চাঁদপুর শহরের মুক্তিযোদ্ধা সুজন তালুকদার জীবিত থাকা সত্ত্বেও তাকে কাগজে-কলমে ‘মৃত’ দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় ভাতা উত্তোলন করে আসছেন তার স্ত্রী অসীমা তালুকদার। অভিযোগ রয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ছাড়াও তিনি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে তা আত্মসাৎ করেছেন এবং এসব অর্থ নিজের নামে বিভিন্ন স্থানে স্থানান্তর করেছেন।
মঙ্গলবার (০৬ মে) চাঁদপুর শহরের চিত্রলেখা মোড়ের সোনালী ব্যাংক শাখায় গিয়ে এই অনিয়মের তথ্য পাওয়া যায়। ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মাহবুব আলম জানান, তাদের রেকর্ড অনুযায়ী সুজন তালুকদার ‘মৃত’ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত এবং তার স্ত্রী নিয়মিত ভাতা উত্তোলন করছেন। তিনি আরও জানান, ব্যাংকটির মাধ্যমে ৩৯৫ জন মৃত মুক্তিযোদ্ধার ওয়ারিশ নিয়মিত ভাতা উত্তোলন করেন।
তবে সরকারি ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা তথ্য ব্যবস্থাপনা সিস্টেম’-এ দেখা যায়, সুজন তালুকদার এখনো জীবিত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিবন্ধিত। তার মুক্তিযোদ্ধা নম্বর ০১১৩০০০১৬০২।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, সুজন তালুকদার একসময় প্রবাসে ছিলেন। সে সুযোগে স্ত্রী অসীমা তালুকদার নানা অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। তার বিরুদ্ধে পরকীয়া, স্বামীকে গৃহবন্দি রাখা এবং নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য অনুযায়ী, অসীমা এখন সুজনের সম্পত্তির দখল নিতে তাকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
সুজন তালুকদারের ভাতিজি বিপাশা তালুকদার বলেন, ‘আমার কাকাকে গৃহবন্দি করে রেখেছে। কাগজে-কলমে তাকে মৃত দেখিয়ে উনার ভাতা নিজের নামে নিচ্ছেন। আমাদের ধারণা, তিনি এখন কাকাকে সরিয়ে দিয়ে সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা করছেন।’
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও সামাজিক সংগঠনগুলো এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা বিনয় ভূষণ মজুমদার, আমিনুর রহমান ও বাসুদেব মজুমদার বলেন, এটি একটি ভয়াবহ প্রতারণা। রাষ্ট্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, ‘অভিযোগের সত্যতা মিললে অবিলম্বে ভাতা বন্ধসহ আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সাংবাদিকরা তথ্য-প্রমাণ দিলে পুরস্কৃত করা হবে।’
অভিযুক্ত অসীমা তালুকদার অবশ্য দাবি করেছেন, তিনি শিগগির চাঁদপুর ছেড়ে ঢাকায় চলে যাবেন। সুজনকে তার আত্মীয়দের জিম্মায় চিকিৎসার জন্য রেখে যাবেন বলেও জানান। তবে ভাতার অর্থ কোথায় ব্যবহার হয়েছে, সে বিষয়ে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।
এ ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানহানি ও রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাতের জঘন্য উদাহরণ হিসেবে আলোচিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, এর বিচার না হলে ভবিষ্যতে মুক্তিযোদ্ধা ভাতার নামে এ ধরনের প্রতারণা বন্ধ করা কঠিন হবে।

 5 months ago
                        47
                        5 months ago
                        47
                    








 English (US)  ·
                        English (US)  ·