বগুড়ার গাবতলী উপজেলার ঈশ্বরপুর গ্রামের বাসিন্দা লিয়াকত আলী প্রামাণিক। তিন দশক ধরে কুয়েত ও সৌদি আরবে থেকে কঠোর পরিশ্রম করে উপার্জিত লাখ লাখ টাকা পাঠিয়েছেন পরিবারে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! পরিবারের সঙ্গে এখন তার সম্পর্ক ছিন্ন। স্ত্রী ও কন্যা অন্যত্র চলে গেছেন।
দেশে ফিরে ব্যবসা শুরু করলেও প্রতারণার শিকার হয়ে খুইয়েছেন ৩০ লাখ টাকা। জীবনের প্রতিটি ধাপে যেন প্রতারণা আর অবিশ্বাসই সঙ্গী হয়েছে লিয়াকতের। আজ তিনি নিজেই বেঁচে আছেন মানুষের করুণার ভরসায়। জরাজীর্ণ একটি খুপরিতে দিন কাটছে ৮০ বছর বয়সী এই বৃদ্ধের।
রোববার (২ নভেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রামবাসীরা মিলে রাস্তার পাশে টিনের একটি খুপরি তৈরি করে দিয়েছেন। সেটাও ভঙ্গুর।

বর্ষায় পানি পড়ে, শীতে শীতল বাতাস ঢুকে শরীর কাঁপায়। বাধ্য হয়ে সেখানেই থাকতে হচ্ছে লিয়াকত আলীকে।
স্থানীয়রা জানান, পরিবারের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিতে কুয়েতে পাড়ি জমিয়েছিলেন লিয়াকত আলী। এরপর দীর্ঘদিন সৌদি আরবের সড়ক-মহাসড়কে মালবাহী গাড়ি চালিয়েছেন। কঠোর পরিশ্রমে উপার্জিত অর্থ পাঠাতেন পরিবারের হাতে। সংসার জীবনে ঝর্ণা নামের এক নারীকে বিয়ে করেছিলেন লিয়াকত। সেই ঘরে ছিল এক কন্যা সন্তান। প্রবাসে থাকা অবস্থায় তার স্ত্রী মেয়েকে নিয়ে অন্যত্র চলে যান। জীবনের প্রতিটি ধাপে যেন প্রতারণা আর অবিশ্বাসই সঙ্গী হয়েছে লিয়াকতের। প্রায় দেড় যুগ আগে প্রবাস জীবনের ইতি টেনে দেশে ফিরে রাজধানী ঢাকায় শুরু করেন আদম ব্যবসা। সেখানেও ভাগ্য প্রতারণা করে।
ব্যবসার মূলধন ও শেষ পুঁজির ৩০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যান তার সহযোগী। এরপরেও বিপদ থামেনি। জীবদ্দশায় তার বাবা জমিজমা ছোট ভাইয়ের নামে লিখে দিলে নিঃস্ব হয়ে পড়েন লিয়াকত। অসুস্থ অবস্থায় আশ্রয়ের খোঁজে ছোট বোনের বাড়িতে গেলে বুধবার (২৯ অক্টোবর) বোন তাকে বাড়ির পাশের কবরস্থানে ফেলে রেখে যান।
বৃদ্ধ লিয়াকত শুধু বয়সের ভারে নুয়েই পড়েননি, এখন অন্যের সহযোগিতা ছাড়া বিছানা থেকে উঠতে পারেন না। আছে ঠান্ডাজনিত শ্বাসকষ্টের সমস্যা। জীবনের শেষ সময়টুকু ভালোভাবে বাঁচার আকুতি তার।

আক্ষেপ প্রকাশ করে লিয়াকত আলী বলেন, ‘একসময় পরিবার, সমাজ, স্বপ্ন সবকিছু নিয়ে পথ চলেছি। আজ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে পাশে নেই কেউ! যাদের জন্য প্রবাসে জীবন কঠোর পরিশ্রম করে উপার্জিত লাখ লাখ টাকা পাঠিয়েছি, তাদের কাছ থেকেই পেয়েছেন অবহেলা, প্রতারণা।’
স্থানীয় জাহেদুর ইসলাম জানান, লিয়াকত আলী এখন ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারেন না। এমনকী প্রস্রাব-পায়খানা বিছানায় করেন। তার এখন ভালো থাকার জায়গাসহ সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন।’
স্থানীয় বাসিন্দা পলাশ আহমেদ বলেন, ‘লিয়াকত আলী এখানে খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে নজর দেওয়া প্রয়োজন।’
এ বিষয়ে নেপালতলী ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান সঞ্জয় মজুমদার বলেন, আমরা লিয়াকত আলীর পরিবারের কাছে নোটিশ পাঠিয়েছি। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) তাদের সঙ্গে তার পুনর্বাসন নিয়ে কথা বলবো।
এসআর/এমএস

7 hours ago
3









English (US) ·