আজ ৪ নভেম্বর সংবিধান প্রণয়ন দিবস। ১৯৭২ সালের এই দিনে গণপরিষদে সংবিধান গৃহীত হয়েছিল। ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর থেকে সংবিধান কার্যকর হয়। সংবিধান দিবসকে সামনে রেখে সংবিধান সংক্রান্ত বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা বিভিন্ন মতামত দিয়েছেন।
তাদের মতে, ৭২ এর সংবিধান পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে ১৭ বার সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু জনগণ বা রাষ্ট্রের কোনো কল্যাণ হয়নি। সরকার বা গোষ্ঠী-স্বার্থে সংশোধিত সংবিধান বিভিন্ন সময়ে ব্যবহৃত হয়েছে। ফলে স্বৈরাচার হয়ে উঠেছে সরকার। মানুষের অধিকার লঙ্ঘন হয়েছে, গণঅভ্যুত্থান হয়েছে।
আইনজীবীরা বলেন, বর্তমান সংবিধানে ত্রুটি আছে, এর যৌক্তিকভাবে সংশোধন করা উচিত। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের যথাযথ বাস্তবায়নে দেশ পাল্টে যাবে।
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, সংবিধান রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক নিয়মাবলী, যেখানে প্রজাতন্ত্রের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব-কর্তব্য ও সরকারের ক্ষমতা সন্নিবেশিত থাকে। আমাদের সংবিধান মূলত ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতেই প্রণীত হয়েছে, অথচ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক মুসলমান।
তিনি বলেন, আমাদের এই সংবিধানটি মদিনা সনদের আলোকে প্রণয়ন করতে পারলে দেশে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরে আসত, জাতি ধর্ম নির্বিশেষ সবাই অধিকার পেতো। তার মতে, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র সংবিধানে ঢুকিয়ে একে এই মাটির সঙ্গে সম্পর্কহীন করে ফেলা হয়েছে। এই দুটি বিষয় সংবিধানের অন্যতম ত্রুটি। সংবিধানকে এমনভাবে সংশোধন করা উচিত যাতে, দেশের মানুষ সমান সুযোগ-সুবিধা পায়, বৈষম্য না থাকে।
আইনজীবী শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, এ ক্ষেত্রে আমাদের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট চিন্তা করতে হবে। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী ধর্মপ্রাণ মুসলিম, সংবিধান সংশোধনের সময় সেই বিষয়টিকে মাথায় রাখতে হবে। সংবিধানের দুর্বলতার কারণেই জুলাই গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। অধিকারের জন্য প্রাণ দিতে হবে কেন?
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের বাহাত্তরের সংবিধান যদি সরকারগুলো মেনে চলতো, তাহলে ৫৪ বছর পর জাতিকে এই ট্র্যাজেডির মুখে পড়তে হতো না। আমরা সার্বিকভাবে একটি অন্য মার্গে পৌঁছাতে পারতাম।
গণঅভ্যুত্থানের পরে সংবিধান স্থগিত না সংবিধান কার্যকর আছে, এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ড. ইউনূস বর্তমান সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়েছেন। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই সংবিধানকে কার্যকর রেখেছে।
সৈয়দ মামুন মাহবুব বলেন, নির্বাচিত সরকার স্বৈরাচার হলে কি আন্দোলন করা যায় না? সংবিধানের মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট আর্টিকেল এই অধিকার দিয়েছে। ৭২ এর মূল সংবিধানে একটিও অনুচ্ছেদ নেই যেখানে বঙ্গবন্ধুর প্রশংসা রয়েছে, একটি অনুচ্ছেদ নেই যেখানে কোনো সরকারকে স্বৈরাচারী হতে বলে। তাই বলে এটি অলঙ্ঘনীয় না। ৭০ অনুচ্ছেদের যৌক্তিক সংশোধন করা উচিত। এটি শুধু সরকার পরিবর্তনের প্রসঙ্গ উঠলে অনাস্থা ভোট ও বাজেট পাসের ক্ষেত্রেই থাকা উচিত। এছাড়া আইন প্রণয়ন থেকে যে কোনো বিষয়ে এমপিরা স্বাধীন থাকবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে থাকা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার বাস্তবায়ন করলে বাংলাদেশ পাল্টে যাবে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনির হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, সংবিধান যদি দেশের মানুষের বিরুদ্ধে চলে যায়, সেই সংবিধান সেখানেই অকার্যকর হয়ে যায়। দেশের মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে থাকা কোনো সংবিধান আসলে সংবিধানই না, সংবিধান হলো মানুষের স্বার্থের জন্য।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে এই দেশের ছাত্রজনতা বিদায় করেছে, কোনো পার্টি না। এই ছাত্র-জনতা দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করেছে। মৌলিক অধিকার খর্ব করার মাধ্যমে হাসিনা নিজেই সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। দেশের মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে যে সংবিধান চলে যায়, সেই সংবিধান আদতেই বাতিল হয়ে যায়।
আইনজীবী মনির হোসাইন বলেন, মানুষের প্রয়োজনে সংবিধান, মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে সংবিধান যদি গোষ্ঠী স্বার্থে কাজ করে তাহলে সেক্ষেত্রে সেটি অবৈধ হয়ে যায় এবং ওই সংবিধান বাতিলযোগ্য হয়ে যায়।
সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী আরও বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ভারতের ইচ্ছানুসারে, তাদের প্রভাবে আমাদের সংবিধান প্রণীত হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতা ও রবীন্দ্রসংগীতকে জাতীয় সংগীত করা এর দৃষ্টান্ত। ফলে এই সংবিধানের সুফল আমরা পাইনি। দেশের মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে সংবিধান প্রণীত হয়েছে।
এফএইচ/এমএমকে/জিকেএস

18 hours ago
4









English (US) ·