বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা রোববার (১১ মে)। এ দিনটি বিশ্ববৌদ্ধদের নিকট পবিত্র ও মহিমান্বিত দিন। বুদ্ধপূজা ও শীল গ্রহণ, প্রদীপ প্রজ্বলন, পিণ্ডদান, শান্তি শোভাযাত্রা, ধর্মীয় আলোচনা সভা, সমবেত প্রার্থনা, ভিক্ষু সংঘের প্রাতরাশসহ নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে রাজধানীসহ দেশজুড়ে ৫ হাজার বৌদ্ধ বিহারে দিনটি উদযাপন করবেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে রোববার দেশে সরকারি ছুটি।
বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয় মহাথের কালবেলাকে বলেন, সারা দেশে ৫ হাজারের মতো বৌদ্ধ বিহার রয়েছে। সবগুলোতেই বুদ্ধপূর্ণিমা উদযাপিত হবে। বাংলাদেশে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ২০ লাখের মতো।
দিনটি উদযাপনে বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশন রাজধানীর মেরুল বাড্ডাস্থ আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে দিনব্যাপি নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
রোববার (১১ মে) সকাল ১০টায় বুদ্ধপূজা, শীল গ্রহণ, সন্ধ্যা ৬টায় বুদ্ধ পূর্ণিমার তাৎপর্য নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে বিশেষ আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এতে প্রধান অতিথি থাকবেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, বিশেষ অতিথি থাকবেন ধর্ম সচিব এ কে এম আফতাব হোসেন প্রামানিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান প্রমুখ। এছাড়া বাসাবোর ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহার, মিরপুরের (মিরপুর-১৩) শাক্যমনি বৌদ্ধ বিহার এবং উত্তরার (১৬নং সেক্টর) বাংলাদেশ বৌদ্ধ মহাবিহারেও নানা অনুষ্ঠান হবে।
বৌদ্ধধর্ম মতে, প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে এই দিনে মহামতি গৌতম বুদ্ধ আবির্ভূত হয়েছিলেন। গৌতম বুদ্ধের শুভজন্ম, বোধিজ্ঞান ও মহাপরিনির্বাণ লাভ-এই তিন স্মৃতিবিজড়িত বৈশাখী পূর্ণিমা বিশ্বের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছে বুদ্ধপূর্ণিমা নামে পরিচিত। বিশ্ব বৌদ্ধরা এটিকে বৈশাখ দিবস বা Vesak day হিসেবেও উদযাপন করে।
‘জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক’- এই অহিংস বাণীর প্রচারক ভগবান বুদ্ধ বৈশাখী পূর্ণিমার বিশাখা নক্ষত্রে রাজকুমার সিদ্ধার্থরূপে কপিলাবস্তুর লুম্বিনী কাননে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বুদ্ধ বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে আলোকপ্রাপ্ত অর্থাৎ সর্বতৃষ্ণার ক্ষয় সাধন করে বোধিজ্ঞান লাভ করে জগৎ পূজ্য বুদ্ধ হয়েছিলেন।
বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে শনিবার (১০ মে) এক বার্তায় বাংলাদেশ এবং বিশ্বের বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, এবারের বুদ্ধ পূর্ণিমা এমন এক সময়ে উদযাপিত হচ্ছে যখন শান্তি, সম্প্রীতি এবং ঐক্য গড়ে তোলার জন্য ভগবান বুদ্ধের শিক্ষা আগের চেয়েও বেশি প্রাসঙ্গিক। এই শুভদিন উপলক্ষে, আমি কামনা করি যে, মানবতা হিসেবে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথ বোঝাপড়া, করুণা এবং আনন্দে আলোকিত হোক।
দিনটি উপলক্ষে বৌদ্ধ সম্প্রদায়সহ দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর ও সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা। শনিবার এক যুক্ত বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, ভগবান বুদ্ধের বাণীর মধ্যে শান্তি, সমৃদ্ধি ও অহিংসার বার্তা নিহিত রয়েছে। আজকের হিংসা ও বিদ্বেষপূর্ণ পৃথিবীতে ভগবান বুদ্ধের শান্তির বাণী মানুষে মানুষে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা এবং শান্তির পথে মানব সম্প্রদায়কে এগিয়ে নিতে পারে। অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভগবান বুদ্ধের বাণী আমাদের পাথেয় হোক। 
বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয় মহাথের দেশবাসীকে শুভ বুদ্ধপূর্ণিমার মৈত্রীময় শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। 
এদিকে বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে শনিবার (১০ মে) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের নেতারা এবং বৌদ্ধধর্মগুরুরা। এ সময় ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে শনিবার বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতাদের সাথে শুভেচ্ছা ও মতবিনিময় করেছে বিএনপি। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

                        5 months ago
                        139
                    








                        English (US)  ·