তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন থেকে সৃষ্ট আপিলের পঞ্চম দিনের শুনানি শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য ২ অক্টোবর দিন ঠিক করেছেন আপিল বিভাগ।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
এ দিন আদালতে প্রথমে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেনের পক্ষে শুনানি করেন এ এস এম শাহরিয়ার কবির। পরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল।
পরে জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেছেন, এ দেশে যত গুম, খুন, মারামারি, হানাহানি- সবকিছুর মূলে হচ্ছে এ রায়। সেটাই বলে শুরু করেছি। আদালতে বলেছি, আপনাদের (আদালতে) ক্ষমতা খর্ব করার এখতিয়ার কারও নেই। সুপ্রিম কোর্ট ইজ এ সুপ্রিম। কিন্তু খায়রুল হক (সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক) আপনাদের ক্ষমতা একদিকে খর্ব করেছেন, অন্যদিকে তিনি বলেছেন, কোনো বিচারক তত্ত্বাবধায়ক প্রধান থাকতে পারবেন না। লাভজনক পদে যেতে পারবেন না। অথচ তিনি নিজেই আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন।
আরও পড়ুন
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল প্রক্রিয়া ছিল অবৈধ: শিশির মনির
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে দেশ পরিচালনা করতে হবে: আমীর খসরু
শুনানিতে তিনি বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার কথা জামায়াতে ইসলামী প্রথম উপস্থাপন করেছে। এরপর আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি উপস্থাপন করে। পরে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নেয়।
এর আগে গত মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) জামায়াতের পক্ষে শুনানি শেষ করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। তারও আগে, পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিকের পক্ষে আপিল শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী শরীফ ভূইয়া।
১৪ বছর আগে, ২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে রায় দেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ। আদালতের রায়ের পর সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী এনে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী এই সরকারব্যবস্থা বাদ দেওয়া হয়।
গত বছর জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২৭ আগস্ট ওই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি আবেদন করেন। এরপর ১৭ অক্টোবর আবেদন করেন বিএনপির মহাসিচব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গত বছরের ২৩ অক্টোবর আরেকটি আবেদন করেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছর আরেকটি আবেদন করেন। এছাড়া একটি সংগঠন ইন্টারভেনার (পক্ষ) হিসেবে যুক্ত হয়।
গত ২৭ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে করা আবেদনের শুনানি শেষে আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়। বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তির এবং বিএনপির মহাসচিবের করা রিভিউ আবেদন থেকে উদ্ভূত আপিলের সঙ্গে রিভিউ আবেদনগুলো শুনানির জন্য যুক্ত হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় ১৯৯৬ সালে। এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৮ সালে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিনজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন।
২০০৪ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট রিট খারিজ করে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করে। এ রায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে আপিল করে রিট আবেদনকারীপক্ষ। এই আপিল মঞ্জুর করে আপিল বিভাগ ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেয়।
সেই রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বাতিলসহ বেশকিছু বিষয়ে আনা পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।
এফএইচ/ইএ/জেআইএম

 1 day ago
                        12
                        1 day ago
                        12
                    








 English (US)  ·
                        English (US)  ·