বসবাসের অযোগ্য রাবির শেরেবাংলা হল, বিকল্প আবাসন চান শিক্ষার্থীরা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ঐতিহ্যবাহী শেরেবাংলা হল এখন শিক্ষার্থীদের জন্য আতঙ্কের নাম। হলের দেয়াল ও ছাদে ফাটল, খসে পড়ছে পলেস্তারা, বৃষ্টির দিনে পানি ঝরছে কক্ষজুড়ে।
অথচ প্রশাসন থেকে আশ্বাস মিললেও দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন নেই। ভয় আর অনিশ্চয়তার মধ্যেই দিন কাটছে শিক্ষার্থীদের।
আবাসিক শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হলের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির দিনে ছাদ বেয়ে পানি পড়ে। হঠাৎ হঠাৎ ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে। একাধিকবার হল প্রশাসনকে জানানো হয়েছে, কিন্তু দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কখনো কখনো হলের ওয়াশরুমে সাপ দেখা যায়। হলটি বসবাসের অনুপযুক্ত হওয়ার কারণে এবং নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকায় নবনির্মিত হলে ছেলেদের স্থানান্তরের দাবি জানিয়ে আসছেন তারা।
রোববার (২৬ অক্টোবর) সকালে সরেজমিন দেখা যায়, হলটির বিভিন্ন ব্লকের দেয়াল ও ছাদে ফাটল। পলেস্তারা খসে পড়ার ক্ষত দেখা যাচ্ছে ছাদে। ওয়াশরুম ও বেসিনেরও নাজুক অবস্থা। পিলারগুলোতেও ফাটল দেখা যাচ্ছে।
হল প্রশাসন জানিয়েছে, তারা অবকাঠামোগত বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে অবগত। সমস্যাগুলো হঠাৎ শুরু হয়নি। অনেক আগে থেকেই ছিল। তবে বিষয়গুলো তারা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। টেন্ডার পাস হয়ে কাজও শুরু হয়ে গেছে। শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে।
আরও পড়ুন : নিজেরা ফাঁস করা প্রশ্নে চাকরি পেয়ে যোগ দেন চক্রে
হলের আবাসিক শিক্ষার্থী রনি আহমেদ বলেন, শেরেবাংলা হলের ছাদ থেকে নিয়মিত পলেস্তারা খসে পড়ে। ভয় নিয়ে থাকতে হয়, কখন বড় দুর্ঘটনা ঘটে যাবে। ওয়াশরুম নোংরা, খাবারের মান খারাপ, পানির সংকটও নিয়মিত। এমন পরিবেশে পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়া অসম্ভব।
এ বিষয়ে হল সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) রানা হোসাইন বলেন, হলের বর্তমান অবস্থা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। পাঁচ বছর আগেই এটি বাসযোগ্যতার সময়সীমা অতিক্রম করেছে। বারবার মেরামত করেও লাভ নেই। আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি— এই হলে আর থাকতে চাই না, দ্রুত অন্য হলে স্থানান্তর করতে হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সহকারী সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) এসএম সাব্বির বলেন, শেরেবাংলা হল এখন সম্পূর্ণ অনুপযোগী। ছাদ ও দেয়ালের প্লাস্টার খসে পড়ছে, ভবনের কাঠামোও দুর্বল হয়ে গেছে। যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে দ্রুত বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা করা জরুরি।
আরও পড়ুন : বিএনপি নেতাকে ১০ লাখ টাকার চেক দেওয়া কর্মীর অ্যাকাউন্টে ৩৪১২ টাকা
রাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) মোস্তাকুর রহমান জাহিদ কালবেলাকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরেবাংলা হল ও মন্নুজান হলের বর্তমান অবস্থা অত্যন্ত করুণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। এই দুই হলের ভবন এখন আর সংস্কারের উপযুক্ত নয়। আমাদের মতে, এ ভবনগুলো ভেঙে সম্পূর্ণ নতুন ভবন নির্মাণই একমাত্র বাস্তবসম্মত সমাধান। আমরা রাকসুর প্রথম অধিবেশনে বিষয়টি দৃঢ়ভাবে উপস্থাপন করব। নির্মাণাধীন নতুন ছেলেদের হলে শেরেবাংলার শিক্ষার্থীদের এবং নির্মাণাধীন নতুন মেয়েদের হলে মন্নুজানের শিক্ষার্থীদের দ্রুত স্থানান্তরের দাবি জানানো হবে।
সার্বিক বিষয়ে শেরেবাংলা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. শরিফুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য, প্রধান প্রকৌশলীসহ আমরা সবাই অবগত আছি। হলের ওপরতলাসহ যেসব জায়গায় পলেস্তারা খসে পড়ছে এবং এর পাশাপাশি অবকাঠামোগত অন্য যেসব সমস্যা দেখা দিয়েছে— সেসব কাজের জন্য টেন্ডার পাস হয়ে এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়ে গেছে। এ ছাড়া তিনটি পৃথক টিম কাজ শুরু করেছে। সমস্যাগুলো হঠাৎ শুরু হয়নি, অনেক আগে থেকেই ছিল। কাজ চলছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে ঠিকঠাক হয়ে যাবে বলে আশা করি।

4 days ago
13









English (US) ·