অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স দেখিয়ে নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর সঙ্গে সঙ্গে আবেগের ঢেউয়ে ভাসতে শুরু করেছে পুরো ভারত। বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নশিপ নিশ্চিত হওয়ার পর পরই ভারতীয় দলের ক্রিকেটাররা প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তাদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। ওপেনার স্মৃতি মন্ধানা জানান, বিশ্বকাপের জন্য ৪৫টি দিন ঘুমাতে পারেননি তারা। এখন সব স্বার্থক মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে, কষ্টের সব প্রতিদান তারা পেয়ে গেছেন।
নবি মুম্বাইয়ের ডিওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামে ঐতিহাসিক শিরোপা জয়ের পর মাঠে ও মাঠের বাইরে দেখা গেল আবেগে ভাসা এক ভারতীয় দলকে — কেউ কাঁদছেন, কেউ হাসছেন, কেউ কেবল অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে আছেন “চ্যাম্পিয়ন- ইন্ডিয়া” লেখা সেই মুহূর্তটির দিকে।
শেফালি বার্মা (ফাইনালসেরা)
ম্যাচসেরা নির্বাচিত শেফালি বার্মা বললেন, ‘শুরুতেই বলেছিলাম, ঈশ্বর নিশ্চয়ই আমাকে কোনো বিশেষ কাজের জন্য পাঠিয়েছেন, আজ সেটা প্রমাণ হলো। আমি সত্যিই ভাষাহীন। মাঝপথে দলে ঢোকা সহজ ছিল না; কিন্তু নিজের ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। আজ আমার একটাই চিন্তা ছিল— দলকে জেতাতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্মৃতি দি, হারমান দি— দু’জনই আমাকে সবসময় উৎসাহ দিয়েছেন। সিনিয়ররা বলেছিলেন, নিজের স্বাভাবিক খেলা খেলতে, সেটাই করেছি। আজ যখন গ্যালারিতে শচিন স্যারকে দেখলাম, তখনই আলাদা এক এনার্জি পেলাম। তার উপস্থিতিই আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে।’
দীপ্তি শর্মা (সিরিজসেরা)
টুর্নামেন্টজুড়ে ব্যাট-বল হাতে দারুণ পারফর্ম করে দীপ্তি শর্মা জিতেছেন টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার। তিনি বলেন, ‘এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না, এটা যেন এক স্বপ্ন। বিশ্বকাপের ফাইনালে অবদান রাখতে পেরে গর্বিত। প্রতিটা ম্যাচ থেকেই আমরা ইতিবাচক কিছু নিতে চেয়েছি। সমর্থকদের ধন্যবাদ জানাতে চাই— তাদের ছাড়া এটা সম্ভব হতো না।’
তিনি যোগ করেন, ‘২০১৭ সালের পর থেকে অনেক কিছু বদলেছে, তবে আমি চাই এখন থেকে আমাদের আরও বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ দেওয়া হোক। এতে নারী ক্রিকেট আরও এগিয়ে যাবে।’
আমানজোত কউর
আমানজোত কউর, যিনি ম্যাচে এক গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচ ধরে ভারতের জয় নিশ্চিত করেন, আবেগে কণ্ঠ রুদ্ধ করে বলেন, ‘ওলভারডটের ক্যাচটা আমি প্রথমবার ফেলে দিয়েছিলাম; কিন্তু দ্বিতীয়বার সুযোগ পেয়ে ধরতে পেরে মনে হচ্ছে ঈশ্বর পাশে ছিলেন। এই জয় শুধু আমাদের নয় — এটা পুরো ভারতের জয়। আমার দাদি অসুস্থ, তিনি বাড়ি থেকে দেখছেন; এই জয় তারও।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই মুহূর্ত শুধু শুরুর সূচনা। ভারতীয় নারী ক্রিকেট এখন নতুন এক যুগে প্রবেশ করেছে। আমরা এখন প্রতিটি ফরম্যাটে আধিপত্য বিস্তার করতে প্রস্তুত।’
