অভিনেত্রী ও বাচিকশিল্পী সিফাত বন্যা। বিজ্ঞাপন, নাটক আর চলচ্চিত্রে তার সাবলীল উপস্থিতি হৃদয় কেড়েছে দর্শকের। তবে এই রঙিন জগতের আড়ালে লুকিয়ে থাকা অন্ধকার দিকের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকেও। বছর দুয়েক আগে শুটিং সেটে হেনস্তার শিকার হওয়ার গুরুতর অভিযোগ এনে পুরো মিডিয়া অঙ্গনে আলোড়ন তুলেছেন তিনি। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ছোট পর্দার আরেক জনপ্রিয় মুখ শামীম হাসান সরকার।
বুধবার সিফাত নিজের সামাজিক মাধ্যমে শামীম হাসান যে কো-আর্টিস্টদের প্রতি দূর্ব্যবহার করে সে বিষয়ে এক দীর্ঘ স্ট্যাটাস শেয়ার করেছেন তিনি।
শেয়ার করা পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘শামীম হাসান সরকার নামে একজন ভাঁড় আছে। সে গতকাল একজন অভিনেত্রীকে প্রকাশ্যে ধর্ষণের হুমকি দিয়েছে। সেই সেটের ডিরেক্টর থেকে শুরু করে সবাই নাকি চুপ ছিল। চিন্তা করেন এদের অবস্থা। এদের মানসিকতা।’
তিনি আরও লিখেছেন, গত ২ বছর আগে উত্তরা একটি স্যুটিং হাউজে বুদ্ধিজীবী দিবসে ওর সাথে আমার কাজের সিডিউল হয়। আমি সহকারী পরিচালক কে বলি আমাকে দুপুর ২ টার মধ্যে ছেড়ে দিতে হবে। কারণ আমি ৪টার মধ্যে গাজীপুর সদরে থাকবো। জেলা প্রশাসকের অনুষ্ঠানে আমাকে আবৃত্তি করতে হবে। সেদিন আমার খুব জ্বরও ছিল। মেকআপ রুমে যাওয়ার পরে শামীমের সঙ্গে ওই সহকারী আমাকে পরিচয় করিয়ে দেয়। এই ভাঁড়ের সাথে ঐদিনই আমার প্রথম কাজ ছিল। পরিচয়ের পরে হাই হ্যালো হলো এবং সহকারী ওকে বলেওছিল আমার খুব জ্বর। বলেছিল আপুরতো জ্বর তাহলে এসিটা কমিয়ে দিয়ে গেলাম।
সিফাত আরও লিখেছেন, ‘মেকআপ রুমে আমি, ভাঁড় আর মেকআপ আর্টিস্ট। আমি বসে বসে স্ক্রিপ্ট পড়ছি। ভাঁড় জোরে জোরে ইংরেজি গান, হিন্দি গান বাজাচ্ছে এবং এসিটাও বাড়িয়ে দিলো। ওকে যে সহকারী বলে গেলো আমার জ্বর তাতে ওর কোন মাথাব্যথা নেই। আমার মেজাজ খারাপ হচ্ছিল। তবুও সিনিয়র যেহেতু আস্তে করে উঠে গিয়ে বললাম ভাইয়া একটা কথা বলব। ও বলে বলেন। আমি বললাম আমার তো খুব জ্বর এসিটা কমালে খুব ভালো হতো।। আর গানের সাউন্ডও নিতে পারছিনা এবং আজ যেহেতু বুদ্ধিজীবী দিবস, চলুন বাংলা গান শুনি। এ কথা বলতেই ও মেকআপ আর্টিস্টের সামনেই আমাকে বলে আপনার জ্বর আমি কি করবো, আপনি বাইরে যান। আর আপনি আমাকে ইন্টেলেকচুয়ালিটি শেখাচ্ছেন। মানে একদম চেঁচিয়ে। মনে হচ্ছিল সে পারলে গায়ে হাত তুলবে।
