিকুর রহমানসহ বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাকসুর নবনির্বাচিত প্রতিনিধিরা।

Read Entire Article