ভালোবাসা মানে শুধু একসঙ্গে থাকা নয় — বরং দু’জন মানুষের স্বাধীনভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ তৈরি করা। কিন্তু অনেক সম্পর্কেই দেখা যায়, এক পক্ষের অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ বা নির্ভরশীলতা ধীরে ধীরে অন্যজনের ব্যক্তিস্বাধীনতাকে গ্রাস করে নিচ্ছে।
সম্পর্কে ব্যক্তিস্বাধীনতা না থাকলে বাইরে থেকে সব ঠিকঠাক দেখালেও ভিতরে জমতে থাকে মানসিক চাপ, বিরক্তি ও দূরত্ব।
ভালোবাসা আর নিয়ন্ত্রণ এক নয়
মনোবিজ্ঞানী ড. জেনিফার ফ্রেইডের ‘বিট্রেয়াল ট্রমা’ তত্ত্বে বলা হয়েছে, যেকোনো সম্পর্কে স্বাধীনতার অভাব ও আবেগীয় নিয়ন্ত্রণের প্রবণতা ভালোবাসার স্থায়িত্ব নষ্ট করে দেয়।

যখন কোনো সম্পর্কে একজন মানুষ অন্যজনের মতামত, সিদ্ধান্ত বা ব্যক্তিগত জায়গা নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেন—তখন ভালোবাসা ধীরে ধীরে ভারসাম্য হারায়। শুরুতে হয়তো সেটা যত্ন বা আগ্রহের মতো মনে হয়, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা নিয়ন্ত্রণের অভ্যাসে পরিণত হয়।
যেমন—সঙ্গীর পোশাক, বন্ধুত্ব, সময় কাটানোর ধরন, এমনকি কাজের সিদ্ধান্তেও কেউ যদি ক্রমাগত হস্তক্ষেপ করে, তবে অপরজন নিজের ইচ্ছা ও স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেন। এতে আত্মসম্মান কমে যায়, মনে হয় “আমি নিজের মতো করে কিছুই করতে পারি না।”

মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, এই আবেগীয় নিয়ন্ত্রণ বা ইমোশনাল কন্ট্রোল আসলে একধরনের মানসিক চাপ, যা ধীরে ধীরে ভালোবাসাকে ক্ষয় করে ফেলে। কারণ ভালোবাসা টিকে থাকে বিশ্বাস, সম্মান ও পারস্পরিক স্বাধীনতার ওপর। যেখানে একজন নিজের মতো থাকতে পারে, অথচ অন্যজনের ভালোবাসাও অনুভব করতে পারে—সেখানেই সম্পর্কটা দীর্ঘস্থায়ী হয়।
স্বাধীনতা না থাকার মানসিক প্রভাব
২০২০ সালে জার্নাল অব সোশ্যাল অ্যান্ড পারসোনাল রিলেশনশিপস-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, সম্পর্কে ব্যক্তিস্বাধীনতা কমে গেলে উদ্বেগ, আত্ম-সন্দেহ ও আত্মসম্মানহীনতার প্রবণতা বেড়ে যায়। অনেকেই ক্রমে সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পান, আত্মবিশ্বাস হারান এবং সম্পর্ক থেকে মানসিকভাবে দূরে সরে যান। দীর্ঘমেয়াদে এটি ইমোশনাল বার্নআউট বা সম্পর্কের অবসাদ তৈরি করে।

স্বাধীনতা মানে দূরত্ব নয়
অনেকেই ভাবেন, স্বাধীনতা দিলে সম্পর্ক নষ্ট হবে। বাস্তব এর উল্টো — মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, যারা একে অপরকে স্বাধীনতা দেন, তাদের সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয়। নিজের মতো সময় কাটানো, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করা বা ব্যক্তিগত লক্ষ্য পূরণের স্বাধীনতা দু’জনকেই মানসিকভাবে পরিপূর্ণ করে তোলে।

কীভাবে ভারসাম্য রাখা যায়
১. কথাবার্তায় স্বচ্ছতা রাখুন: সিদ্ধান্তে মতভেদ হলে রাগ না করে আলোচনা করুন।
২. স্পেস দিন: আপনার সঙ্গী যদি একা সময় কাটাতে চান, সেটি দূরত্ব নয় — এটি মানসিক রিচার্জের অংশ।
৩. বিশ্বাস গড়ে তুলুন: প্রতিটি বিষয়ে সন্দেহ না করে আস্থা রাখুন।
৪. নিজের জীবনেও ফোকাস রাখুন: সম্পর্কের বাইরে নিজের শখ, কাজ ও স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখুন।
একটি স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক তখনই টেকে, যখন ভালোবাসার সঙ্গে থাকে সম্মান ও স্বাধীনতা — যেখানে দু’জনই নিজেদের মতো থাকতে পারেন। একে অপরের পাশে থেকে পরিপূর্ণ বোধ করেন।
সূত্র: জার্নাল অব সোশ্যাল অ্যান্ড পার্সোনাল রিলেশনশিপস, আমেরিকান সাইকোলজিকাল অ্যাসোসিয়েশন (এপিএ)
এএমপি/জেআইএম

4 days ago
4








English (US) ·