স্বেচ্ছায় না গেলে শরণার্থীদের জোর করে নির্বাসিত করবে জার্মান

5 hours ago 8
গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ায় জার্মানিতে আশ্রয় পাওয়া সিরীয় শরণার্থীদের নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে বলে জানিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস৷ সিরীয় শরণার্থীরা ফিরে যেতে রাজি না হলে, তাদের জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি৷ সোমবার জার্মানির উত্তরাঞ্চলীয় শহর হুসুম সফরে গিয়ে এসব কথা বলেছেন জার্মান সরকারপ্রধান৷ অভিবাসন ইস্যুতে মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে থাকা ম্যার্ৎস বলেন, দীর্ঘ ১৩ বছরের ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের অবসান হয়েছে সিরিয়ায়৷ এখন জার্মানিতে আশ্রয় নেওয়ার “আর কোনো কারণ নেই৷’’ যারা দেশে (সিরিয়া) ফিরতে অস্বীকার করবে, আমরা অবশ্যই তাদের বহিষ্কার করতে পারি৷’ পরামর্শ দিয়ে চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস বলেছেন, নিজেদের যুদ্ধবিধ্বস্ত মাতৃভূমি পুনর্নির্মাণে সাহায্য করার জন্য জার্মানিতে থাকা সিরীয়দের ফিরে যাওয়া উচিত৷ তবে জার্মানিতে থাকা অনেক সিরীয় নাগরিক ম্যার্ৎসের সঙ্গে একমত নন৷ ম্যার্ৎেসর নীতির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করা সিরীয়দের একজন মোহাম্মদ হাজ্জার৷ এক দশক আগে জার্মানিতে এসেছিলেন ৪৪ বছর বয়সী হাজ্জার৷ এখন রাজধানী বার্লিনের একটি রেস্টুরেন্টে ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন৷ বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন, ‘আমি এখানে যাদের চিনি তাদের বেশিরভাগই (জার্মান) সমাজে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন এবং কাজ করছেন৷ তাদের মধ্যে কেউ কেউ ইঞ্জিনিয়ার অথবা নিজস্ব ব্যবসা শুরু করেছেন৷ তাদের কেন চলে যেতে হবে?’ শরণার্থীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন প্রো আসিল এর মুখপাত্র তারেক আলাওস ম্যার্ৎসের এমন অবস্থানকে ‘ভয়‘ দেখানোর কৌশল বলে মনে করেন। আলাওস নিজেও ২০১৫ সালে সিরিয়া থেকে এসেছেন। এএফপিকে তিনি বলেন, ‘আজ এবং গতকাল সারাদিনই মানুষ আমাকে ফোন করেছে এটা বলার জন্য যে “আমি নির্বাসিত হতে চাই না৷”’ জার্মানিতে প্রায় ১০ লাখ সিরীয় বাস করেন। হাজ্জারের মতো, তাদের অনেকেই ২০১৫ সালে সাবেক চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের শাসনামলে জার্মানিতে এসেছিলেন৷ ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের উৎখাতের মাধ্যমে গৃহযুদ্ধের সমাপ্তির পর, জার্মানিতে কেউ কেউ সিরীয় আশ্রয়প্রার্থীদের দেশে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাতে শুরু করেছেন৷ বিতর্কটি মূলত উসকে দিয়েছে অতি-ডানপন্থি দল অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি)। দলটির নেতারা প্রকাশ্যে জার্মান নাগরিকত্ব থাকা বিদেশি বংশোদ্ভূতদেরও ফেরত পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন৷ কয়েকটি বড় ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিছু সিরীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তির জড়িত থাকার ঘটনাও এমন আলোচনাকে উসকে দিয়েছে৷ ৩ নভেম্বর ম্যার্ৎস আরও বলেছেন, ‘যারা ফিরে যেতে অস্বীকার করবে, তাদের অবশ্যই নির্বাসিত করারও সুযোগ রয়েছে।’ এদিকে সিরিয়ায় নিজের প্রথম সফরে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুলের মন্তব্য নিয়ে খোদ তার দল সিডিইউর মধ্যেই নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। দামেস্কের যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে জার্মানির শীর্ষ এই কূটনীতিক বলেছিলেন, সিরিয়ায় প্রত্যাবর্তন ‘খুব সীমিত পরিমাণে’ সম্ভব, কারণ দেশটির প্রচুর অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। জার্মান চ্যান্সেলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পরস্পরবিরোধী বক্তব্য ক্ষমতাসীন দল সিডিইউ-কে আবারও চাপে ফেলতে পারে বলে শঙ্কা করা হচ্ছে৷ এমনিতেই ক্ষমতাসীনরা অভিবাসনবিরোধী অতি-ডানপন্থি দল এএফডির চাপে রয়েছে৷ সিরিয়ার নতুন অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারাকে জার্মানি সফরে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে জানিয়ে ম্যার্ৎস বলেন, যাতে ‘আমরা একসঙ্গে সমাধান খুঁজে বের করতে পারি৷’ বাস্তবে জার্মানিতে আশ্রয় নেয়া সিরীয়দের বড় একটি অংশ নানা কাজে যুক্ত অথবা সুরক্ষিত শরণার্থীর মর্যাদা পেয়েছেন। এই মর্যাদা কেবল আইনি মূল্যায়নের ভিত্তিতে বাতিল করা যেতে পারে এবং প্রতিটি ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই মূল্যায়ন আলাদাভাবে করতে হবে, যা বেশ সময়সাপেক্ষ। সিরীয়দের অনেকেই জার্মান নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন এবং সংখ্যাটি ক্রমশ বাড়ছে। ফেডারেল এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী, জার্মানিতে প্রায় ৪২ শতাংশ সিরীয় চাকরি করেন। তবে ৪৬ শতাংশ রাষ্ট্রের সামাজিক সুবিধা ভোগ করছেন। দ্বিতীয় এ সংখ্যাটি নিয়েই নানা বিতর্ক চলছে। অপরাধের পরিসংখ্যানেও সিরিয়ানদের জড়িত থাকার হার তুলনামূলক বেশি। ২০২৪ সালে জার্মান পুলিশ এক লাখ ১৪ হাজার ৮৮৯ জন সিরীয় সন্দেহভাজনের বিরুদ্ধে তদন্ত করেছে। অন্য যেকোনো বিদেশি নাগরিকের চেয়ে এই সংখ্যা বেশি। গত সপ্তাহান্তে বার্লিনে ২২ বছর বয়সি এক সিরীয় নাগরিককে জিহাদি হামলার প্রস্তুতি নেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এএফডি-র সহ-নেতা আলিস ভাইডেল ৪ অক্টোবর “সকল সিরীয় শরণার্থীর সুরক্ষা মর্যাদা বাতিল করা উচিত” বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘যদি তারা স্বেচ্ছায় না চলে যায়, তাহলে তাদের জোর করে নির্বাসিত করতে হবে।’ সিরিয়ায় আসাদের পতনের পরপরই জার্মানিতে বসবাসরত সিরীয়দের উপর একটি জরিপ চালায় রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারক এআরডি। জরিপে ৬৬ শতাংশ উত্তরদাতাই বলেছেন, তারা জার্মানিতে থাকতে চান। আগস্ট পর্যন্ত মাত্র চার হাজার সিরীয় নিজ দেশে ফিরে গেছেন বলেও জানিয়েছে এআরডি। সূত্র : ইনফোমাইগ্র্যান্টস
Read Entire Article