টিউমারে দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে মা-ছেরে জীবন

1 day ago 5

নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার অতিথপুর গ্রামের এককোণে জরাজীর্ণ কুঁড়েঘরে বাস করেন কাজল মিয়া (২২) ও তার মা শাহানা খাতুন (৪৫)। মা-ছেলে দুজনই আক্রান্ত ভয়াবহ টিউমারে। যা ধীরে ধীরে কেড়ে নিচ্ছে তাদের স্বাভাবিক জীবন। সুন্দরের প্রতিচ্ছবি যে মুখ, সেই মুখই এখন কাজলের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জন্মের সময় কাজলের মুখে ছিল ছোট একটি টিউমার। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটি বড় হতে থাকে। এখন তার এক চোখ ও মুখ পুরোপুরি ঢেকে গেছে। মুখের নিচে ঝুলে পড়েছে বিশাল মাংসপিণ্ড। খাওয়াদাওয়া করতে কষ্ট হয়, এক চোখে দেখতে পান না। বিকৃত চেহারার কারণে এখন গ্রামের লোকেরা তার সঙ্গে মিশতে চান না, একাকিত্ব তার নিত্যসঙ্গী।

‘আমার খুব ইচ্ছা হয় স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে। এমন জটিল রোগ হওয়ায় এলাকার কোনো মানুষ আমার সঙ্গে মেশে না। একাই চলতে হয়। এই অবস্থায় কোনো কাজকর্ম করতে পারি না। মানুষের কাছে হাত পেতে যা পাই, তা দিয়ে চলি। টিউমার ভালো হলে কাজ করেই খেতে পারতাম।’

শুধু কাজল নন, তার মা শাহানা খাতুনও একই রোগে ভুগছেন। গালের পাশ থেকে ঝুলে পড়েছে টিউমার, যা বুক পর্যন্ত বিস্তৃত। শরীরের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গুটি।

স্ত্রী ও ছেলের এমন বিরল রোগ নিয়ে দিশাহারা দিনমজুর মিরাজ আলী। সামান্য মজুরির টাকায় সংসার চালাতেই যেখানে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে এই ভয়াবহ রোগের চিকিৎসা করানো তার পক্ষে কল্পনাতীত। দারিদ্র্য আর সমাজের অবহেলায় আরও কোণঠাসা হয়ে পড়েছে পরিবারটি।

আরও পড়ুন:
চিকিৎসা বন্ধ, হুইলচেয়ারে বসেই চলছে শাওনের জীবিকার লড়াই
তরুণ আশিকের দুটি কিডনিই বিকল, সাহায্যের আবেদন
দুই মেয়ের চিকিৎসায় কিডনি বিক্রি চান হতভাগা বাবা

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মিরাজ আলীর স্ত্রী শাহানার মুখে বিয়ের আগে থেকেই ছোট টিউমার ছিল। শরীরে ছিল ছোট ছোট গুটি টিউমার। বয়স বাড়ার সঙ্গে সেই টিউমার বড় হয়ে ঝুলে পড়েছে। শরীরজুড়ে দেখা দিয়েছে অসংখ্য টিউমার। দুই ছেলে আর এক মেয়ের মধ্যে মেজ ছেলে কাজলের মুখে শুধু এমন টিউমার দেখা দিয়েছে। অন্যদের শরীরে কোনো টিউমার নেই।

‘ছেলে আর স্ত্রী দুজনেই অসুস্থ। আমি গরীব মানুষ, কেমন করে ওদের চিকিৎসা করাবো বুঝি না। মানুষের কাছে চেয়ে যা পাই তা দিই খেতে। তাদের নিয়ে কী করবো একমাত্র আল্লাহই জানেন।’

বিরল রোগে আক্রান্ত কাজল মিয়া বলেন, ‘ছোটবেলায় কপালের কাছে ছোট একটা টিউমার হয়েছিল। সেটা বড় হতে হতে এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। এক চোখ টিউমারে ঢেকে যাওয়ায় সেই চোখে আর দেখতে পাই না। মুখ ঢেকে যাওয়ায় কথা বলতে ও খাবার খেতে কষ্ট হয়। এই অবস্থায় কোনো কাজকর্ম করতে পারি না। মানুষের কাছে হাত পেতে যা পাই, তা দিয়ে চলি। টিউমার ভালো হলে কাজ করেই খেতে পারতাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার খুব ইচ্ছা হয় স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে। এমন জটিল রোগ হওয়ায় এলাকার কোনো মানুষ আমার সঙ্গে মেশে না। একাই চলতে হয়।’

কাজলের মা শাহানা খাতুন বলেন, ‘আমার দিন তো শেষের দিকে। ছেলেটার সামনে সারাজীবন পড়ে আছে। এমন রোগ নিয়ে বাকি জীবন কেমনে কাটাবে? এভাবে টিউমার বাড়তে থাকলে কী করবো বুঝি না। জটিল রোগের চিকিৎসা করানোর মতো সাধ্য আমাদের নেই। সরকারি সহায়তায় চিকিৎসা পেলে সে হয়ত স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতো।’

টিউমারে দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে মা-ছেরে জীবন

দিনমজুর মিরাজ আলী বলেন, ‘ছেলে আর স্ত্রী দুজনেই অসুস্থ। আমি গরীব মানুষ, কেমন করে ওদের চিকিৎসা করাবো বুঝি না। মানুষের কাছে চেয়ে যা পাই তা দিই খেতে। তাদের নিয়ে কী করবো একমাত্র আল্লাহই জানেন।’

কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, সরকারি বা বেসরকারি কোনো সহায়তা তারা এখনো পাননি। যদি কেউ এগিয়ে আসতো তবে এই হতদরিদ্র পরিবারটি রক্ষা পেতো।

প্রতিবেশী জিয়াউর রহমান বলেন, ‘ওদের অবস্থা খুব খারাপ। সরকারি সাহায্য পেলে হয়ত চিকিৎসা সম্ভব হতো। আমাদের সবার উচিত ওদের পাশে দাঁড়ানো।’

জানতে চাইলে বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. খবিরুল আহসান বলেন, ‘পরিবারের দুই সদস্যের অসুস্থতা বিষয়টি শুনিনি। খোঁজ নিয়ে তাদের চিকিৎসার সহায়তা করা হবে।’

এইচ এম কামাল/এমএন/জিকেএস

Read Entire Article