৫ উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে মেলে না ওষুধপথ্য ও চিকিৎসাসেবা
সারাদেশ
নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি 2025-11-05নান্দাইল উপজেলায় ৫টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মিলছে না ওষুধপথ্য ও চিকিৎসাসেবা। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে লোকবলের সংকট রয়েছে। কর্মরতরাও নিয়মিত উপস্থিত থাকেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী, নান্দাইল উপজেলার জনসংখ্যা ৪ লাখের ওপরে। তাদের চিকিৎসাসেবার জন্য সদরে রয়েছে একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫টিতে রয়েছে ৫টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র। ৭টি ইউনিয়নে রয়েছে একটি করে পরিবার কল্যাণ ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। প্রতিটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজন করে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো), ফার্মাসিস্ট, মিডওয়াইফ, আয়া এবং এমএলএসএস মিলে ৫টি পদ রয়েছে। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্র সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা রেখে রোগীদের পরামর্শ এবং বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়ার কথা। এই নিয়ম মানছেন না কর্মরতরা। অভিযোগ রয়েছে, কেউ কেউ ইচ্ছেমতো এক দিন পরপর উপস্থিত থাকেন। কোনো কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মিডওয়াইফকে রোগীদের চিকিৎসা দিতে দেখা যায়। গত এক সপ্তাহে ৫টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ঘুরে এর সত্যতা পাওয়া গেছে।
গত ২৮ অক্টোবর বেলা ১১টার দিকে গাঙ্গাইল উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান ফটকে তালা দেওয়া। তাঁর সামনে বসে চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষা করছেন কয়েকজন নারী-পুরুষ। এ সময় পাছদরিল্লা গ্রামের বেদেনা আক্তার জানান, তিনি সকাল ১০টা থেকে এখানে চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষা করছেন।
জ্বরের ওষুধ নিতে এসেছেন গয়েসপুর গ্রামের মকবুল হোসেন। ময়না বেগম এসেছেন তাঁর অন্তঃসত্ত্বা মেয়েকে চিকিৎসক দেখাতে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে কাউকে তালা খুলতে দেখা যায়নি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে ফোন করলে জানান, ওখানে কর্মরত স্যাকমো গত রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডিউটি করেছেন, এখন তিনি ঘুমাচ্ছেন। ফার্মাসিস্ট অসুস্থ, অন্যদের অনুপস্থিতির কারণ জানেন না তিনি।
রোগী মকবুল হোসেন বলেন, ‘এইহানে আইয়া আমরা নিয়মিত ডাক্তার কেউরেই পাই না। যদি কপাল গুনে কোনোদিন পাই, ওষুধ নিতারিনা (নিতে পারি না)। ট্যাহা-পইসার অভাবে অন্য ডাক্তারের কাছেও যাইতারিনা (যেতে পারি না)।’
রাজগাতি ইউপির দরিল্লা উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, একটি কক্ষে ফার্মাসিস্ট পলাশ শিবনাথ স্থানীয় দুজনের সঙ্গে বসে গল্প-গুজব করছেন। তিনি জানান, এখানে এক মাস ধরে স্যাকমো নেই। মিডওয়াইফ কাজ করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, আয়া নেই, পিয়ন অসুস্থ, ওষুধের ঘাটতি আছে।
স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া বলেন, এখানে এমদাদুল মাগফুর নামে একজন এমবিবিএস চিকিৎসককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। ৩ বছর আগে তিনি বদলি হয়ে গেছেন।
মোয়াজ্জেমপুর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চারপাশের ডোবা-পুকুর কচুরিপানায় ঘেরা। কর্দমাক্ত পথ দিয়ে ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, মিডওয়াইফ ফাহমিদা দুই রোগীকে ওষুধ দিচ্ছেন। ফাহমিদা জানান, এখানে কর্মরত স্যাকমো লিনা আক্তার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজ করেন। ফার্মাসিস্ট আতিকুর রহমান পরীক্ষার হলে ডিউটিতে গেছেন। এমএলএসএস পদটি চার বছর ধরে খালি, আয়াও অবসরে গেছেন। স্থানীয় মোহাম্মদ আলী বলেন, ফার্মাসিস্ট ও স্যাকমো পালাক্রমে একদিন পরপর আসেন। রোগী এলেও প্রায় দিনই ফেরত যান, ওষুধ তো পাওয়াই যায় না।
গত ২৯ অক্টোবর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে খারুয়া ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দরজায় তালা দেওয়া দেখা গেছে। মাঠে গরু চড়াতে আসা পাশের একটি বিদ্যালয়ের দপ্তরি জালাল উদ্দিন জানান, পরিবার পরিকল্পনার একজন নারী এসেছিলেন আধা ঘণ্টা আগে, চলে গেছেন। সজীব মিয়া নামে একজন জানান, এখানে কর্মরতরা পালাক্রমে একজন করে একদিন পরপর ঘণ্টাখানেকের জন্য আসেন। রোগী এলেও প্যারাসিটামল ও গ্যাসের ওষুধ ছাড়া কিছুই নিতে পারেন না। তাঁর দাবি, স্থানীয় একটি ফার্মেসিতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চাবিটি রাখা থাকে, যিনিই আসেন সেখান থেকে চাবি নিয়ে ভেতরে ঢোকেন।
পাঁচরুখী উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে সেটিও বন্ধ পাওয়া গেছে। সেখানে কর্মরত ডেমিয়েন ফাউন্ডেশনের জুনাইদ সিদ্দিকী জানান, ফার্মাসিস্ট মিজানুর রহমান এসেছিলেন, বাসায় চলে গেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৩ বছর ধরে স্যাকমো নেই। আয়া ও এমএলএসএস পদেও
কেউ নেই। রোগীরা কোনো ওষুধ পান না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শামীমা সুলতানার ভাষ্য, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের অভাব থাকায় স্যাকমোদের এনে কাজ করাতে হয়। তাই তাদের অনেকের পক্ষে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দায়িত্ব পালন সম্ভব হয়ে ওঠে না। অন্যদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ময়মনসিংহের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ফয়সল আহমেদ বলেন, ‘লোকবল নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রায় শেষের পথে। তাছাড়া নানা প্রক্রিয়া শেষে সারাদেশের ওষুধ একসঙ্গে কেনা হয়। এসব কারণে কখনও কখনও ওষুধ সরবরাহে একটু সমস্যা হয়ে যায়, তবে সহসাই এসব সমস্যা মিটে যাবে।’
© Samakal

1 day ago
1









English (US) ·