সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর এল-ফাশারে সংঘটিত সহিংসতা ও নির্যাতনের অভিযোগে নিজেদের কয়েকজন যোদ্ধাকে গ্রেফতার করেছে দেশটির আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)। এদিকে জাতিসংঘ জানিয়েছে, দারফুর ও পার্শ্ববর্তী কোরদোফান অঞ্চলে ‘ভয়াবহতা অব্যাহত’ রয়েছে।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত আরএসএফ রোববার (২৬ অক্টোবর) দীর্ঘ ১৮ মাসের অবরোধ শেষে এল-ফাশার দখল করে নেয়। এর মাধ্যমে তারা পশ্চিম দারফুরে সেনাবাহিনীর শেষ শক্ত ঘাঁটিটিও দখলে নেয়।
শহরটি দখলের পর আরএসএফের বিরুদ্ধে ব্যাপক নৃশংসতার অভিযোগ উঠেছে। শহর থেকে পালিয়ে পাশের টাওইলা শহরে পৌঁছানো বেঁচে থাকা কয়েকজন বেসামরিক নাগরিক এএফপিকে জানিয়েছেন, শহরে গণহত্যা, শিশু হত্যাসহ বেসামরিক মানুষকে মারধর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) রাতে এক বিবৃতিতে আরএসএফ জানায়, এল-ফাশার মুক্তির সময় সংঘটিত কিছু অনিয়মের অভিযোগে’ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের নাম আবু লুলু, যিনি টিকটকে প্রকাশিত একাধিক ভিডিওতে নিরস্ত্র পুরুষদের গুলি করতে দেখা গেছে।
এএফপির যাচাই করা এক ভিডিওতে দেখা যায়, আবু লুলু খুব কাছ থেকে কয়েকজন নিরস্ত্র ব্যক্তিকে গুলি করছেন। আরেক ভিডিওতে তাকে অস্ত্রধারী কিছু লোকের সঙ্গে দাঁড়িয়ে নিহতদের লাশের পাশে উল্লাস করতে দেখা যায়।
আরএসএফ একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে আবু লুলুকে উত্তর দারফুরের এক কারাগারে আটক অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। আরএসএফ বলেছে, তিনি গ্রেফতার হয়েছেন ও আইনের অধীনে ন্যায্য বিচার নিশ্চিত করা হবে।
শহরটি দখলের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরএসএফের পোশাক পরা ব্যক্তিদের গুলি করে হত্যা করার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। শহরটি দখলের পর থেকেই সেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সুদানি কবি এমতিথাল মাহমুদ এএফপিকে জানিয়েছেন, তিনি আরএসএফের একটি পোস্টে প্রকাশিত ভিডিওতে নিজের কাজিন নদিফাকে মাটিতে পড়ে থাকা অবস্থায় শনাক্ত করেছেন।
সুদানি বিশ্লেষক খলুদ খায়ের বলেছেন, তিনি আরএসএফের এই গ্রেফতারের এই দাবির বিষয়ে সন্দিহান। আমরা আশা করছি, এসব নৃশংসতা বন্ধ হবে না, বিশেষ করে অ-আরব জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে, তিনি বলেন।
তিনি জানান, দারফুরের জাঘাওয়া, ফুর, বেরতি ও মাসালিত সম্প্রদায়কে টার্গেট করা হচ্ছে। ২০২৩ সালে পশ্চিম দারফুরের রাজধানী এল-জেনিনায় মাসালিত জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যার অভিযোগও ছিল আরএসএফের বিরুদ্ধে, যেখানে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিলেন।
জাতিসংঘের হিসেবে, রবিবার থেকে এখন পর্যন্ত এল-ফাশার থেকে প্রায় ৩৬ হাজার মানুষ পালিয়েছে। শহরে অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকা আরও প্রায় ১ লাখ ৭৭ হাজার মানুষের ভাগ্য অজানা। এছাড়া উত্তর দারফুরের তিনা শহর থেকেও প্রায় ১ হাজার ৭৫০ জন নাগরিক প্রতিবেশী চাদে পালিয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা পরিষদে বলেন, এল-ফাশারে আরএসএফ প্রবেশের পর থেকে গণহত্যার বহু বিশ্বাসযোগ্য রিপোর্ট পাওয়া গেছে। আমরা হয়তো তাদের আর্তনাদ শুনতে পাচ্ছি না, কিন্তু ভয়াবহতা অব্যাহত রয়েছে।
ফ্লেচার বলেন, আরএসএফ তদন্ত শুরু করার দাবি করলেও উত্তর দারফুরের সাম্প্রতিক ভয়াবহ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
এদিকে, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাবের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, স্যাটেলাইট ছবিতে শহরের বিভিন্ন স্থানে এমন ক্লাস্টার দেখা যাচ্ছে যা সম্ভবত ‘প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহাবশেষ’ ও কিছু স্থানে রক্তের দাগের মতো বিবর্ণতা লক্ষ্য করা গেছে।
জাতিসংঘ জানায়, রোববার (২৬ অক্টোবর) থেকে বুধবারের (২৯ অক্টোবর) মধ্যে উত্তর কোরদোফান রাজ্যের পাঁচটি এলাকায় ৩৫ হাজারেরও বেশি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। ওই অঞ্চলের বারা শহরে অন্তত ৫০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে পাঁচজন রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকও ছিলেন।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) আরএসএফ অভিযোগ করে, সেনাবাহিনী উত্তর কোরদোফানের এক বিদ্যালয়ে ড্রোন হামলা চালিয়েছে, যাতে বহু শিক্ষার্থী ও শিক্ষক নিহত হয়েছেন। তবে সেনাবাহিনী এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এল-ফাশার দখলের মাধ্যমে আরএসএফ এখন দারফুরের পাঁচটি রাজ্য রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ও কার্যত দেশটিকে পূর্ব-পশ্চিম অক্ষ বরাবর বিভক্ত করেছে। সেনাবাহিনী উত্তর, পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে।
জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, সহিংসতা এখন দারফুর ছাড়িয়ে কোরদোফানেও ছড়িয়ে পড়ছে, যা নতুন এক সামরিক সংঘাতের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
সূত্র: এএফপি
এসএএইচ

21 hours ago
7









English (US) ·