শতবর্ষে বাংলা সিনেমার স্পর্ধা ঋত্বিক ঘটক

20 hours ago 4

বাংলা সিনেমার ইতিহাসে এমন নির্মাতা খুব কমই আছেন যার প্রতিটি ফ্রেম, সংলাপ আর ছন্দে সমাজ, রাজনীতি ও মানুষের গভীরতম বেদনা কথা বলে। ঋত্বিক ঘটক তাদেরই একজন। তাকে বাংলা সিনেমার স্পর্ধাও বলা হয়। তার মৃত্যুর পর বাংলার নন্দিত কবি কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় লিখেছিলেন, ‘তুমি গেছো স্পর্ধা গেছে বিনয় এসেছে....’

আজ ঋত্বিকের জন্মশতবর্ষ।

এক শতাব্দী পেরিয়েও ঋত্বিক ঘটক রয়ে গেছেন আগুনের মতোই প্রাসঙ্গিক, তীক্ষ্ণ ও অনমনীয়। দেশভাগ, বঞ্চনা আর মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই ছিল ঋত্বিক ঘটকের সিনেমার প্রাণ।

ঢাকায় জন্ম নেওয়া এই অগ্নিশিল্পীর জীবন নিজেই ছিল এক মহাকাব্য। দেশভাগের বিভীষিকা, বাস্তুচ্যুত মানুষের কান্না আর বাঙালির আত্মপরিচয়ের টানাপোড়েন; সব মিলিয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন সিনেমার বিপ্লবী কণ্ঠস্বর। রাজশাহীর মাটিতে কাটানো যৌবন, তারপর কলকাতার ব্যস্ত প্রান্তর। সব জায়গাতেই তিনি খুঁজেছেন একটাই প্রশ্নের উত্তর, ‘আমি কে, আমার দেশ কোথায়?’

সত্যজিৎ রায় একবার বলেছিলেন, ‘ঋত্বিক আমার থেকেও অনেক বেশি বাঙালি।’ আর মৃণাল সেনের মতে, ‘ঋত্বিক ছিল আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেপরোয়া।’ দুই কিংবদন্তির এই দুই উক্তিই যেন তার শিল্পীসত্তার সংক্ষিপ্ত জীবনী।

মাত্র আটটি সিনেমা বানিয়েছেন ঋত্বিক। আর তাতেই প্রমাণ দিয়েছিলেন নির্মাণের মুন্সিয়ানা, ব্যতিক্রমী ভাবনার। ‘নাগরিক’, ‘অযান্ত্রিক’, ‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘সুবর্ণরেখা’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’সহ প্রতিটি ছবিই যেন একেকটি যুগান্তকারী দলিল। ঋত্বিকের সিনেমা শুধু দেখা যায় না, অনুভব করতে হয়। সমাজ, শ্রেণি, বাস্তুচ্যুতি, প্রেম আর বেদনার সংমিশ্রণে তাঁ চলচ্চিত্র হয়ে উঠেছে বাঙালির অন্তর্লোকের প্রতিচ্ছবি।

হলিউডের নামমাত্র প্রভাব ছাড়াই নিজস্ব ভাষা ও ছন্দে সিনেমাকে তিনি বানিয়েছেন কবিতা, করেছেন প্রতিবাদের হাতিয়ার। পশ্চিমা নির্মাতা মার্টিন স্করসেসি বলেছেন, ‘ঋত্বিক ঘটকের কাজ আজও অনুপ্রেরণা জোগায় প্রজন্মের পর প্রজন্মকে।’

১৯৭৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই কিংবদন্তি। কিন্তু তার ফ্রেমে বন্দি মানুষ, নদী, কান্না আর বিপ্লব আজও বেঁচে আছে বাঙালির রক্তে।

এলআইএ/জিকেএস

Read Entire Article