রিচা ঘোষ
রিচা ঘোষ, যিনি শেষ দিকে ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেছেন, জানালেন, ‘এই জয়ের গুরুত্ব অসীম। বহুদিন ধরে আমরা অপেক্ষা করছিলাম — কবে কাপ উঠবে আমাদের হাতে। আজ আমরা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। এটা বর্ণনা করার মতো অনুভূতি নয়। শেষ মুহূর্তে প্রচণ্ড চাপ ছিল; কিন্তু সতীর্থরা আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিলেন। সেটাই আমাকে সাহস দিয়েছে।’
প্রতীকা রাওয়াল, চোটের কারণে মাঠে নামতে না পারলেও প্রতীকা রাওয়াল হুইলচেয়ার থেকে উঠে টিমমেটসদের সঙ্গে উদযাপন করেন। তিনি বলেন, ‘এই পতাকাটা কাঁধে নেওয়া মানে জীবনের সবচেয়ে বড় গর্ব। বাইরে বসে দেখা খুব কঠিন; কিন্তু প্রতিটা উইকেট, প্রতিটা ছক্কায় আমি কেঁপে উঠছিলাম। এই দলটাই আমার পরিবার।”
স্মৃতি মন্ধানা
দলের সহ-অধিনায়ক ও ওপেনার স্মৃতি মন্ধানা ছিলেন পুরোপুরি আবেগে ভাসা। তিনি বললেন, ‘আমি জানি না কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবো। এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না আমরা ‘বিশ্বচ্যাম্পিয়ন’। ঘরের মাঠে, এমন এক বিশ্বকাপে — এটা অবিশ্বাস্য। প্রতিটা বিশ্বকাপে আমরা স্বপ্ন দেখি, কিন্তু এইবার সেই স্বপ্ন সত্যি হলো। এই ৪৫ দিন ঘুমাতে পারিনি, কিন্তু এই ট্রফির জন্য সেটাই সবচেয়ে মূল্যবান সময়।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০১৭ আর ২০২৩ সালের ব্যর্থতা আমাদের শক্তি জুগিয়েছে। এবার সবাই মিলে লড়েছি — কেউ কাউকে একা ফেলে রাখেনি। এই টিমের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো ‘একতার স্পিরিট’। আমরা একে অপরের সাফল্যে খুশি হয়েছি, ব্যর্থতায় একে অপরকে জড়িয়ে ধরেছি — এই পরিবেশটাই যাদু।’
কোচ অমোল মুজুমদার
দলের প্রধান কোচ অমোল মুজুমদার বলেন, ‘এই জয় শুধু একটি ট্রফি নয়, এটি ভারতের নারী ক্রিকেটের মোড় ঘোরানো মুহূর্ত। মেয়েরা যা করেছে, তা অবিশ্বাস্য। তারা প্রতিটি ভারতীয়কে গর্বিত করেছে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘শেষ দুই বছরে আমরা ফিটনেস ও ফিল্ডিংয়ের ওপর অনেক কাজ করেছি। আজ ফাইনালে সেটারই ফল মিলেছে। শেফালি ভার্মা সম্পর্কে এক কথায় বলব — ‘ম্যাজিক্যাল’। এমন চাপের ম্যাচে ওর পারফর্মেন্স ছিল দুর্দান্ত।’
এক ঐতিহাসিক অধ্যায়ের সূচনা
ভারতের নারী দলের এই জয়ে শুধু একটি কাপ জেতা নয়, বরং এটি নারী ক্রিকেটের এক নতুন যুগের সূচনা। স্মৃতি মন্ধানা, হারমানপ্রিত কউর, শেফালি বার্মা, দীপ্তি শর্মা — এরা এখন কোটি নারীর প্রেরণার নাম। ‘আজ আমরা শুধু বিশ্বকাপ জিতিনি, আমরা ভারতীয় নারী ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ লিখেছি।’— স্মৃতি মন্ধানা।
আইএইচএস/

7 hours ago
6









English (US) ·