গৃহযুদ্ধবিধ্বস্ত আফ্রিকার দেশ সুদানে এক ভারতীয় নাগরিককে অপহরণ করেছে দেশটির আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদরে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এনডিটিভির হাতে পাওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, এক ভারতীয় পুরুষ দুজন সশস্ত্র আরএসএফ সদস্যের মাঝে বসে আছেন। তথ্য যাচাই করে দেখা গেছে, ভারতীয় এই নাগরিকের নাম আদর্শ বেহেরা। তিনি উড়িষ্যা রাজ্যের জগৎসিংহপুর জেলার বাসিন্দা।
ভিডিওতে এক আরএসএফ সদস্য বেহেরাকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি শাহরুখ খানকে চেনো? তার পিছনে থাকা আরেক সদস্য তাকে বলেন, ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে বলো, ‘দাগালো গুড’। ‘দাগালো’ বলতে আরএসএফের প্রধান নেতা মোহাম্মদ হামদান দাগালো, যিনি ‘হেমেতি’ নামেও পরিচিত।
এনডিটিভিকে সূত্র জানিয়েছে, ৩৬ বছর বয়সী বেহেরাকে সুদানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের শহর এল-ফাশার থেকে অপহরণ করা হয়েছে, যা রাজধানী খারতুম থেকে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দূরে। ধারণা করা হচ্ছে, সেখান থেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে দক্ষিণ দারফুর প্রদেশের রাজধানী নিয়ালায়, যেখানে আরএসএফের শক্তিশালী ঘাঁটি রয়েছে।
উড়িষ্যায় থাকা বেহেরার পরিবারের সঙ্গে এনডিটিভি যোগাযোগ করলে তারা জানান, আদর্শ বেহেরা ২০২২ সাল থেকে সুদানে সুকারাতি প্লাস্টিক ফ্যাক্টরি নামের এক কোম্পানিতে কাজ করছিলেন। তার স্ত্রী সুষ্মিতা বলেন, তাদের দুই সন্তান রয়েছে। একজনের বয়স আট বছর, অন্যজনের তিন।
পরিবারটি এনডিটিভিকে একটি ভিডিও দিয়েছে, যেখানে দেখা যায়, বেহেরা মাটিতে বসে হাতজোড় করে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে বলছেন, আমি এখন এল-ফাশারে আছি, এখানকার পরিস্থিতি খুবই খারাপ। গত দুই বছর ধরে আমি এখানে অনেক কষ্টে আছি। আমার পরিবার ও বাচ্চারা খুব উদ্বিগ্ন। আমি উড়িষ্যা সরকারকে অনুরোধ করছি, তারা যেন আমাকে সাহায্য করে।
সম্প্রতি সুদানের সরকারপন্থি বাহিনীর শেষ ঘাঁটি এল-ফাশার দখলে নিয়েছে আরএসএফ। শহরটি টানা ১৮ মাস অবরুদ্ধ থাকার পর পুরোপুরি তাদের দখলে গেছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আসিসি) সোমবার (৩ নভেম্বর) সতর্ক করে বলেছে, এল-ফাশারে আরএসএফের কার্যক্রম গণহত্যা ও ধর্ষণের মতো যুদ্ধাপরাধের শামিল হতে পারে।
সুদানে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ আবদাল্লাহ আলি এলতোম এনডিটিভিকে বলেন, এল-ফাশারে এখন সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। শহরের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব নয়। আমরা আশা করছি, ওই ভারতীয় নাগরিক কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।
তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি অত্যন্ত অনিশ্চিত। আমরা জানি কী করতে হবে, কিন্তু তারাও কী করতে পারে, সেটাও জানি। আমরা আশা করছি, তাকে ভালোভাবে রাখা হবে ও খুব শিগগিরই নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
২০২৩ সাল থেকে সুদানের সরকারপন্থি সেনাবাহিনী (এসএএফ) ও আরএসএফের মধ্যে চলমান সংঘাতে দেশটি কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। রাজধানী খারতুম এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে, যেখানে এরই মধ্যে ১ কোটি ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
সূত্র: এনডিটিভি
এসএএইচ

7 hours ago
5









English (US) ·