অভিনেত্রী আরও লিখেছেন, ‘একজন নারী সহকর্মীর সাথে তার এমন আচরণ আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। শুরুতে আমি হতভম্ব হয়ে গেছি। পরে বলেছি মেকআপ রুম আপনার একার নয়। মেকআপ রুম আমাদের সবার। এক কথায় দুই কথায় দুজনেই কথা কাটাকাটি করি। পরিচালক ও সহকারী এসে দুজন কে দুই রুমে নিয়ে যায়। পরে ওকে ঠান্ডা করে। আমাকেও করে। পরে ও আমার সাথে কাজ করবে বলে। কিন্তু আমি বলেছিলাম এক কোটি টাকা দিলেও আমি ওর সাথে কাজ করবো না। সেট ছেড়ে চলে এসেছিলাম। আমি ডিরেক্টর আর এডির জন্য ওখানে আর কথা বলতে পারলাম না। সেও পারেনি। সবকিছু মিলিয়ে সেটে অনেক কিছু ঘটলেও আমাদের আগে কাজ নামানোর কথা চিন্তা করতে হয়। কারণ টাকার কাজ। অনেক ইনভেস্টমেন্টের কাজ।। কমিটমেন্ট সবকিছু মিলিয়ে। অনেক কিছু সহ্য করে চুপ থাকতে হয়। আমি চলে আসি। তারপর জেলা প্রশাসকের অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করি। বাট আমি একজন আর্টিস্ট, আমাকে মেকআপ আর্টিস্টের সামনে রুম থেকে বের হয়ে যান বলাটা মাথা থেকে সরাতেই পারছিলাম না এবং চূড়ান্ত অপমানই করেছিল একজন নারী সহকর্মী হিসেবে।
তিনি আরও লিখেছেন, পরের দিন ওর জন্মদিন ছিল। মোবাইল খোলার পরেই দুপুরে প্রথম কলটা আমার যায়। আমি ওকে বলি গতকাল তো তোকে আর কিছু বলতে পারিনি। তোকে আমি জুতা দিয়ে পিটাইতে চাই ইত্যাদি ইত্যাদি। ২ মিনিট কথা বলার পরে ও কেটে দেয়। এটা নিয়ে ডিরেক্টর কে আবার বিচারও দিয়েছিল। 
অনেকেই বলতে পারে আমি এটা পরে ঠিক করিনি। একজন নারী সহকর্মী হিসেবে আমার সাথে  সে যে ধরনের রক্তচক্ষু নিয়ে কথা বলেছে, সেটা মেনে নেওয়া যায় না এবং কোথাও এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেও লাভ নেই। আমি আমার অপমান মানতে পারছিলাম না। তাই আমি এটা করেছিলাম। আমার মনে হয়েছিল সে আমার গায়ে হাত তুলতে পারতো পরিচালক ও সহকারী না থাকলে। এদিকে আমিও ট্রমায় পড়ে গিয়েছিলাম।
পরিচালক ভাইয়া এবং এসেস্টেন্ট পরিচালক দুজনেই খুব ভালো। তারা আমাকে সরি বলেছিল এবং ঘটনার সময়ও আমাকে এবং ওকে, দুজনকেই থামিয়েছে। তাই সংগত কারণেই আমি তাদের নাম বলছি না।
তবে শামীম হাসানের সাম্প্রতিক বিষয়ে কালবেলার সঙ্গে অভিনেত্রী বলেন, যে মেয়েটা হেনস্থা হয়েছে সে আজ সেলিব্রিটি নয় বলে সেভাবে সিনিয়ররা মনে হয় কিছু বলছে না। তবে আমাদের সবার সে মেয়েটাকে সহযোগিতা করা উচিত এবং শিল্পী সংঘের দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

                        5 months ago
                        117
                    








                        English (US)  ·